ইতিহাস সৃষ্টিকারী কে এই জোহরান মামদানি?

3 hours ago 17
নিউইয়র্ক সিটি—বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র, আধুনিক সভ্যতার প্রতীক। এই শহরের নেতৃত্ব এখন যাচ্ছে এক তরুণ মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিকের হাতে। তার নাম জোহরান মামদানি। তাকে ঘিরে এখন শুধু মার্কিন রাজনীতিই নয়, আলোচনায় সরব গোটা বিশ্ব। ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি যদি মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন, তাহলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং সর্বকনিষ্ঠ মেয়র। শৈশব ও পরিবার জোহরান মামদানি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর, উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়। তার মা প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার, আর বাবা মাহমুদ মামদানি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী, যিনি ভারতের মাটিতে জন্ম নিলেও উগান্ডার নাগরিক। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পরিবারসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় যান জোহরান, এরপর সাত বছর বয়সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন নিউইয়র্কে। ছোটবেলা থেকেই তিনি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও অভিবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন—যা পরবর্তীতে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলে। রাজনীতিতে উত্থান ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হয়ে তিনি নির্বাচিত হন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে। এখান থেকেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক উত্থান। সাধারণ মানুষের সমস্যা, বিশেষত ভাড়া, গণপরিবহন ও শিক্ষা নিয়ে সরাসরি কাজ করে তিনি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০২৪ সালে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন—তখনও তিনি তুলনামূলক অপরিচিত মুখ। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি নিউইয়র্কের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী হয়ে ওঠেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জনপ্রিয়তা এই নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। প্রথমে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলেও জনসমর্থনের অভাবে সরে দাঁড়ান। যদিও মামদানি তরুণ ও তুলনামূলক অনভিজ্ঞ, তার প্রচারাভিযান ছিল জনমানুষের ইস্যুতে সরাসরি সংযুক্ত। তিনি বারবার বলেছেন, বিশ্ব বদলাতে বয়স বা অভিজ্ঞতা নয়, প্রয়োজন হয় ইচ্ছা আর সততা। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল— •    স্থায়ী ভাড়ার সীমা নির্ধারণ •    গণপরিবহন বিনামূল্যে করা •    শিশু যত্নের সার্বজনীন সুযোগ •    ধনীদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে সামাজিক কল্যাণে ব্যয় এই প্রতিশ্রুতিগুলো শহরের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে দ্রুত সাড়া ফেলে দেয়। আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অবস্থান জোহরান মামদানি শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সরব। তিনি গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার। তার দাবি, গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত। এমন অবস্থানের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন এবং হুমকি দেন, মামদানি জিতলে নিউইয়র্কের ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু এই বক্তব্য উল্টো মামদানির জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়।
Read Entire Article