আমাদের উন্নয়ন দর্শনে মানুষ নয়, অবকাঠামোই মুখ্য হয়ে গেছে: রিজওয়ানা

11 hours ago 6

আমাদের উন্নয়ন দর্শনে মানুষ নয়, অবকাঠামোই মুখ্য হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মেগা প্রকল্প নিয়ে গর্ব করার প্রবণতা বাড়লেও নদীভাঙা মানুষের বেদনা ও জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা মানুষের কষ্ট নিয়ে আমাদের চিন্তা এখনো প্রান্তিক। উন্নয়নের যে দর্শন, সেখানে সাম্য আর ন্যায়বিচারের জায়গাটা হারিয়ে যাচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি নদীভাঙন রোধে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা বাড়াতে চাই, তখন সেটাকে অগ্রাধিকার দিই না। কিন্তু ৬ লেনের রাস্তার মতো মেগা প্রকল্পের জন্য হাজার কোটি টাকা সহজেই অনুমোদিত হয়। এটা কোনো সরকারের দোষ নয় বরং আমাদের উন্নয়নের দর্শনটাই এমন হয়ে গেছে—যেখানে মানুষ নয়, অবকাঠামোই মূল। এই দর্শনের পরিবর্তন জরুরি।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর আলোকি সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজওয়ানা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা আনন্দিত। বিপুল অর্থ ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু একই গুরুত্ব দিয়ে আমরা কখনো ভাবি না যে নদীভাঙন রোধে বা নদীভাঙা মানুষদের বাঁচাতে কতটুকু অর্থ ব্যয় হচ্ছে? প্রতি বছর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ থাকে নদীভাঙন এলাকায় সুরক্ষার জন্য; কিন্তু বাস্তবে প্রয়োজন ১১ হাজার কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবার বাজেটের সময় দেখি কোন ১০টি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেল। কিন্তু কেউ জিজ্ঞেস করে না, কোন ১০টি সবচেয়ে কম পেল। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সবসময় সেই তালিকার নিচের দিকে থাকে। ফলে এ খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি হয় না বরং নীতি আর পদ্ধতির জটিলতায় কাজই শুরু করা যায় না।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাস্তবতা। টেকসই উন্নয়ন চাইলে এই ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। আমরা স্থায়ী বাঁধ দেব, কিন্তু সেটা সম্পন্ন হতে ৪-৫ বছর লেগে যায়। ততদিনে ছোট ছোট ভাঙনে মানুষ নিঃস্ব হয়। সেখানে ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানো কি এত কঠিন?

তিনি দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা দুর্নীতিতে হারিয়ে যায় বা অব্যবহৃত থেকে যায়। সেই টাকাই যদি নদীভাঙন বা জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ব্যয় করা যেত, তাহলে অনেক জীবন ও জীবিকা বাঁচানো সম্ভব হতো।

পরিশেষে উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, স্থানীয় পর্যায়েও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যেমন বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সাতক্ষীরা—এসব জেলায় নিরাপদ পানির অভাব মেটাতে স্থানীয় সরকার ও জলবায়ু ট্রাস্ট একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের (রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং) প্রকল্প আমরা প্রস্তাব আকারে একনেকে পাঠাতে যাচ্ছি।

তিনি শেষে বলেন, আমি এই দায়িত্বে থেকে সবচেয়ে বড় যে অভিজ্ঞতা পেয়েছি, তা হলো—মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ। এই সুযোগটাই আমি সবচেয়ে বেশি মিস করবো।

আরএএস/এমআইএইচএস/এএসএম

Read Entire Article