বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, জনপ্রিয় বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, আমার বক্তব্য রাজনীতিবিদরা গায়ে মাখলেন কেন, নিজেদের উপর নিলেন কেন? এটা অনভিপ্রেত। রাজনীতিবিদ বন্ধুরা যদি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তাহলে জনগণের কাছে খারাপ ম্যাসেজ যাবে, আমরা এটা চাই না।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে সিলেট এমসি কলেজ মাঠে আনজুমানে খেদমতে কোরআর আয়োজিত তাফসীরুল কোরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে তিনি এ কথা বলেন।
ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, আমরা একটি সুন্দর সময়ে অবতীর্ণ। নতুন ভোরের বাংলাদেশে বাস করছি। এখনই আমাদের শুধরে নেওয়ার সময়। রাজনীতিবিদদের শপথ নিতে হবে আমরা আর চাাঁদাবজি করবো না, দখলবাজি করবো না, দুর্নীতি করবো না, টেন্ডারবাজি করবো না। নতুন প্রজন্মের একটা অংশ রাজনীতি করতে চায় না, কেন করতে চায় না-এটা আমাদের বুঝতে হবে, এর দায় আমাদের।
তিনি বলেন, যশোরের একটা অনুষ্ঠানে বলেছিলাম- একদল খেয়ে চলে গেছে, আরেক দল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে। আমি কোনো দলের নাম বলিনি-কথাটি আমি জেনারেলি বলেছিলাম। কোনো দল কোনো কথা বললো না। বাংলাদেশে ৪৮টি নিবন্ধিত দল আছে।
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে এ জনপ্রিয় বক্তা বলেন, আপনারা গায়ে মাখলেন কেন, নিজেদের উপর নিলেন কেন? এটা অনভিপ্রেত। রাজনীতিবিদ বন্ধুরা যদি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তাহলে জনগণের কাছে খারাপ ম্যাসেজ যাবে, আমরা এটা চাই না।
আজহারী বলেন, একজেস্টিং রাজনীতি আমরা চাই না, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বন্ধ করতে হবে। আমাদের শুধরে নেওয়ার এখনই সময়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। কাঁদা ছোড়াছুড়ির সময় এখন না।
তিনি বলেন, আমি একজন মুফাসসিরে কোরআন, আমি একজন আলেম, আমি একজন নাগরিক। আমি আমার সমস্যার কথা বলতেই পারি। আপনারাই তো বাক স্বাধীনতার কথা বলেন। নিজের মতামত ব্যক্ত করলে আপনারা যদি বলেন, পারলে দল করেন, দেখি কতটুকু পারেন-এটা কি হলো? বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছে আবু সাঈদ, মুগ্ধরা। তাদের রক্তদান বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, এ অনুষ্ঠান সফল করতে অনেক যুবক কাজ করেছেন। সিলেটের সমন্বয়করা অনেক স্মার্ট, তারা এদেশের সম্পদ। চব্বিশের ছাত্র আন্দোলনে যারা ফ্রন্ট লাইনার ছিলেন, তারাই আগামীর বাংলাদেশ। তাদের হাতেই নিরাপদ লাল সবুজের বাংলাদেশ। আমরা যেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মাথা উঁচু’ করে দাঁড়াতে পারি –আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।
ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, আমাদের নিয়ে যারা হিংসা করেন, সমালোচনা করেন আমরা তাদেরকেও ভালোবাসি। আমাদের স্লোগান হচ্ছে- হেরে যাবে ওদের হিংসা, জিতে যাবে আমাদের ভালোবাসা। এটাই ইসলামের সুমহান শিক্ষা।
তিনি বলেন, আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেট অঞ্চলের জন্য একটি নেয়ামত। এই সংগঠনটির সাথে শহীদ আল্লামা সাঈদী (র.) এর স্মৃতি জড়িত রয়েছে। সংগঠনটি শুধু দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে না, সামাজিক অঙ্গনে বিশাল ভূমিকা রেখে আসছে। মাহফিলে তিনি আল্লামা ফুলতলী (র.), আল্লামা গহরপুরী (র.), শায়খে কৌড়িয়া (র.) সহ সিলেটের প্রবীণ আলেমদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
এর আগে তাফসির মাহফিলে মুফতি আমির হামজা বলেন, বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টরা মানুষের কুরআনের কথা শোনা থেকে বিরত রেখেছে। শহীদরা আমাদের সম্পদ। তাদেরকে বিভক্ত করা ঠিক নয়। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ এর আগস্ট পর্যন্ত যারা অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়েছেন তারা শহীদ। এই তালিকায় আমাদের আল্লামা সাঈদী (র.) রয়েছেন। কারাগার থেকে আমার সামনে দিয়েই সুস্থ অবস্থায় আল্লামা সাঈদীকে বের করে আনা হয়েছিল। এদেশে সকল শহীদদের হত্যার বিচার হবে। আবার আল্লাহর আদালতেও এর বিচার হবে। এজন্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হতে হবে। কুরআনের সমাজ বিনির্মাণে কাজ করতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই কুরআন সুন্নাহর মূল শিক্ষা।
মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন ইউকে এন্ড ইউরোপের সেক্রেটারি মাওলানা নুরুল মতিন চৌধুরী, লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটের স্পীকার ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ ও বিশিষ্ট টিভি আলোচক ড. ফয়জুল হক।
শনিবার সকাল থেকে তৈরি হয় এমসি মাঠমুখী জনস্রোত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উপস্থিতি। বিকেলের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় এমসি কলেজ মাঠ। সন্ধ্যার পরপরই জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে মাঠের বাইরে আশপাশের এলাকায়। মাঠ ও মাঠের বাইরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ৮টি বড় পর্দায় মাহফিল প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
মাহফিল ঘিরে নগরীর এমসি কলেজ মাঠে বিশাল প্যান্ডেল ও আকর্ষণীয় স্টেজ নির্মাণ করা হয়। বিশেষ করে স্টেজে প্রবেশের রাস্তায় দুই স্তরে মেটাল ডিক্টেটর গেইট নির্মাণ করে পরীক্ষা করে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাবসহ সরকারি সকল সংস্থার সতর্ক অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পিডিবির পক্ষ থেকে মাহফিল এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যানজট এড়াতে নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশ সর্বাত্মক কাজ করেছে। মাহফিল পার্শ্ববর্তী এলাকায় ট্রাক-বাসসহ বড় যান চলাচল সীমিত করা হয়। মুসল্লীদের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয় মেডিকেল টিম। মাঠ ও মাঠের বাইরে শতাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। সিটি করপোরেশন থেকে পর্যাপ্ত লাইট, ওয়াসব্লক স্থাপন এবং পানি পান ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা হয়। প্রশাসনের পাশাপাশি আনজুমানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাড়ে ৩ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন।