কবি আমিনুল ইসলাম কবিতাভাবনায় বিশ্বচারী, মহাকালচারী ও জ্ঞানবিহারী। তার কবিতার বিষয়বৈচিত্র্য এত বেশি; মহাবিশ্বের সবকিছুই সেখানে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে চায়। কোন কোন বিষয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন; তা খুঁজে দেখলে পাল্টা প্রশ্ন আসে, কোন বিষয়ে কবিতা লেখেননি। এই জীবন, প্রকৃতি, পৃথিবী, মহাবিশ্ব, ঘটনাবলি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সাম্প্রদায়িক নিষ্ঠুরতা, আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ—সবকিছু তার কবিতায় ছাপ রেখেছে। খেলা থেকে বিজ্ঞান, প্রেম-অপ্রেম, মহানন্দা থেকে আইফেল টাওয়ার, নর্তকী থেকে লখিন্দর—কী নেই কবিতায়! জীবন-জীবিকার প্রাত্যহিক ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে তার কবিতায়। আধুনিক বোধ, কর্পোরেট জীবন, আমলাতন্ত্র, ডিজিটাল জীবন, ক্ষয়ে যাওয়া নৈতিকতা ও বোধ, প্রেম-অপ্রেম ইত্যাদি তার কবিতার বিষয়বস্তু। নদী-বরেন্দ্রভূমি-পাহাড়-বটেশ্বর—সবকিছুই তার কবিতার অংশ। কবি ও রবীন্দ্র-গবেষক আহমদ রফিক যুক্তিসংগতভাবেই বলেছেন: ‘প্রথম পাঠেই আমিনুল ইসলামের কবিতার যে বহিরঙ্গ-বৈশিষ্ট্য আকর্ষণ করেছে তা হল কবিতার বিষয়-বৈচিত্র্য।’
আমিনুল ইসলামের কবিতার শিরোনামগুলো তার বিষয়ভাবনার বৈচিত্র্যের প্রকাশক। ‘শয়তানের আদালতে আসামি’, ‘নারদ বাতাস’, ‘কুড়ালের হাসি’, ‘চীনাবাদামের খোসা’, ‘অপ্রস্ফুটিত দুপুর’, ‘অবগাহন’, ‘সুন্দরবনের সাক্ষাৎকার’, ‘গাছের পাতায় পাখির জিডি’, ‘বমি’, ‘কালোরাতের বেহালা’—এমন নামকরণের আরও ডজন ডজন কবিতা আছে তার। এমন বিচিত্রধর্মী কাব্যবিষয়ের পেছনে কাজ করেছে তাঁর প্রচুর দেশ-বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এবং ব্যাপক পঠন-পাঠন। একই সঙ্গে কাব্যভাষার ওপর তার নিবিড় ও সূক্ষ্ম দখল থাকার বিষয়টিও স্মরণযোগ্য। কবি ও গবেষক অধ্যাপক মোস্তফা তারিকুল আহসান বলেছেন, ‘কবিতার বিষয়বস্তু ও বিস্তৃত পরিসর লক্ষ করা যায় আমিনুলের কবিতায়। তাঁর অভিজ্ঞতার পর্যটন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞানসূত্র তাঁকে অজস্র সুযোগ দিয়েছে। এগারোটি কাব্যে তিনি সেই অভিজ্ঞতার নির্যাস তুলে এনেছেন। বিশেষ করে ইতিহাস ভূগোল প্রত্নতত্ত্বের নান্দনিক সুষমাকে তিনি মণ্ডিত করতে পেরেছেন অনেক জায়গায়। এই কবিকে আমরা দেখি সহজ বিষয়কে তিনি কাব্যোপম করে তুলেছেন। সেখানে ভাষাবোধ, ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা ও কাব্যের নন্দনের কথা মনে রেখেছেন বেশিরভাগ সময়। দীর্ঘ এসব কবিতায় তাঁর শক্তির নমুনা আমাদের চোখে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁর পরিমিতিবোধের অভাব পাঠককে পীড়া দেয়। এখানেও তাঁর চির রোমান্টিক হৃদয়ের ছাপ তিনি রেখে যান। এটা অবশ্য দোষের নয়, কারণ শুধু ইতিহাস তো কবিতা নয়, তাকে আমিত্বের রঙে রাঙিয়ে মন্ময় করে তোলার দায়িত্বও তার ওপর বর্তায়।’
