অল্প দামে হাতের কাছেই মিলবে ওজন কমানোর ওষুধ

ডায়াবেটিস ও ওজন কমানোর ওষুধ এরই মধ্যে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে সরবরাহ সংকট আর আকাশছোঁয়া দামের কারণে এই ‘স্লিমিং জ্যাব’ এখনো মূলত ধনী দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মোট বিক্রির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি একাই যুক্তরাষ্ট্রে হয়। কিন্তু শিগগির এই চিত্র বদলে যেতে চলেছে। ২০২৬ সালেই অল্প দামে হাতের কাছেই মিলতে পারে ওজন কমানোর ওষুধ। ২০২৬ সালের শুরুতে সেমাগ্লুটাইডের পেটেন্টের মেয়াদ শেষ হবে ব্রাজিল, চীন, ভারত ও তুরস্কসহ কয়েকটি বড় উদীয়মান বাজারে। এসব দেশে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ স্থূলকায় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বাস করেন। ফলে সস্তা জেনেরিক সংস্করণ এবং বড়ির আকারে নতুন চিকিৎসা বাজারে এলে ২০২৬ সালেই ওজন কমানোর ওষুধ সত্যিকার অর্থে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে থাকবে ভারত, আর তা ভোক্তা ও উৎপাদক দুই ভূমিকাতেই। ভারতে স্থূলকায় প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৪০ লাখ, যা দেশটিকে বিশাল সম্ভাবনাময় বাজারে পরিণত করেছে। বর্তমানে নোভো নরডিস্ক ও এলি লিলির তৈরি ওজন কমানোর ওষুধের দাম ভারতে মাসে প্রায় ২০০ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের দামের অর্ধেকেরও কম। কিন্তু এরপরও তা সাধারণ মান

অল্প দামে হাতের কাছেই মিলবে ওজন কমানোর ওষুধ

ডায়াবেটিস ও ওজন কমানোর ওষুধ এরই মধ্যে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে সরবরাহ সংকট আর আকাশছোঁয়া দামের কারণে এই ‘স্লিমিং জ্যাব’ এখনো মূলত ধনী দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মোট বিক্রির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি একাই যুক্তরাষ্ট্রে হয়। কিন্তু শিগগির এই চিত্র বদলে যেতে চলেছে। ২০২৬ সালেই অল্প দামে হাতের কাছেই মিলতে পারে ওজন কমানোর ওষুধ।

২০২৬ সালের শুরুতে সেমাগ্লুটাইডের পেটেন্টের মেয়াদ শেষ হবে ব্রাজিল, চীন, ভারত ও তুরস্কসহ কয়েকটি বড় উদীয়মান বাজারে। এসব দেশে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ স্থূলকায় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বাস করেন। ফলে সস্তা জেনেরিক সংস্করণ এবং বড়ির আকারে নতুন চিকিৎসা বাজারে এলে ২০২৬ সালেই ওজন কমানোর ওষুধ সত্যিকার অর্থে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।

এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে থাকবে ভারত, আর তা ভোক্তা ও উৎপাদক দুই ভূমিকাতেই। ভারতে স্থূলকায় প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৪০ লাখ, যা দেশটিকে বিশাল সম্ভাবনাময় বাজারে পরিণত করেছে। বর্তমানে নোভো নরডিস্ক ও এলি লিলির তৈরি ওজন কমানোর ওষুধের দাম ভারতে মাসে প্রায় ২০০ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের দামের অর্ধেকেরও কম। কিন্তু এরপরও তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তবে অন্তত ১০টি জেনেরিক সেমাগ্লুটাইড ওষুধ এখন শেষ ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে এবং ২০২৬ সালেই বাজারে আসতে পারে। স্থানীয় উৎপাদনের ফলে এর দাম ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে, যা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর জন্য এই চিকিৎসা সহজলভ্য করে তুলবে। একই সঙ্গে ভারতের উৎপাদন বিশ্ববাজারেও সস্তা ওষুধের জোগান বাড়াবে।

আরও পড়ুন>>
ডায়েট না করে ওজন কমানোর সহজ উপায় কী?
ওজন কমানোর প্রমাণিত ১৫ উপায়
একমাসে কত কেজি ওজন ঝরানো স্বাস্থ্যকর?

এক্ষেত্রে চীনও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেখানে শুধু বিদ্যমান ওষুধের অনুকরণই নয়, নতুন প্রজন্মের ওষুধও তৈরি হচ্ছে। পরামর্শক সংস্থা এলইকের হিসাবে, চীনে প্রায় ৩০টি নতুন স্থূলতা-নিয়ন্ত্রণ ওষুধ শেষ ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে, যেগুলোর কিছু কার্যকারিতায় বেশি শক্তিশালী বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। ২০২৫ সালের মে মাসে চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাজদুটাইড নামের একটি ওষুধ অনুমোদন দেয়, যা এলি লিলি ও চীনের ইনোভেন্ট যৌথভাবে তৈরি করেছে। পরীক্ষায় এটি লিলির জনপ্রিয় ওষুধ জেপবাউন্ডের সমান কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ফলে পশ্চিমা ওষুধ কোম্পানিগুলো চীনের সম্ভাবনাময় প্রকল্পগুলোর লাইসেন্স নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

ওজন কমানোর বড়ির আগমনও এই চিকিৎসাকে আরও বিস্তৃত করবে। এলি লিলি ২০২৬ সালে অনুমোদনের প্রত্যাশায় তাদের বড়ি ‘অরফরগ্লিপ্রন’-এর লাখ লাখ ইউনিট আগেভাগেই মজুত করছে। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বড়ি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেখানে ওষুধ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ঠান্ডা ব্যবস্থা অনেক জায়গায় নেই। বিনিয়োগ ব্যাংক লিরিঙ্ক পার্টনার্সের বিশ্লেষক ডেভিড রাইজিঙ্গারের ভাষায়, লিলি এই বড়ি দিয়ে ‘বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে’।

এই পরিবর্তনের গুরুত্ব বিপুল। বিশ্ব স্থূলতা ফেডারেশনের হিসাবে, ২০২৫ সালে বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছিলেন। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় অর্ধেকে, অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। চিকিৎসার সুযোগ বাড়লে শুধু ওজন কমানো নয়, আরও নানা রোগের ঝুঁকি কমাতেও এই ওষুধ সহায়ক হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, দাম কমা ও সহজলভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে ২০২৬ সাল শুধু একটি বাণিজ্যিক মাইলফলক নয়, বরং একটি বড় চিকিৎসা বিপ্লবের সূচনাবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow