তিন দফা দাবিতে আজ বিএসসি (স্নাতক) প্রকৌশলীরা ঢাকা ও জেলা শহরের কলেজ চত্বরে সমাবেশ করবেন। অন্যদিকে, বিএসসি প্রকৌশলীদের কর্মসূচি প্রতিরোধে করতে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা।
রোববার (৩১ আগস্ট) বিএসসি (স্নাতক) প্রকৌশলীরা তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও যানবাহন চলাচলের প্রধান রুটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন এবং জেলা প্রশাসক ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেবেন। সেইসঙ্গে বিকেল ৪টায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
অন্যদিকে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা বিএসসি পক্ষের কর্মসূচি প্রতিরোধে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বিএসসি পক্ষের তিন দফা দাবি অযৌক্তিক ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অধিকার হরণ করতে চাইলে তা প্রতিরোধ করা হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এ বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ এ ঘোষণা দেয়। সাত দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেও জানায় সংগঠনটি।
জানা গেছে, বিএসসি প্রকৌশলীরা তিন দফা ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা, দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা এবং শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যারা সম্পন্ন করবেন, তারাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
অন্যদিকে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সাত দফা দাবি হচ্ছে প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করতে হবে এবং উপসহকারী প্রকৌশলী পদ শুধু পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণ রাখতে হবে। সরকারি, আধাসরকারি ও সায়ত্তশাসিত প্রকৌশল সংস্থা, বিভাগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি কোম্পানির জনবল কাঠামোয় বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অনুপাত ১:৫ নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির কোটা ৩৩ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করতে হবে। প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিতে হবে। প্রকৌশলীদের অন্য ক্যাডারে নিয়োগ বা পেশা পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
গতকাল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মো. ইমাম হোসেন বলেন, দশম গ্রেড ওপেন (উন্মুক্ত) রাখলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের সঙ্গে পরীক্ষা দেবে। তারা মেধাবী, এটা আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু তারা পাস করলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির কোনো সুযোগ থাকবে না। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রকৌশলীদের তিন দফা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ, আমরা জানি এই তিন দফা অযৌক্তিক ও অবাস্তব কথাবার্তা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করলে তারা বসে থাকবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, আমরা কর্মসূচি দিইনি মানে আমরা কর্মসূচি দেব না, তা নয়। সময়মতো আমরা ঠিকই কর্মসূচি দেব।
উভয়পক্ষের দাবি পর্যালোচনায় গত বৃহস্পতিবার ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে সরকার। এই ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রধান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম। ওয়ার্কিং গ্রুপ আন্দোলনকারী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বসে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবে। এরপর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে।
তিন দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা দুপুর দেড়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে শুরু করেন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় তাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তখন লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।