অল্প খরচে সারাদিন কলকাতা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

14 hours ago 4

ফাত্তাহ তানভীর রানা

কলকাতা পৌঁছে ঠিক কোথায় কোথায় ঘুরবো সে বিষয়ে তেমন পরিকল্পনা ছিল না। তাই নিরুদ্দেশ বেরিয়ে পড়লাম। মজার বিষয় হলো, অল্প খরচেই কলকাতা থেকে ডায়মন্ড, বরদাসহ মেদিনীপুর সারাটা দিন ঘোরাঘুরি করলাম। সে অভিজ্ঞতা সত্যিই আনন্দদায়ক আবার রোমাঞ্চকরও বটে।

সকালে নাশতা সেড়ে ধর্মতলার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। সেখান থেকে ডায়মন্ড হারবারের বাসে উঠলাম। লোকাল টাইপের বাস হলেও ভালোই টানলো বাসটি। দুই ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে নামিয়ে দিল হারবার রেল স্টেশনে। আমি রেল স্টেশনে গিয়ে এক কাপ চা ও স্থানীয় কেক খেয়ে কলকাতা ফিরে আসার ট্রেনের খবর নিলাম।

অল্প খরচেই সারাদিন কলকাতা ভ্রমণ

ডায়মন্ড থেকে শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পর পর কমপক্ষে রাত ১০টা পর্যন্ত ট্রেন পাওয়া যায়। যদিও আমার ট্রেনের খবর কাজে লাগেনি, তবুও পাঠকের উদ্দেশ্যে বলে রাখা ভালো। স্টেশন থেকে ডায়মন্ড যেতে অটোতে (স্থানীয় ভাষায় টোটো) করে ১০ টাকা ভাড়া আর হেঁটে গেলে ১০-১২ মিনিট লাগবে।

অল্প খরচেই সারাদিন কলকাতা ভ্রমণ

আমি ডায়মন্ডের পথে রাস্তায় একটি দোকানে বিখ্যাত জয়নগরের মোয়া খেয়ে নিলাম। জয়নগরের মোয়া হলো, ভারতের একটি ভৌগলিক নির্দেশক (জি আই) পণ্য। এছাড়া ডায়মন্ডে খাবার হোটেলে নদীর মাছ ভাত মেলে।

ডায়মন্ডে কী দেখবেন?

সেলফি জোন (আই লাভ ডায়মন্ড লেখা), জেটি ঘাট, ইংরেজ আমলের ধ্বংসপ্রাপ্ত কুঠি, কলেজ পাড়ের পার্ক, ছোট নদীর পাড়, মুক্তাঙ্গন, পিকনিক গ্রাউন্ড ইত্যাদি। আরও আছে বিশাল নদী হুগলি। তখন ভাটার সময় হবার কারণে পানি কম ছিল। বেশ কিছু মানুষ একটি ভেসেলে উঠেছে। ভেসেল যাবে কতদূর? আসবে কখন? যেতে কতটা সময় লাগবে?

অল্প খরচেই সারাদিন কলকাতা ভ্রমণ

দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ততক্ষণে টিকিট কেটে ফেলেছি। যাচ্ছি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কুকরহাটি ঘাটে। ভেসেলে যেতে সময় লাগবে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। তবে জোয়ারের সময় ৩০ মিনিট লাগে। ভাড়া ২৭ টাকা, ভেসেল ছাড়াও লঞ্চ এই পথে চলাচল করে। কুকরহাটি থেকে রয়চক পর্যন্ত আরেকটা নৌ রূট আছে।

রয়চক থেকে বাসে কলকাতার ধর্মতলা আসা যায়। ভেসেলের চারপাশ খোলা হুগলি নদীর রূপ দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম। নদীতে শুশুকের উপস্থিতি বাড়তি আগ্রহের জন্ম দেয়। তাছাড়া নদীতে জেলেদের চিরায়ত মাছ ধরার চেষ্টা ছাড়াও আধুনিক কিছু উপায় দেখেছি।

