আমরা সাংবাদিক, আমাদের গুলি কইরেন না

3 hours ago 2

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল মামনুরের বিরুদ্ধে করা মামলার ৩০তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন সিলেটের ফটোসাংবাদিক মোহিদ হোসেন।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

মোহিদ হোসেন তার জবানবন্দিতে জানান, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার দেশব্যাপী বিএনপির গায়েবি জানাজা কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটে কালেক্টরেট মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের হলে পুলিশ মুসল্লিদের ওপর গুলি চালায়। তিনি এবং তার সহকর্মীরা তখন পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি জানান, এক পর্যায়ে তারা সেখানকার পুলিশের এডিসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দস্তগীর ভাই, আমরা সাংবাদিক আমাদের গুলি কইরেন না।’ এরপরেও এসি মিজানুর রহমান ও ওসি মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা গুলি করতে থাকেন। এসময় পুলিশের গুলিতে দৈনিক জালালাবাদ ও নয়াদিগন্তের ফটোসাংবাদিক আবু তোরাব গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন।

জবানবন্দিতে মোহিদ হোসেন আরও জানান, গুলিবিদ্ধ আবু তোরাবকে হাসপাতালে নিতে কোনো যানবাহন পাচ্ছিলেন না। পরে একটি রিকশা খুঁজে পেলেও চালক সেখানে ছিল না। তাই নিজেই রিকশা চালিয়ে আবু তোরাবকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছোটেন। পরে সিএনজিতে করে তাকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন চিকিৎসায় বাধা দেয়। এরপর আবু তোরাবকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেদিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

ট্রাইব্যুনালে মোহিদ হোসেনের দেওয়া ঘটনার দিনের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়, যেখানে গুলিবর্ষণের দৃশ্য এবং রক্তাক্ত আবু তোরাবকে রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।

এদিন ফটোসাংবাদিক মোহিদ হোসেনসহ মোট ছয়জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। অন্য সাক্ষীরা হলেন—সিলেটের আরেক সাংবাদিক হুমায়ুন কবির, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসনাৎ আল মতিন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের ওয়ারেন্ট অফিসার তারেক নাছরুল্যাহ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক মো. রশিদুল আলম এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার রাহাত-বিন-কাশেম। এই মামলার মোট ৩৫ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল দিন ধার্য করেছেন।

এই মামলার আসামিরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। তবে সাবেক আইজিপি মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে ‘রাজসাক্ষী’ হয়েছেন। আজ তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এফএইচ/কেএইচকে/এএসএম

Read Entire Article