আইসিইউ বেড থাকলেও সেবা নেই নারায়ণগঞ্জের দুই সরকারি হাসপাতালে

3 months ago 59

নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম প্রধান দুই সরকারি হাসপাতালের মধ্যে একটি খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, অন্যটি জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া)। এই দুই হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু এই দুটি হাসপাতালেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ থাকলেও সেবা নেই।

সেইসঙ্গে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রায় আড়াই শতাধিক শূন্যপদ রয়েছে। যে পদগুলো পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। ফলে সেবা নিতে আসা রোগীরা পরিপূর্ণ সেবা নিতে পারছেন না। অনেক সময় তাদের নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

আইসিইউ বেড থাকলেও সেবা নেই নারায়ণগঞ্জের দুই সরকারি হাসপাতালে

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে নারায়ণগঞ্জে সরকারি আইসিইউ সেবা এবং পিসিআর ল্যাবের সংকট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সেইসঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উত্থাপনের পর তার নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে স্থাপিত হয় পিসিআর ল্যাব এবং ১০ শয্যার আইসিইউ বেড।

যার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রথম সরকারি আইসিইউ সেবার সূচনা হয়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ার পরপরই হাসপাতালটিতে আইসিইউ সেবা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ আইসিইউ পরিচালনা করার জন্য যে জনবল প্রয়োজন সেটা হাসপাতালে নেই।

একইসঙ্গে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার অত্যাধুনিক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র চালু করা হয়। সেখানে পাঁচজন চিকিৎসক ছাড়াও আটজন নার্স ও কর্মচারী মিলে ১৭ জন ২৪ ঘণ্টা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। গত এক বছরে ৩৮৭ রোগীকে আইসিইউতে বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হয়।

তবে এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আইসিইউর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে কোটি টাকার সরঞ্জামাদি পড়ে রয়েছে।

এদিকে শহরের খানপুর এলাকা ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে ৫৯ পদের ৫২৬ জনের বিপরীতে ৩৫২ জন কর্মরত রয়েছেন। সংকট রয়েছে ১৭৪ জনের। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিতে নেই কোনো সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট। একইসঙ্গে নার্স, ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে জনবল সংকট রয়েছে।

একইসঙ্গে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) ৪৬ পদে ৪৪২ জনের বিপরীতে ৩৬৪ জন কর্মরত রয়েছেন। সিনিয়র কনসালটেন্ট ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিশু, নাক, কান, গলা, চক্ষু ও প্রসূতি বিভাগ। পাশাপাশি কার্ডিওলোজি বিভাগে নেই জুনিয়র কনসালটেন্ট।

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাশার বলেন, ১৯৮৬ সালে যখন হাসপাতালটি ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকেই জনবল সংকট রয়েছে। যা আজও দূর হয়নি। আমাদের আইসিইউ পড়ে রয়েছে। জনবলের কারণে এই আইসিইউ কোনো কাজে আসছে না। আমরা জনবলের সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

আইসিইউ বেড থাকলেও সেবা নেই নারায়ণগঞ্জের দুই সরকারি হাসপাতালে

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জহিরুল ইসলাম জনবলের সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের কারণে রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা দিতে পারি না। বর্তমানে আমাদের যে জনবল রয়েছে তা দিয়েই সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ১০ শয্যার আইসিইউ রয়েছে জনবল থাকলে সেটা কাজে লাগানো যেত।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এএফএম মুশিউর রহমান বলেন, দুটি হাসপাতালেই বিভিন্ন পদে ছাড়াও কনসালটেন্ট সংকট রয়েছে। কনসালটেন্ট ছাড়া ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কোনোরকম চালিয়ে যেতে পারলেও ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে সেবা দিতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জনবল সংকট দূর হলে রোগীরা জেলা পর্যায়েই সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। আশা করছি, আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই দুটি হাসপাতালে কনসালটেন্ট সংকট দূর হয়ে যাবে। আর অন্যান্য পদে জনবল সংকট দূর করার বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশঙ্কাজনক রোগীদের সেবায় পুনরায় আইসিইউটি চালুর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এফএ/জিকেএস

Read Entire Article