আন্দোলনে যোগ না দেওয়ায় পুড়ে ছাই অ্যামাজন নিটওয়্যার

4 days ago 10

কারখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও প্রশাসন কারো কথাই মানছেন না বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা। বেতন না নিয়ে তারা রাস্তা ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। শ্রমিকদের এ আন্দোলনে স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ। ওই এলাকার স্বাভাবিক জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। রাত ৭টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বেক্সিমকোর শ্রমিকরা।

গাজীপুরের বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে টানা তিন দিন ধরে বিক্ষোভ ও চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন। অন্যদিকে পাশের অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন খুলে দেওয়ার দাবিতে জিরানী বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। দুই কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভের জেরে মহানগরীর এলাকার আশপাশের ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। পাশের অ্যামাজন নিটওয়্যার কারখানা চালু থাকায় ওই কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এসময় দুই কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হয়।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের বেতনের দাবিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা তৃতীয় দিনের মতো সোমবার সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে করে বিক্ষোভ করছিলেন। এসময় সামান্য দূরে গাজীপুর মহানগরীর পানিশাইল এলাকায় ডরিন ফ্যাশন নামের অপর একটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় ওই কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় দুই কারখানার শ্রমিকরা মিলে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে চক্রবর্তী ও জিরানী বাজার এলাকায় টায়ারে এবং পরিত্যাক্ত জিনিসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ ও লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিতে থাকেন। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনার জেরে কাশিমপুর ও জিরানীর গাজীপুর মহানগর এলাকায় অন্তত ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে পাশের আশুলিয়া পূর্বকলতাসুতি এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার কারখানাটি চালু ছিল। আন্দোলনকারীরা জানতে পেরে ওই কারখানার সামনে গিয়ে শ্রমিকদের তাদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে ওই কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এসময় বেক্সিমকে ও ডরিন কারখানার শ্রমিকরা ওই এলাকার দোকানপাটে হামলা চালান। বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় এবং অ্যামাজন নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিকরা মিলে বেক্সিমকো এবং ডরিন কারখানার শ্রমিকদের ধাওয়া দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে বেক্সিমকো ও ডরিন ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে অ্যামাজান কারখানায় হামলা চালিয়ে প্রথমে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। পরে তারা কারখানাটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে আটকে দেন দুই কারখানার শ্রমিকরা। বিকেল ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও এর আগেই কারখানাটির সব মালামাল ও মেশিনপত্র সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, খবর পেয়ে কাশিমপুর দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তবে শ্রমিকদের বাধার কারণে সময়মতো পৌঁছানো যায়নি। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানো হয়।

কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস সঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। পরে ফায়ার সার্ভিস গেলেও এর আগেই কারখানাটি পুড়ে যায়।

তিনি আরও জানান, বেক্সিমকো কারখানাগুলোর মধ্যে সিরামিক, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস কারখানার রয়েছে। সিরামিকে বেতন নিয়ে সমস্যা নেই। গার্মেন্টস ও টেক্সটাইলের ৩৬ হাজার শ্রমিকের বেতন বকেয়া রয়েছে। মালিক সালমান এফ রহমান এখন কারাগারে। কারখানার কর্মকর্তারা আগামী ২০ নভেম্বর শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন।

আমিনুল ইসলাম/এসআর/জিকেএস

Read Entire Article