আমিনুল ইসলাম বিষয়ভাবনায় বহুমুখী। তিনি প্রচলিত বিষয়গুলো নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছেন আবার পুরোনা বিষয়কে নতুন ভাবনার কবিতায় উপস্থাপন করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত নতুন নতুন উদ্ভাবন তাকে প্ররোচিত করেছে। তিনি লিখেছেন ‘মুঠোফোন প্রেম’, ‘নিউটনের সূত্র’, ‘অন্ধরাতের এক্স রে রিপোর্ট’, ‘নক্ষত্র পর্ষদ’, ‘ফোন-থেরাপি’, ‘ফোর কালার অধঃপতন’, ‘ব্রেকিং নিউজ’, ‘বিশ্বায়ন’ প্রভৃতি। যা তার হালনাগাদ জ্ঞানপিপাসা ও নিত্যচলমান কাব্য-অনুসন্ধানের পরিচয় বহন করে। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানে ও যুক্তির। প্রযুক্তি দখল করছে সবখানে। কবিতাতেও দখল করছে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ। যে কোনো বিষয় হতে পারে আধুনিক কবিতার প্রাণ। ট্রেন থেকে প্লেন, আকাশ-বাতাস, শিক্ষক-পতিতা-খেলা-খেলোয়াড়, গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র, হতাশা-আশাবাদ ইত্যাদি।
আমিনুল ইসলামের অবলোকনের দৃষ্টি নিজস্বতায় উজ্জ্বল ও প্রায় সর্বত্রগামী। তিনি কবিতার নিত্যনতুন জানালা আবিষ্কার করেছেন। সেই জানালায় চোখ মেলে প্রাতিস্বিক দৃষ্টির ক্যামেরায় জীবন ও জগতের নতুন ছবি তুলে এনেছেন। তার কবিতা সেই নতুন ছবির শাব্দিক চিত্র। মূলত নবভাবনায় সমৃদ্ধ বিষয়বৈচিত্র্যের কারণেই তার কবিতা পড়ে একঘেঁয়েমি বা ক্লান্তি আসে না। তার প্রতিটি কাব্যগ্রন্থে পাঠকের জন্য কিছু ভিন্ন স্বাদ ও সুখ আছে। যেমন মহাবিশ্ব ও জীবন নিয়ে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস এবং বিজ্ঞানের অবস্থান প্রায় বিপরীতধর্মী। বিজ্ঞানের আবিষ্কার মতে মহাবিশ্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে তার আপন নিয়মে। মহাকর্ষ, অভিকর্ষ, ভারকেন্দ্র, ত্বরণ, গতিসূত্র, কালোবামন, সাদাবামন, ব্ল্যাকহোল, সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ, ছায়াপথ, ইস্কেপ ভেলোসিটি প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক প্রপঞ্চ ও ধারণাগুলো বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। আমিনুল ইসলাম বিজ্ঞানের এসব তত্ত্ব ও ধারণাকে কবিতায় রূপান্তর করেছেন। সেসব কবিতা কোনো কোনোটি প্রেমের, কোনোটি সামাজিক ভাবনার। তার তেমন একটি কবিতার নাম ‘মহাবিশ্ব’। কবিতাটিতে নর-নারীর প্রেম এবং পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রসমূহ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এভাবে তিনি কবিজীবনের শুরুর থেকেই কবিতার নিত্যনতুন বাতায়ন খুলে চলেছেন।
