আইভি গাছ শহরে কংক্রিটের দেয়াল আর তপ্ত ছাদে শীতলতার পরশ নিয়ে আসে। এই আরোহী লতানো গাছটির বৈশিষ্ট্য হলো, যেখানেই এটি জায়গা পায়, সেখানেই নিজের শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরে সবুজের আবরণ তৈরি করে।
একঘেয়ে ইট-সিমেন্টের দেয়াল মুহূর্তেই ঢেকে যায় প্রাণবন্ত সবুজে। শুধু সৌন্দর্যই নয়, আইভি গাছ পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রশান্তির জন্যও বিশেষ অবদান রাখে।
আইভি গাছের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। এটি টবে, ছাদে কিংবা মাটিতে সব জায়গাতেই সহজে বেড়ে ওঠে। অল্প যত্ন পেলেই গাছ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। নিয়মিত পানি দেওয়া, পর্যাপ্ত আলো পাওয়া আর মাঝে মাঝে ছাঁটাই...এই তিনটি কাজই এর যত্নের মূল চাবিকাঠি। যাদের হাতে বাগান করার সময় নেই, তারাও অনায়াসে আইভি চাষ করতে পারেন।
শহরের উঁচু ভবন বা অফিস বিল্ডিংয়ের বাইরের দেয়ালে হরহামেশাই চোখে পড়ে আইভি। লতানো উদ্ভিদটির আচ্ছাদন চোখে পড়লেই একধরনের সতেজতা অনুভূত হয়। ছাদের একপাশে বা বারান্দার কোণে ঝুলন্ত টবে আইভি লতা বাড়তে থাকলে, সেটি হয়ে ওঠে ঘরের সেরা নান্দনিক সাজ। এমনকি অনেকে ঘরের ভেতরও টবে আইভি রাখেন, কারণ এর পাতার নকশা ঘরকে ভিন্ন সৌন্দর্য দেয়।
আইভি গাছের রয়েছে অনেক উপকারিতা –
১. বাতাস পরিশোধন
আইভি গাছ বাতাস থেকে ফরমালডিহাইড, বেনজিনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক শোষণ করে থাকে। এর ফলে ঘরের ভেতরের বাতাস তুলনামূলকভাবে বিশুদ্ধ হয়।
২. দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও তাপমাত্রা হ্রাস
আইভি দেয়ালে সবুজ পর্দা তৈরি করে। এতে ধুলো আটকে যায় এবং সরাসরি সূর্যের তাপ দেয়ালে পড়তে পারে না। ফলে ঘর কিছুটা শীতল থাকে। শহরের গরমে এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক শীতল আবরণ।
৩. শহুরে জীবনে সবুজের ছোঁয়া
প্রতিদিনের ব্যস্ততা আর ক্লান্তির মাঝে ছাদের কোণে বা বারান্দায় আইভির সবুজ লতা মনকে শান্ত করে। সকালবেলার শিশিরে ভেজা পাতার দৃশ্য কিংবা বৃষ্টির ফোঁটায় ধোয়া লতার সৌন্দর্য যান্ত্রিক শহরে প্রকৃতির সান্নিধ্য এনে দেয়।
৪. প্রাণিজগতের আশ্রয়
অনেক সময় আইভি গাছে ছোট পাখি বা পতঙ্গ আশ্রয় নেয়। এতে করে নগরে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়।
৫. কম যত্নে বেশি ফল
নিয়মিত পানি দিলে আলাদা কোনো সার বা বিশেষ পরিচর্যা ছাড়াই এটি অনায়াসে বেড়ে ওঠে। যারা ব্যস্ত জীবনে সহজ সমাধান চান, তাদের জন্য আইভি একটি আদর্শ পছন্দ।
তবে যেমন উপকার আছে, তেমনি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে-
১. দেয়ালের ক্ষতি
আইভির শিকড় দেয়ালে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে। দীর্ঘদিন ছাঁটাই না করলে এটি দেয়ালের রং নষ্ট করে দিতে পারে, এমনকি আর্দ্রতা ধরে রাখার কারণে প্লাস্টারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২. অতিরিক্ত বিস্তার
আইভি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সময়মতো ছাঁটাই না করলে এটি অন্য গাছের ওপর চেপে বসে তাদের বেড়ে ওঠা ব্যাহত করতে পারে।
৩. অ্যালার্জির ঝুঁকি
কিছু মানুষের জন্য আইভি পাতার সংস্পর্শে আসা ত্বকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাই গাছ ছাঁটাই বা স্পর্শ করার সময় সতর্ক থাকা উচিত।
৪. কীটপতঙ্গের আশ্রয়স্থল
ঘন লতায় অনেক সময় মশা বা পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে। তাই নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।
তাই আইভি গাছের সৌন্দর্য ও উপকারিতা যতই থাকুক, এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ছাঁটাই করলে গাছের আকার থাকবে সুন্দর, তেমনি বাড়তি বিস্তার রোধ করা যাবে। পাশাপাশি দেয়ালের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আর যদি ঘরের ভেতর রাখা হয়, তবে মাঝে মাঝে জানালা খুলে আলো পৌঁছাতে দিলেই হবে।
তাই প্রয়োজন বুঝে আজই রোপন করুন লতানো গাছটি। সচেতনভাবে পরিচর্যা করলে, আইভি হতে পারে আপনার প্রিয় সবুজ সঙ্গী।
তথ্যসূত্র: রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটি, গার্ডেন্স ইলাস্ট্রেটেড, মলেকিউল, পিএমসি
এএমপি/জেআইএম