‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান নিয়ে ১১ জানুয়ারি পর্দা ওঠে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৩তম আসসের। ৯ দিনব্যাপী ৭৫ দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র নিয়ে এ উৎসবের আয়োজন করে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এ বছর উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি ছিল চীন। এবারের আসরের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে আজ।
আজ বিকেল ৪টায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা নামবে উৎসবের। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপতিত্ব করবেন বিইআরসির চেয়ারম্যান ও উৎসবের নির্বাহী সদস্য জালাল আহমেদ। এ ছাড়া থাকবেন উৎসবের চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল, উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামালসহ অনেকে।
সমাপনী দিনে জাতীয় জাদুঘরের মূল হলে সন্ধ্যা ৭টায় সমাপনী চলচ্চিত্র হিসেবে থাকছে বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কারজয়ী ইকবাল হোসাইন চৌধুরী পরিচালিত নাসির উদ্দিন খান অভিনীত ‘বলী’। এ ছাড়া সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সকাল থেকে দিনব্যাপী প্রদর্শনী হবে বিদেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে বিকেল ৩টায় তৌফিক এলাহী পরিচালিত রুনা খান অভিনীত চলচ্চিত্র ‘নীলপদ্ম’ এবং বিকেল ৫টায় সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেনের জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র ‘পদাতিক’ এর প্রদর্শনী হবে।
উৎসবে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানোরামা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্ম, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ও উইমেনস ফিল্ম সেকশনে দেখানো হয় পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা। প্রদর্শনী হয় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে।
উৎসবে বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় গত ১২ ও ১৩ জানুয়ারি দুই দিনব্যাপী ‘একাদশ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান। সভাপতিত্ব করেন উৎসবের চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির এবং চীনের চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক ঝ্যাং ইয়ুদি।
উৎসবের অংশ হিসেবে ১৭-১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্রবিষয়ক মাস্টার ক্লাস। মাস্টার ক্লাসে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন চীনের লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক ঝ্যাং ইয়ুদি, সার্বিয়ার অধ্যাপক ড্রেগেন মিলিনকোভিচ, নরওয়ের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক অগি হোফার্ট এবং বাংলাদেশের চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ছিল সাতটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী। এ ছাড়া উৎসবের অংশ হিসেবে ৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিভাবান তরুণ ও প্রতিষ্ঠিত বরেণ্য শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে বিশেষ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘পার্সপেকটিভ: অ্যা কনটেম্পোরারি গ্রুপ আর্ট এক্সিবিশন’ এর আয়োজন হয়।
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব। ‘রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ’ স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মূলধারার বিশ্ব চলচ্চিত্রে পরিচয় করিয়ে দিতে ১৯৯২ সাল থেকে এ অবধি ২৩টি আসর শেষ করতে যাচ্ছে। কিন্তু বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর আয়োজন যেমন ছিল সাদামাটা, তেমনি দর্শক খরা ছিল চোখে পড়ার মতন। তবে ‘প্রিয় মালতী’, ‘পদাতিক’, ‘নীলপদ্ম’সহ কয়েকটি দেশি চলচ্চিত্রে ছিল ব্যাপক দর্শক সমাগম। এ বিষয়ে উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, ‘স্পন্সর সংকটের কারণে আমাদের এবারের আয়োজন সংকুচিত হয়েছে এবং অনেক বিদেশি তারকা আগ্রহী হলেও আমরা আনতে পারিনি। তবে ২৫তম আসরকে অনেক জাঁকজমকপূর্ণ করতে চাই। এর মধ্যে আশা করি আমাদের স্থায়ী ভ্যেনুও হয়ে যাবে।’