ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজের হলের সিট নবায়ন ইস্যু নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে ১৪ শিক্ষার্থীকে। সতর্ক করা হয়েছে চারজনকে।
শনিবার (১ র্মাচ) সকালে কলেজের হল সুপার অধ্যাপক মো. শাহজাহান করিম সাজু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বহিষ্কৃতরা হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম জনি, ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন অপু, একই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মুকুল, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খায়রুল ইসলাম এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আলী আকবর।
কারণ দর্শানো নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন- রুমন, মোস্তাক, তন্ময়, হৃদয় খান, রিয়াদ, রবিন, ফরহাদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শাহিন, হুমায়ুন, পিয়াস, নাঈম, রাফি ও আল আমিনকে। তারা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগে কলেজ শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান, বাঁধন, দেলোয়ার ও রামিমকে সতর্ক করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি আসন নবায়ন নিয়ে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর সেনাবাহিনী ও পুলিশ ক্যাম্পাসে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরে ছেলেদের তিনটি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও কলেজের তিন দিনের পাঠ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে যান। গত ১৪ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের বিরোধ ও ধাওয়ার ঘটনায় কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটির সদস্যরা ছিলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রশিদুল আলম, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহীন কবির ও অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম।
কলেজের একটি সূত্র জানায়, কলেজে ছেলেদের পল্লীকবি জসীমউদ্দীন হল, কবি নজরুল হল, ভাষাসৈনিক আহমেদ সালেক হল নামের তিনটি হল রয়েছে। এসব হলে ৩৭৫টি সিট রয়েছে। এছাড়া সুকান্ত হল নামের আরও একটি হল নির্মাণাধীন। আগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাদের শেল্টারে ছাত্র নয় এমন শতাধিক ছেলে হলে থেকেছে। এরই মধ্যে অন্তত ৩৫ জন হল ছেড়ে চলে গেছেন। ছাত্র নয় এমন আরও ৭৫ জনের সিট হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে যে চারজনকে সতর্ক করা হয়েছে তাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের অন্যতম সমন্বয়ক আশিকুর রহমানের নাম রয়েছে। আশিকুর রহমান ও বাধন নামের দুজন ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা অন্য সবাই হলে থাকতেন। এর মধ্যে আশিকুর রহমান কলেজে অনার্স শেষ করেছেন। তিনি মাস্টার্সে ভর্তি হবেন।
জসীমউদ্দীন হলের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, হল খোলার পর থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা থাকছি। আগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কলেজ শাখার নেতারা অনেককে তাদের মিছিলে যেতে বাধ্য করেছেন। এখন সে পরিবেশ নেই। সবাই শান্তিতে পড়ালেখা করছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমরা এখনো জানি না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের অন্যতম সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আমাকে সতর্ক করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।
হল সুপার অধ্যাপক মো. শাহজাহান করিম সাজু বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত পাঁচজনের সংঘর্ষের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের হামলার ঘটনা সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছে। গত ৫ আগস্টের আগে অন্তত ৩৫ শিক্ষার্থী অবৈধভাবে বিভিন্ন হলের সিট দখল করে থেকেছে। তাদের পড়াশোনা শেষ হলেও সিট ছাড়েনি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে হলের সিট নবায়ন শুরু হয়ে এখনো চলছে। এখন থেকে বৈধ শিক্ষার্থীরাই হলে থাকতে পারবে।
আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, আমরা যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছি পাঁচজন ইতোমধ্যে জানে। সবার সামনে দেইনি কারণ তাদের হেয় করতে চাইনি। তাদেরও সম্মান আছে। তাদের হোস্টেল সুপার মৌখিকভাবে বলে দিয়েছে যে, তারা হলে উঠতে পারবে না। যদি তারা উপযুক্ত উত্তর দিতে পারে তাদের ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিল বা ছিল না এরকম কিছু নামও আসছে পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরে। সেগুলোর জন্য অধিকতর তদন্তের পর পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন আসছে। সেগুলোর ব্যাপারে স্টিয়ারিং কমিটি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে।