বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাভারে নিহত আরিফুর রহমান রাসেলের মরদেহ উত্তোলনে সম্মতি দেয়নি তার পরিবারের সদস্যরা। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আদালতের নির্দেশে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের সুন্দরকাঠী গ্রামে মরদেহ উত্তোলন করতে গেলে পরিবারের সদস্যরা আপত্তি করেন।
গত ৫ আগস্ট আরিফুর রহমান রাসেল (৩২) সাভারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত হন। আরিফুর বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের সুন্দরকাঠী গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে ও ঢাকা পূর্ব মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এছাড়াও ধানমন্ডিতে পপুলার হাসপাতালের ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এদিন আদালতের নির্দেশে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রুমানা আফরোজসহ পুলিশ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের সুন্দরকাঠী গ্রামে যায়। পরে আরিফুর রহমান রাসেলের স্ত্রী সুনিয়া আক্তারকে (১৯) পারিবারিক কবরস্থান থেকে রাসেলের মরদেহ উত্তোলনের কথা জানান। তখন রাসেলের স্ত্রী-স্বজন ও স্থানীয়রা কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনে অসম্মতি দেন। এরপর পরিবারের সদস্য ও বাদীর সম্মতি না পাওয়ায় বেলা সাড়ে ৪টার দিকে ফিরে যান তারা।
নিহতের স্ত্রী সুনিয়া বলেন, আমার স্বামীকে শহীদের মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। আমরা কেউ চাই না মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হোক। তাই আমরা লাশ উত্তোলন না করার জন্য আবেদন করেছি। লাশ গ্রহণ করা থেকে কবর দেওয়া পর্যন্ত যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য নিতে পারেন। এসব বিষয় জানিয়ে লাশ উত্তোলন না করার জন্য পরিবারের সবার পক্ষ থেকে তিনি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. মেহেদী হাসান বলেন, নিহত আরিফুর রহমান রাসেলের বড় ভাই সাইদুর রহমান বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ নামধারী ১৩০ অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং- ৪৪ উক্ত মামলার প্রসঙ্গে আদালতের নির্দেশ অনুসারে শহীদ আরিফুর রহমান রাসেলের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রতিবেদন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে শহীদ পরিবার মরদেহ উত্তোলন করতে ইচ্ছুক নন। এ বিষয়ে তারা লিখিত আবেদন দিয়েছেন। আবেদনে তারা আরিফুর রহমান রাসেল শহীদের মর্যাদা পেয়েছেন জানিয়ে লাশ উত্তোলনে আপত্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রুমানা আফরোজ বলেন বলেন, রাসেলের পরিবার মরদেহ উত্তোলন ও ময়নাতদন্ত না করার প্রসঙ্গে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।