আমরা ইসরায়েলের কোনো দালাল নই : মার্কিন দূত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিম্মিবিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহলার স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র, আমরা ইসরায়েলের কোনো দালাল নই। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনার বিষয়ে ইসরায়েল সমালোচনা করায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রোববার (৯ মার্চ) মার্কিন ও ইসরায়েলি একাধিক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বোহলার এ বিষয়ে কথা বলেন। খবর রয়টার্স।
এর আগে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বোহলারের হামাসের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বোহলার বলেন, তিনি ইসরায়েলের ক্ষোভ বুঝতে পারেন, তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে।
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও কৌশলগতবিষয়কমন্ত্রী রন ডারমারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোহলার বলেন, আমি রনের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তার উদ্বেগের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। তবে হামাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখুন, তাদের মাথায় শিং গজায়নি। তারা আসলে আমাদের মতোই মানুষ, বেশ ভালো লোক।’
রন ডারমারের প্রতিক্রিয়াকে ইঙ্গিত করে বোহলার বলেন, ‘সে আমাকে চেনে না এবং এখানে (হামাসের সঙ্গে আলোচনায়) বড় ধরনের ঝুঁকি আছে। তিনি এমন এক দেশে থাকেন, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলে, তা অন্য অনেক মানুষের ক্ষতি বা উপকার করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাই, আমি ইসরায়েলের অস্বস্তি ও উদ্বেগের কারণ বুঝতে পারি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, আমরা যুক্তরাষ্ট্র। আমরা ইসরায়েলের কোনো দালাল নই। আমাদের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। আমরা পারস্পরিক যোগাযোগ করেছি এবং নির্দিষ্ট কিছু সীমারেখার মধ্যে থেকেই কাজ করছি।’
অপরদিকে বোহলারের বক্তব্য ইসরায়েলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েলকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, ‘আমরা অবাক হয়েছি যখন বোহলার বললেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের দালাল নয়।’
বর্তমানে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় চলমান পরোক্ষ আলোচনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হলো গাজায় এখনো আটক থাকা মার্কিন নাগরিকদের মুক্ত করা।
বোহলার বলেন, ‘আমরা দুই সপ্তাহ শুধু বসে থাকার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। এখন বাস্তব সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কিছু অগ্রগতি হতে পারে এবং জিম্মিদের বাড়ি ফিরতে দেখা যেতে পারে।’
ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল-১২ বোহলারের কাছে জানতে চায়, ‘বাস্তবতা বিবেচনায় হামাস শেষ পর্যন্ত অস্ত্র সমর্পণ করবে এবং গাজার রাজনৈতিক ভবিষ্যতে আর কোনো ভূমিকা রাখবে—এমনটা কী সম্ভব?’
উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এটি সম্ভব।’
বোহলারের এই মন্তব্য ও যুক্তরাষ্ট্রের হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনার মুখেও যুক্তরাষ্ট্র জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে সরাসরি যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।