আবুল সরকার গ্রেফতারসহ নানা সমালোচনার জবাব দিলেন ফারুকী
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সেই বিতর্কে নতুন করে যোগ হয়েছে আবুল সরকারের অনুসারীদের উপর হামলা। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অনেকে করেছেন সমালোচনাও। শুধু তাই নয়, আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ফারুকীর সমালোচনা চলছে। বিষয়গুলো নিয়ে মুখ খুলেছেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এসব নিয়ে কথা বলেছেন ফারুকী। নিচে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- আরও পড়ুনকনসার্টে অবরুদ্ধ থেকে পালানোর খবর নিয়ে মুখ খুললেন ঐশীবাবা হাজতে, লাঞ্ছিত ভক্তদের নিয়ে যা বললেন আবুল সরকারের মেয়ে সরকারে যোগ দেয়ার পর গত চারটা দিন ছিলো আমার জন্য সবচেয়ে অস্বস্তির। অনেকেই আমাকে বলেছেন, আমি চুপ করে আছি কেন? আমি বলেছি, আমাদের কাজ তো কাজটা করা। সরকারে বসে বিবৃতি দেয়া না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ফর দ্য রেকর্ড কয়েকটা প্রসঙ্গে কথা বলি। আবুল সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এটা জানা মাত্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি। তখন সেখান থেকে আমাকে একটা ভিডিও ক
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সেই বিতর্কে নতুন করে যোগ হয়েছে আবুল সরকারের অনুসারীদের উপর হামলা। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অনেকে করেছেন সমালোচনাও।
শুধু তাই নয়, আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ফারুকীর সমালোচনা চলছে। বিষয়গুলো নিয়ে মুখ খুলেছেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এসব নিয়ে কথা বলেছেন ফারুকী। নিচে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
আরও পড়ুন
কনসার্টে অবরুদ্ধ থেকে পালানোর খবর নিয়ে মুখ খুললেন ঐশী
বাবা হাজতে, লাঞ্ছিত ভক্তদের নিয়ে যা বললেন আবুল সরকারের মেয়ে
সরকারে যোগ দেয়ার পর গত চারটা দিন ছিলো আমার জন্য সবচেয়ে অস্বস্তির। অনেকেই আমাকে বলেছেন, আমি চুপ করে আছি কেন? আমি বলেছি, আমাদের কাজ তো কাজটা করা। সরকারে বসে বিবৃতি দেয়া না।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ফর দ্য রেকর্ড কয়েকটা প্রসঙ্গে কথা বলি।
আবুল সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এটা জানা মাত্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি। তখন সেখান থেকে আমাকে একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতির উত্তাপ এবং ঝুঁকির দিকগুলো ব্যাখ্যা করা হয়। আমি বুঝতে পারি একটা সংকটের দিকে যাচ্ছে পুরা ব্যাপারটা।
যেকোনো ফৌজদারি অপরাধে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আমি আমার পক্ষ থেকে যা যা করার বা বলার তা তা করছি এবং বলছি। এর বেশি এখানে লেখাও আমার পক্ষে সঙ্গত কারণে সম্ভব না। মনে রাখতে অনুরোধ করবো, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির ক্ষেত্রে আমি বা আমার মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কোনো ক্ষমতা বা ভূমিকা নাই। এই সম্পর্কিত যাবতীয় সিদ্ধান্তের এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে এই স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়টা হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করছে। আমি এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
আমি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে সবাইকে ধৈর্য্য এবং সংযম প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করছি। ধর্মীয় এবং সামাজিক সম্প্রীতিই কেবল আমাদের দেশটাকে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিতে পারবে, অন্য কিছু কেবল ধ্বংসের দিকেই নিবে।
তিনি আরও লিখেছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার কিছু ইন্টারেস্টিং প্যাটার্ন লক্ষ্য করছি। কোনো সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় না, লক্ষ্য ফারুকী। এদের মাঝে কয়েকজনকে চিনি যারা আমাদের কমন সার্কেলের আড্ডায় বলেছে, ফারুকীর মিনিস্ট্রি যেসব ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে এটা তো দেশে ইনক্লুসিভ রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর! অনুমান করি, সেই প্রসঙ্গে হওয়া গাত্রদাহ আবুল সরকার উসিলায় এখন আমার উপর ঢালছেন হয়তো। তাদের উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে বলতে চাই, এই কাজটা আমাকে করতেই হবে, কারণ শহীদেরা আমাকে এই কাজ করতেই পাঠিয়েছে। আই অ্যাম সরি টু মেক ইউ ফিল আনকমফোরটেবল। এবং সামনে আমাদের মন্ত্রণালয় আরো আনকমফোরটেবল কাজে হাত দিবে। ইতিহাস গায়েব করে অথবা এর নির্বাচিত অংশ পেশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইনটেলেকচুয়াল কলোনি বানানোর যে প্রকল্প চলে আসছে বহু বছর, সেটাকে একদল তরুণ গবেষক যাচাই বাছাই করে দেখার কাজে হাত দিয়েছে। ফলে আমাকে আরো আক্রমণ করার জন্য তৈরি হতে অনুরোধ করছি।
তিনি লিখেছেন, সমালোচনা-প্যাটার্নের দ্বিতীয় রূপ, ‘মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে লালন সেলিব্রেট করে আর বাউল মারে! ভণ্ডামী!’ বুঝলাম না, বাউল কি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় মারলো? আপনাদের একটু কষ্ট করে রিসার্চ করতে বলবো। তাহলেই দেখতে পাবেন ফকির-বাউলের উপর এই অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো। এমনকি আওয়ামী লীগের আমলটা ঘেঁটে দেখেন, কত জায়গায় বাউলদের উপর আক্রমণ হয়েছে, চুল কেটে দিয়েছে, বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলেছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পালাকার গ্রেফতার হয়েছে!
এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ যেটা করা সম্ভব সেটাই করেছি- লালনকে জাতীয়ভাবে সেলিব্রেট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি যে আমরা তাদের সাথে আছি এবং লালন শাহ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক-কবি-দার্শনিকদের একজন। এর পাশাপাশি সারাদেশে আমরা অনেকগুলো সাধুসঙ্গ করেছি। আমরা পরিষ্কার বহুত্বের পক্ষে সাংস্কৃতিকভাবে অবস্থান নিয়েছি। ৫৪ বছরে প্রথমবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদ, বৌদ্ধ পূর্নিমা, দুর্গাপূজা সেলিব্রেট করেছি। নববর্ষে সকল জাতিগোষ্ঠিকে নিয়ে একসাথে উৎসব করেছি। আমাদের এই অবস্থানটাই নতুন বাংলাদেশ। যেখানে সকল জনগোষ্ঠীর স্টেইক থাকবে।
এখন আমার মনে যে প্রশ্নটা উদয় হয়েছে: আমি ঠিক বুঝতে পারছি না সরকারের করণীয় কী? ধরেন কোথাও মেয়েদের একটা ফুটবল খেলা বন্ধ হলো। তখন আমাদের করণীয় কী? আমার তো মনে হয় আমাদের কর্তব্য যারা এটা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা এবং খেলার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া। নাকি সেই বাড়িয়ে দেয়াটা অন্যায় হবে কারণ অমুক জায়গায় একটা খেলা বন্ধ হয়েছিলো সুতরাং মেয়েদের খেলাই বন্ধ করে দাও? তো লালন জাতীয়ভাবে পালন করে এবং সরকারী উদ্যোগে সাধুসঙ্গ বাড়ানোটা কেমনে অপরাধ হইলো বুঝতেছি না। নাকি এখানেও সেই কেইস? অন্য কারণের রাগ এই কারণে ঢালা? তাহলে একই উত্তর, আপনাকে আনফরচুনেটলি আরো জ্বলতে হবে।
ফারুকী লিখেছেন, সবচেয়ে তামাশাময় এইটা। বাউলরা আক্রান্ত হইছে? ড্রোন শো করতে বলো ফারুকীকে? আমেনার মা রিকশা থেকে পড়ে গেছে? ফারুকীকে বলো আরো ড্রোন শো করতে। হাহাহাহা। ভেরি ফানি। ভাইয়েরা ও বোনেরা আমার, টেলিভিশন সিনেমার আমিন চেয়ারম্যান হবেন না প্লিজ। আমার বন্ধু ডরোথি ওয়েনার টেলিভিশন দেখে আপ্লুত হয়ে আমাকে একটা কথা বলেছিল, ‘মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে ‘ফিয়ার অফ দ্য আননোন’।’ তার বিবেচনায় আমিন চেয়ারম্যানের কাছে টেলিভিশন ছিলো সেই আননোন থিং।
ডরোথির বাবা ইস্ট জার্মানির। বার্লিন দেয়াল ভাঙার পর ভদ্রলোক তাকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটার সময় দোকানের ডিসপ্লেতে বার্বি দেখলে ডরোথির চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দিতো, যাতে মেয়ে নষ্ট না হয়ে যায়! তার জন্য বার্বি ছিলো ‘দ্য আননোন থিং’। আমাদের কতিপয় বিশুদ্ধবাদীর কাছে ড্রোন শো হচ্ছে সেই আননোন থিং। আজকে আর লম্বা করলাম না। পরে একদিন ড্রোন শো নিয়ে আমার কথা বলবো।
ড্রোনাতংকে ভোগা বন্ধুদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে এইটুকু বলি, মিডিয়া ইজ ইভলবিং এভরিডে। দুনিয়ার বেশিরভাগ বড় ইভেন্টে এখন ড্রোন শো যুক্ত হচ্ছে। আমরা যখন শুরু করি তখনও এতোটা ছিলো না। কয়েকদিন আগে দুনিয়ার অন্যতম বৃহৎ যাদুঘর গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম ওপেনিংয়ে বিশেষ আয়োজন ছিলো ড্রোন শো। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের প্রচারণায় ২৬ শহরে সম্ভবত ড্রোন শো করেছে। আর নতুন বছর, জাতীয় দিবস, পূজা, কালচারাল ফেস্টিভ্যাল- এগুলোতে এখন ড্রোন শো ইজ দ্য নিউ নর্মাল। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে, আরো হবে।
এলআইএ/আরএমডি
What's Your Reaction?