ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ধনকুবের গৌতম আদানি। দুজনেরই জন্মস্থান গুজরাটে। উত্থানটাও প্রায় একই সময়ে। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই হু হু করে বাড়তে থাকে আদানির প্রতিপত্তি। মোদী বিদেশ সফরে গেলে সেখানে আদানির উপস্থিতি অনেকটাই নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছিল। আদানিকে বিশেষ সুবিধা দিতে নরেন্দ্র মোদী পক্ষপাতিত্ব ও আইনের অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। কিন্তু তাতেও টলেনি মোদী-আদানির বন্ধুত্ব।
কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, ‘প্রিয় সহচর’ আদানিকে সাজা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়েই কি ‘প্রিয় বন্ধু’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ককে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী?
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলা চলছে। কিন্তু সেই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া এগোতে পারছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ‘অসহযোগিতার’ কারণে। এ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে টানাপোড়েন বেড়েছে নয়াদিল্লির।
আরও পড়ুন>>
- ট্রাম্পের শুল্কের প্রতিবাদে মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক ভারতে
- ভারতের ওপর হঠাৎ এত ক্ষেপলেন কেন ট্রাম্প?
- ট্রাম্পের শুল্ক: বাংলাদেশের কাছে বাজার হারানোর শঙ্কায় ভারতের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা
আদানির মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা
জানা যায়, নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ওই মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ফেডারেল কোর্টকে জানিয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি এবং তার সহযোগীদের হাতে তলবি নোটিশ পৌঁছে দিতে পারেনি।
গত ১১ আগস্ট দাখিল করা এসইসির সর্বশেষ স্ট্যাটাস রিপোর্টে বলা হয়েছে, নোটিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে ‘হেগ সার্ভিস কনভেনশন’-এর নিয়ম মেনে চলার প্রক্রিয়াগত জটিলতা দেখা দিয়েছে।
গত বছর দায়ের হওয়া এই দেওয়ানি মামলায় গৌতম আদানি, তার ভাতিজা সাগর আদানি এবং আরও কয়েকজনকে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়ে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে লাভজনক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি নেওয়া হয় এবং বিষয়টি মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে গোপন রাখা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, আদানি গ্রুপ প্রকল্পের অর্থায়নে মার্কিন ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছে এবং বিলিয়ন ডলার তুলেছে।
তবে আদানি গ্রুপ ধারাবাহিকভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
প্রক্রিয়াগত বাধা ও বিলম্ব
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসইসি সক্রিয়ভাবে মামলা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও সীমান্ত–পারাপারের আইনগত সহযোগিতার জটিলতার কারণে অগ্রগতি আটকে গেছে।
গত জুলাই মাসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এসইসি গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে সহায়তার আবেদন করেছিল। কিন্তু চার মাস কেটে গেলেও নোটিশ পৌঁছায়নি। আইন মন্ত্রণালয় অনুরোধটি গুজরাটের আহমেদাবাদ কোর্টে পাঠালেও নোটিশ জারি হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসইসি জানিয়েছে, তারা এখনো ভারতীয় আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং হেগ কনভেনশনের আওতায় নোটিশ পৌঁছানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
তবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নোটিশ পৌঁছানোর কাজ সম্পন্ন করেনি। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এসইসি আদানির ভারতীয় আইনজীবীর কাছেও সরাসরি ‘মোকদ্দমার নোটিশ এবং সমন জারির দাবি মওকুফের অনুরোধ’ জারি করেছে।
কেএএ/