দেশের বাজারে দাম স্বাভাবিক ও চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ভারত থেকে দীর্ঘ ১৯ মাস পর আমদানি শুরু করেছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। এতে খুচরা বাজারে দাম না কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে নতুন ধানের যে দাম এতে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় আগামীতে চালের দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। বরং ধানের দাম বেশি হলে চালেও দামও বাড়বে।
হিলি শুল্ক স্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ভারতীয় ৩টি ট্রাকে ১৩০ মেট্রিকটন, মঙ্গলবার ২৫ ট্রাকে ১০২৩ মেট্রিকটন, বুধবার ১৩ ট্রাকে ৪৪৩ মেট্রিকটন, বৃহস্পতিবার ১২ ট্রাকে ৪৮৮ মেট্রিকটন, শনিবার ৩৭ ট্রাকে ১২৫৭ মেট্রিকটন এবং রোববার ১৭ ট্রাকে ৬০৪ মেট্রিকটন চাল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫৫৮ মেট্রিকটন নন-বাসমতি চাল আমদানি করা হয়েছে। আমদানিকৃত চালগুলো প্রকারভেদে ৪১০-৪৭০ ডলারে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
হিলি বন্দরে রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানিকৃত চালগুলোর মধ্যে ৪০/৯৪ লাঙ্গল মার্কা চিকন ৫৭ থেকে ৬১ টাকা, নাজিরসাইল কাটারি ৬৮-৭০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪৯-৫০ টাকা, স্বর্ণা (৫) ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে হিলি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাটারি ৬৮-৭০ টাকা, মোটা হাইব্রিড ২৯ জাতের চাল ৫৭ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪৮ টাকা, স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫১-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় স্থিতিশীল রয়েছে।
হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা অটোচালক আছির উদ্দিন বলেন,‘আমার সংসারের নাতীসহ ৫ জন খানে ওয়ালা। প্রতিদিন প্রায় ২ কেজি চাল লাগে। বৃহস্পতিবার যে চাল কিনেছি ৫০ টাকা কেজি দরে আজও সেই চাল ৫০ টাকা কেজি দরে কিনলাম। দাম আগের মতোই আছে।’
হিলি বাজারে মেসার্স কনক খাদ্য ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী শ্রী কুলো প্রধান জানান, ‘বর্তমানে ৫২-৫৩ টাকায় চাল আমদানি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের তুলনায় আগামী সপ্তাহে আমদানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৫০-৫১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমদানির জন্য এলসি না দিলে চালের দাম আরও বেড়ে যেত। কিছু সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী মূল্য বেশি করে দিত। এলসি থাকার কারণে মূল্য বেশি করার কোনো অপশন নাই। আশা করছি চালের দাম বাড়বে না, একটু হলেও আগামী সপ্তাহে কমবে।’
এদিকে বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ১৭ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। নির্ধারিত জমি থেকে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৩১০ মেট্রিক টন। যা গড়ে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ৫.৭৫ মেট্রিক টন।
বিরামপুর উপজেলার কাটলাবাজারের ধান ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান জানান, বর্তমান বাজারে গুটিস্বর্ণা (কাঁচা) ১১৫০ থেকে ১২শ, স্বর্ণা-৫ জাতের ধান ১৩৫০, সম্পাকাটারি ১৬০০ এবং হাইব্রিড ১৩২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
রশিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ৭ বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান রোপণ করেছি। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। ফলন হচ্ছে ১৬ থেকে ১৯ মণ। বর্তমান বাজারে স্বর্ণা ৫ জাতের ধানের দাম ১৩৫০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ১ মণ ধান ভাঙাসহ আরও ১০০ টাকা খরচ দিয়ে প্রায় ১৪৫০ টাকা পড়বে। প্রতিমণ ধানে সর্বোচ্চ ২৮ কেজি চাল উৎপাদন হয়। এতে ১ কেজি চালের মূল্য প্রায় ৫১ টাকা ৭৪ পয়সা পড়ছে। এতে আগামীতে চালের দাম কমার সম্ভাবনা অনেকটা কম। যদি সরকার ভর্তুকি দেয় তাহলে কমতে পারে।
চাল ব্যবসায়ী সামসুল মিয়া জানান, ভারতীয় চালের দাম আর দেশীয় চালের দাম অনেকটা সমান সমান। বাজারে ধানের দাম বেশি হলে চালের দাম বাড়বে, আর ধানের দাম কম হলে চালের দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। কৃষক ধানের দাম বেশি নেবে আর চালের দাম কমাতে বলবে এটা হয় না।
এফএ/জেআইএম