আনচেলত্তির স্বপ্নের ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ কে?

7 hours ago 8

ক্লাব ফুটবলে তিনি জিতেছেন প্রায় সবকিছু। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী, ইউরোপের পাঁচটি বড় লিগেই সাফল্য পাওয়া একমাত্র কোচ। কিন্তু কার্লো আনচেলত্তির হৃদয়ে এখন অন্য রকম এক স্বপ্ন—ব্রাজিলকে ২৪ বছরের শিরোপা খরা থেকে মুক্ত করা, আর হয়তো নিজের জন্মভূমি ইতালির বিপক্ষে বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলতে নামা।

২০২৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পর কেউ ভাবেনি, তিনি হঠাৎই ক্লাব ফুটবল ছেড়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখবেন। কিন্তু আনচেলত্তি নিজেই বলেছিলেন, ‘ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব পাওয়া এমন এক সুযোগ যা আমি ফিরিয়ে দিতে পারিনি। এই দেশের ফুটবলের উন্মাদনা অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনাই চলে না—ব্রাজিল খেললে পুরো দেশ থেমে যায়।’

২০২৪ সালের মাঝামাঝি আনচেলত্তির আগমনে শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। ২০২৫ সালের জুনে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের একমাত্র গোলে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ব্রাজিল। প্রথম চার ম্যাচে দুই জয়, এক ড্র, এক হার—সংখ্যা যত না বলে, তারচেয়ে বেশি বলে তাদের পরিবর্তনের গল্প। শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, এবং নিয়ন্ত্রণ—আনচেলত্তির ব্রাজিল খেলছে হিসেবি ফুটবল, যেখানে সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারসাম্য।

‘আমরা জিততে এসেছি, লুকাচ্ছি না,’ স্পষ্ট স্বরে বলেছিলেন তিনি এক সাক্ষাৎকারে।

‘২৪ বছর শিরোপা না পাওয়াটা এক ধরনের ভার। আশা করি, ২০২৬–এ সেই ভার শেষ হবে।’

তবে তার দলে জায়গা পাওয়া নিয়েও আলোচনা কম হয়নি। ইনজুরির কারণে নেইমারের অনুপস্থিতি তো আছেই, সঙ্গে বিশ্রামে ছিলেন ভিনিসিয়ুস ও রদ্রিগোও। আনচেলত্তির যুক্তি ছিল সহজ, ‘খ্যাতির আগে দরকার ফর্ম ও ভারসাম্য।’ তাই যোগ হয়েছে নতুন মুখ—কায়ো হেনরিক, কায়ো জর্জদের মতো তরুণরা, যাদের ওপর তার বিশ্বাস ভবিষ্যতের বিনিয়োগ।

অবশ্য সবাই তার নিয়োগে খুশি নন। সাবেক গোলরক্ষক ও কোচ এমারসন লেও একে “ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ব্যর্থতার প্রতিফলন” বলেছিলেন, যুক্তি দিয়েছিলেন—“রিয়াল মাদ্রিদ কোচ করা এক বিষয়, ব্রাজিলের কোচ হওয়া একদম অন্য। এখানে এক গোটা জাতি বিচার করে।”

কিন্তু আনচেলত্তি চাপের সঙ্গে লড়াই জানেন। তিনি বলেন, “আমি মনোযোগ দিই প্রস্তুতি, ঐক্য আর বিশ্বাসে। বিশ্বকাপ হবে কঠিন, কিন্তু লক্ষ্য একটাই—ব্রাজিলকে আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করা।”

সবশেষে যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় স্বপ্নের ফাইনালের কথা, আনচেলত্তির মুখে ঝরে পড়ে নরম হাসি—“ব্রাজিল বনাম ইতালি—এটা আবেগের দিক থেকে আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর ফাইনাল হবে।”

চলতি শতাব্দীতে ব্রাজিলের দীর্ঘ অপেক্ষা আর আনচেলত্তির অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা—দুটি গল্প যেন এক সূত্রে বাঁধা। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে হয়তো ফুটবল দুনিয়া দেখবে সেই স্বপ্নের মঞ্চ, যেখানে এক ইতালিয়ান কোচ লড়বেন ব্রাজিলের হয়ে, আর লক্ষ্য থাকবে ইতিহাসের সবচেয়ে রোমান্টিক সমাপ্তি—ব্রাজিলের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়।

Read Entire Article