স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি, এতগুলো মানুষের জীবনের বিনিময়ে, ত্যাগের বিনিময়ে বর্তমান বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি এসেছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে ভালো একটি জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। সংস্কারটা আমাদের চিন্তার জায়গা থেকে করতে হবে। ঢাকা ওয়াসায় যখন আমি আসলাম তখন দেখলাম এখানে আমার দুটি ছবি টানানো আছে। তাহলে সেই সংস্কারটা কোথায় হলো? আগে শেখ হাসিনার ছবি টানানো থাকতো, এখন আমার ছবি টানানো হয়েছে। আমি অনুরোধ করব এই বিষয়গুলো পরিহার করে চলবেন। ছবি টানালে ৭১ ও ২৪ এর বীরদের ছবি টানাবেন।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকা ওয়াসার বুড়িগঙ্গা হলে মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু ‘জেগে উঠি এক সঙ্গে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশে’ স্লোগানে আয়োজিত ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, নগরবাসীর সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। আগের দিনে কি হয়েছে না হয়েছে সে বিষয়ে আর শুনতে চাই না। নগরবাসীর সেবা নিশ্চিতের জন্য আপনারা সর্বোচ্চ কাজ করে তা নিশ্চিত করবেন। আগের অনেক প্রকল্পে অনেক দুর্নীতি হয়েছে, সেখানে অনেক কর্মকর্তা জড়িত ছিল। কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি করার সুযোগ কম।
তিনি বলেন, ওয়াসার পানি সরবরাহে কোনো সংকট যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে এখন থেকেই সচেষ্ট হন। ওয়াসার সেবার মান নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আপনারা গ্রহণ করবেন সেই প্রত্যাশা করছি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা জানি পানির অপর নাম জীবন। তবে সেই পানি যদি বিশুদ্ধ না হয় সেটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। রাজধানীবাসীর সুপেয় পানির নিশ্চয়তার দায়িত্ব ওয়াসার। সবাই সেটি নিশ্চিতের জন্য কাজ করবেন। আপনারা যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছেন- এসব লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ে জানান আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। দুর্নীতি এতদিন ছিল এখন আর চলবে না। আমি জানি না কতদিন থাকবো। তবে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই। যতদিন থাকি ওয়াসার কেউ যদি দুর্নীতির কথা চিন্তাও করেন তাহলে ছাড় পাবেন না।’
অনুষ্ঠানে কর্মচারীদের পক্ষে বক্তব্য দেন ঢাকা ওয়াসা জাতীয়তবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (রেজি-৩১৮৫) এর সভাপতি আজিজুল আলম খান।
তিনি বলেন, ‘সাবেক ওয়াসার এমডি আমাদের মানসিকভাবে শাস্তি দিয়েছেন। তিনি ওয়াসাকে আয়নাঘর বানিয়েছিলেন। আমার আবেদন নির্যাতিত শ্রমিক কর্মচারীরা নানাভাবে হয়রানি হয়েছে, সাসপেন্ড হয়েছে, জেল খেটেছেন, বদলির মতো অত্যাচার করা হয়েছে। এমন জায়গায় বদলি করা হয়েছে- বেতনের অধিকাংশ টাকা যাতায়াত ভাড়ায় শেষ হয়ে যায়। তাদের প্রতি ন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন করছি। আসা করবো ওয়াসা স্বৈরাচারমুক্ত প্রতিষ্ঠান হবে। আমরা সবার প্রচেষ্টায় নগরবাসীকে সুপেয় পানি দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ৫ আগস্টের পর অন্যায়ভাবে বদলি করা ১১৪ জনকে তাদের স্ব স্ব জায়গায় ফেরাতে পেরেছি। অনেক ভাইদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে সক্ষম হয়েছি। শুধু বিএনপি করার কারণে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি এমন ৫১ জনের পদোন্নতি নিশ্চিত করেছি। আমরা যখন এসব কাজ করছি তখন ঢাকা ওয়াসায় তাকসিমের ঘাপটি মেরে থাকা কিছু কর্মকর্তা পেছনে লেগেছে। টাকা দিয়ে মিথ্যা সংবাদ করাচ্ছে। কুৎসা রটাচ্ছে।’
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান। এ সময় ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএমএ/এমআরএম/এএসএম