অল্প খরচেই সারাদিন কলকাতা ভ্রমণ

আরও পড়ুন

নদীর একপাশ দিয়ে যাচ্ছিল ভেসেল, দেখছি স্থানীয় বসতি ও মানুষের জীবন। নদীতে ছোট-বড় পণ্যবাহী জাহাজ নোঙর করা। নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কিছু নান্দনিক রিসোর্ট। তখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, এই পথেই ফিরে রেলে চড়ে শিয়ালদহ ফিরবো।

অল্প খরচেই সারাদিন কলকাতা ভ্রমণ

ভেসেলে দাঁড়িয়ে গল্পে গল্পেই বুঝতে পারলাম, কুকরহাটি থেকে সামনে এগিয়ে গেলেই বরদা রেলস্টেশন। তাছাড়াও নন্দকুমার গেলে কলকাতাগামী বাস মিলবে। হলদিয়া থেকেও শেষ বাস তখনও ছাড়েনি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, এক পথে এসেছি অন্য পথে কলকাতা ফিরবো।

ঘাটে নেমেই খেয়াল করি একটি লঞ্চ যাবে ডায়মন্ড পর্যন্ত। আমি ঘাট থেকে বেরিয়ে লোকাল বাসে চড়ে বড়দা স্টেশন অভিমুখে চলি। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে, যখন আমি বরদা স্টেশনে। সেখানে কিছু ভাজাপোড়া খেয়ে স্টেশনে কথা বলে নিশ্চিত হলাম শেষ ট্রেন আসবে এক ঘন্টা পরে। ট্রেন আসার ৩০ মিনিট আগে মাত্র ৩০ টাকায় হাওড়া পর্যন্ত টিকিট কেটে নিলাম। তখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা।

ট্রেন আসাতেই উঠে গেলাম। সেখানে পরিচয় হলো পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নাজমুস সাদাত ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি চাকুরিসূত্রে রাজস্থান যাবেন। আমার সঙ্গে কলকাতা পর্যন্ত পরে অন্য ট্রেনে জোতপুর যাবেন। তার সঙ্গে অনেক গল্প হলো।

অল্প খরচেই সারাদিন কলকাতা ভ্রমণ

পশ্চিম বাংলায় বিভিন্ন পণ্যর দাম, মুসলমানদের খাবার ও সংস্কৃতি, অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে বেশ অনেক সময় ধরে কথা হলো। মাঝে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বাদ গেল না। কথা ফাঁকে তিনি আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে ভুলে যাননি। আমরা গল্পে গল্পে অনেক দূর এগিয়ে এলেও পথ শেষ হচ্ছিল না। লোকাল ট্রেন, দরজা খোলা ছিল। সন্ধ্যার পরে বাতাস বেশ ঠান্ডা ছিল। এই ট্রেন ভ্রমণের সময়কাল ছিল ৩ ঘণ্টা।

হাওড়া রেলস্টেশনে নামলাম রাত প্রায় ১০টা তখন। বলে রাখা ভালো হাওড়া ভারতের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন। হাওড়া থেকে শেষ মেট্রোরেলে চেপে এসপ্ল্যানেড এলাম। মেট্রোরেলের পথটি হুগলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে, যা ভারতের প্রথম টানেল।

সারাদিন পশ্চিম বাংলার কলকাতা শহর, ডায়মন্ড হারবার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ও ছোট-বড় রেল, মেট্রোরেল, বাস ও নৌপথে ভ্রমণ করেছি। এ ভ্রমণ যদিও অপরিকল্পিত, তবুও আনন্দদায়ক। আসলে বাংলার রূপ অপরূপ। যেখানেই যাই, যেদিকে তাকাই জীবনানন্দ দাশ, মানিক বন্দোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য আর সত্যজিৎ রায়- হীরালাল সেনের স্পর্শ খুঁজে পাই।

লেখক: কবি ও গল্পকার।

জেএমএস/জেআইএম

Read Entire Article