‘আগে জানলে হয়তো একটু বেশি সময় দিতে পারতাম’

2 days ago 9

বিএফডিসিতে পৌঁছেছেন অঞ্জনা রহমান। রোদ্রজ্জ্বল সকালে ফ্রিজিং গাড়িতে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। আশপাশে অপেক্ষায় ছিলেন তরুণ শিল্পী ও কলাকুশলীরা। বড় শিল্পীরা এফডিসিতে পৌঁছলে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে নায়িকাকে।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অঞ্জনা রহমান। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বেলা ১টা ৫০ মিনিটে বিএফডিসি প্রাঙ্গনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, অংশ নেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

‘আগে জানলে হয়তো একটু বেশি সময় দিতে পারতাম’

অঞ্জনা সনাতন পরিবারের সন্তান। তার মা কমলা সাহা, বাবা প্রফুল্ল চন্দ্র সাহা, বোনের নাম রঞ্জনা সাহা। বিয়ের পর মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন অঞ্জনা, তখন থেকে তার নাম হয় অঞ্জনা সুলতানা। বিয়ের পর অঞ্জনা রহমান। বিএফডিসি থেকে দুপুরে তার মরদেহ নেওয়া হবে তেজগাঁও চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাযার পর তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

শুক্রবার রাতে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, আল্লাহকে ডাকেন। তখনই কবরস্থান নিয়ে আলোচনা করছিলেন আশপাশে থাকা কাছের মানুষেরা। বনানীতে জায়গা পাওয়া না গেলে জুরাইন, নয়তো মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। আবার অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছিল, আর একটু আগে টের পাওয়া গেছে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত।

সন্তানের স্নেহে অঞ্জনা সঙ্গে রেখেছিলেন নিশাত মনিকে। মনিও তাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছিলেন। মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন এই তরুণ। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আম্মু সুস্থই ছিলো। জ্বর আসতো, আবার চলে যেত। গত ১৫ দিন আগে বাসায় মেহমান এসেছিল। নিজ হাতে রান্না করে আম্মু তাদের খাইয়েছে। তারপরই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। সাধারণ জ্বর ভেবে ওষুধ খাচ্ছিল, হাসপাতালে যেতে চাইত না। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই তো সেদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল।’

কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনি। তিনি বলেন, ‘যতদিন বাঁচবো আমার আফসোস হবে, আমি কখনো বুঝতে পারিনি আম্মুর ভেতরে এমন অসুস্থতা ছিল। এমন সুস্থ একজন মানুষের ভেতরে এতটা অসুখ কীভাবে হলো।’

আরও পড়ুন:
ভেন্টিলেশন খোলা হলো, চলে গেলেন ‘দস্যু বনহুর’ নায়িকা
শেষবারের মতো আজ এফডিসিতে যাবেন অঞ্জনা 

এফিডিসিতে জড়ো হতে শুরু করেছেন অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস, পলি আক্তার, রোমানা ইসলাম মুক্তি, অভিনেতা জয় চৌধুরী, সনি রহমান, শ্রাবণ শাহ, নৃত্য পরিচালক ইউসুফ খান প্রমুখ। জ্যেষ্ঠদের মধ্যে অভিনেতা উজ্জ্বল, ইলিয়াস কাঞ্চন, সুব্রত, আলমগীর, মিশা সওদাগর, পরিচালক ছটকু আহমেদ, মুশফিকুর রহমান গুলজার, শাহীন সুমন, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু।

‘আগে জানলে হয়তো একটু বেশি সময় দিতে পারতাম’

নৃত্য পরিচালক ইউসুফ খান বলেন, ‘গত মাসে বাসায় গিয়ে দেখি আপা অসুস্থ। নিজ হাতে সুপ বানিয়ে আপাকে খাইয়ে এসেছি। বারবার বলেছি আপা তুমি ডাক্তার দেখাও। আপা কথা শোনেনি। গত পরশু হাসপাতালে তাকে দেখে খুব খারাপ লাগছিল। এই অঞ্জনা আপাকে আমি দেখতে চাইনি। আমার মা তাকে বলে গিয়েছিলেন, ইউসুফকে দেখে রেখো। ছোট ভাইয়ের মতো আমাকে আদর করতেন তিনি।’

অঞ্জনাকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এফডিসিতে হাজির হয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘অঞ্জনা আপার অসুস্থতার খবর আরও একটু আগে জানতে পারলে আমরা হয়তো তাকে আর একটু বেশি সময় দিতে পারতাম। তার মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। তার মিষ্টি হাসি আর কাজ অঞ্জনা আপাকে সবার মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে।’

রক্তের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া, ফুসফুসে পানি জমে যাওয়া, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া, এর মধ্যেই স্ট্রোকসহ নানা জটিলতা তৈরি হয় অভিনেত্রীর। একপর্যয়ে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। গত বুধবার রাত থেকে অঞ্জনাকে হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার রাত ১টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন, জানিয়েছেন শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ও অভিনেতা সনি রহমান।

Read Entire Article