আদিবাসীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি দাবি

5 hours ago 5
আদিবাসী ছাত্র-জনতার দাবিকে ন্যায়সংগত উল্লেখ করে ‘আদিবাসী’ সংবলিত গ্রাফিতি বা চিত্রকর্ম পাঠ্যপুস্তকে পুনঃসংযোজনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। একই সঙ্গে আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান তারা। শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এ দাবি জানান নেতারা। রাজধানীর মতিঝিল এনসিটিবি (পাঠ্যপুস্তক) ভবনের সামনে গত বুধবার বিক্ষোভরত আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা এবং সারা দেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে ৮ দফা বাস্তবায়নেরও দাবি জানানো হয়। আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনে ছাত্র-যুব ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নেতারা বলেন, নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত জুলাই অভ্যুত্থানের চিত্রকর্ম বা গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে দেশের যেকোনো নাগরিকের বিক্ষোভ করার অধিকার রয়েছে। এটা ন্যায়সংগত গণতান্ত্রিক অধিকার এবং তা বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সংরক্ষণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই চেতনা সংরক্ষণের দাবিতে গড়ে ওঠা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর হামলা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক এবং তা বিক্ষোভকারীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ, যা দেশের ভাবমূর্তিকে নিঃসন্দেহে ক্ষুণ্ন করবে। এ সময় দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা আজও চলমান রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদের মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের নেতারা। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্ম, শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। শুধু তা-ই নয়, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা নেতৃত্বও দিয়েছে। পরে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন আন্দোলনেও তারা অংশ নিয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঐক্যের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা এক পরিবার। আমরাও সেটা চাই। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। এরপর সেসব দেশে আরও বেশি অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরাও সহযোগিতা করতে চাই। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে হবে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ আদিবাসী। এখানে প্রায় ২৫ লাখ আদিবাসী বসবাস করছে। তাদের অধিকার সংরক্ষিত হতে হবে। আদিবাসী ছাত্র-জনতার দাবিকে ‘যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত’ উল্লেখ করে ঐক্য পরিষদের আরেক সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, রাজধানীর পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে তাদের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রে এই ধরনের হামলা চলতে পারে না। এ সময় তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। একই সঙ্গে অবিলম্বে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ৮ দফা বাস্তবায়নেরও দাবি জানান। ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ৫৩ বছর হলো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমাদের চোখের পানি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। সব সময়ই আমরা বৈষম্যের শিকার। গত ৫ আগস্টের পর আশা করেছিলাম, এমন একটি সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীতে বাংলাদেশ এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে, যেখানে মানবতা প্রতিষ্ঠিত হবে। আদিবাসীদের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে এই নেতা বলেন, আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণে ঐক্য পরিষদ পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে আমরা সবাই একটি পরিবার। কিন্তু আজ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসীদের কথা বলা হচ্ছে না। সব ক্ষেত্রে বৈষম্য বিরাজমান। এমন অবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণ হতে পারে না। সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বহুত্ববাদের কথা বলা হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সত্যিকারভাবে সংস্কার হলে জাতি তা মেনে নেবে। আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকে অমানবিক ও ন্যক্কারজনক আখ্যায়িত করে হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করেন ঐক্য পরিষদের এই নেতা। সভাপতির বক্তব্যে যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ সময় তিনি ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাসগুপ্তের মামলা প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিপংকর চন্দ্র শীলের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, যুগ্ম সম্পাদক রমেন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক দিপংকর ঘোষ, যুব ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি সজিব বড়ুয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সরকার, ছাত্রঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজীব সরকার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রদীপ কান্তি দে, রাজেস নাহা, জগদিশ চাকমা, উজ্জল আজিম, প্রদীপ ত্রিপুরা, মিল্কি হাজড়া, গৌতম মজুমদারসহ অনেকে।
Read Entire Article