কবি ও প্রাবন্ধিক রীনা তালুকদার ‘প্রেম-বিজ্ঞান-রাজনীতি: ত্রিভূজ ভাবনার কবি আমিনুল ইসলাম’ শীর্ষক প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন, ‘আমিনুল ইসলামের কিছু কিছু কবিতা পড়লে সাহিত্য ও ইতিহাস অর্ধেক পড়া হয়ে যায়। তার সম্প্রতি সময়ে রচিত কবিতার নান্দনিক আদলে বিজ্ঞানের ব্যবহার বেশি পরিলক্ষিত হয়। তার হাতে অদূর অতীতেও বিজ্ঞানের ব্যবহার কিছুটা দেখা গেছে। কিন্তু সেটি হয়তো স্বাভাবিক সুরে গাওয়া গানের মতোই। সচেতন বোধ থেকে বিজ্ঞান-কবিতা লেখাটা তার বর্তমানেই বেশি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।... দর্শন ও বিজ্ঞান অনুমান নির্ভর ভাবনা। আমিনুল ইসলাম দুটোকেই সমানভাবে ধারণ করেছেন কবিতায়। তার হাতে বর্তমানে বিজ্ঞান-কবিতার ভোবে লিখিত হচ্ছে, তাতে আশা রয়েছে ব্যাপক। তার বিজ্ঞানের কবিতায় নান্দনিকতা ফুটে উঠছে চমৎকারভাবে।’
আধুনিক কবিতার প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে জীবনজিজ্ঞাসা, মানবিকতা, প্রেম, একইসঙ্গে অমানিবক দিকগুলোও। আমিনুল ইসলাম মানুষ হিসেবে শেকড়প্রেমী, খুবই সংবেদনশীল, মানবতাবাদী, জীবনবাদী। পূর্বের অনেক কবির মতো তিনিও ইতিহাস-ঐতিহ্য আশ্রয়ী, প্রেমিকমনা এবং উদার মানবিকতার পক্ষাবলম্বনকারী। তবে এ ক্ষেত্রে তার কৃতিত্ব বা নিজস্বতা হচ্ছে—প্রায় সবকিছুকে প্রেমের মোড়কে কিংবা ভালোবাসার সৌরভ মিশিয়ে উপস্থাপন করা। তার জীবনদৃষ্টি হচ্ছে প্রেমময় জীবনদৃষ্টি। তার কবিদৃষ্টিও তাই। কবি আমিনুলও মনেপ্রাণে বিশ্বনাগরিক। তিনি বাংলার একটি ছোট ভূগোলের অধিবাসী বটে কিন্তু স্বপ্নে ও ভালোবাসায় বিশ্বচারী। কিন্তু তার কবিদৃষ্টি অনেকখানিই স্বতন্ত্র। তিনি সূর্য, চন্দ্র, বাতাস, সমুদ্র-জল প্রভৃতির মতো পৃথিবীকেও অবিভাজিত আকারে পেতে চেয়েছেন। তার ভালোবাসার পৃথিবী এবং বসবাসের পৃথিবী রাষ্ট্রীয় সীমান্তহীনতায় বিশ্বাসী। তার ‘ভালোবাসার আকাশে নাই কাঁটাতারের বেড়া’, ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’, ‘তুর্কি মেয়ের জন্য’, ‘অভিবাসী চিরদিন’, ‘অভিবাসী ভালোবাসা’, ‘ব্লু মাউন্টেনে দাঁড়িয়ে’, ‘বেহুলা বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘ভালোবাসা অথবা মহাবিশ্ব’, ‘নেফারতিতির সঙ্গে’, ‘নেলসন ম্যান্ডেলা: ভালোবাসার কবি’ প্রভৃতি কবিতায় তার বিশ্বনাগরিক মনের ছাপ ও ছবি স্পষ্ট রেখায় ফুটে উঠেছে।
তিনি নেফারতিতির আবক্ষ মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে নেফারতিতি আর মধুবালার মাঝে অভিন্নতা আবিষ্কার করেছেন; আধুনিক ইতালির পো নদীর তীরে বসে থেকে ইউরোপীয় মানবী সোফিয়া আর করতোয়া নদীবর্তী বঙ্গীয় কিংবদন্তিময় নারী বেহুলার মধ্যে অভিন্ন সম্পর্কের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন। রাতে নিবিড় অন্ধকারকে সাম্যবাদী বলে দেখেছেন। যেখানে ইউরোপের শ্বেতচর্ম নারী এবং আফ্রিকার নিগ্রো কন্যা, দলিত নারীর অধর আর ব্রাহ্মণ মেয়ের ঠোঁট মিশে যায়। তিনি ঘাসের বুকে কান দিয়ে শুনেছেন ঘাসের কাছে বাঘের চেয়ে হরিণ বেশি হিংস্র ও ঘাতক। জীবন ও জগৎকে এভাবে দেখার চোখ এবং কবিতায় উপস্থাপনের মেধা দুই সৃজনশলীতার নতুন নতুন বাতায়ন খুলে দিয়েছে। সংকীর্ণ আধুনিক জাতীয়বাদী রাষ্ট্রীয় বিভাজন যেভাবে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে ব্যথিত করেছিল; একইভাবে যন্ত্রণাবিদ্ধ করেছে আমিনুলকেও। তিনি লিখেছেন ‘খণ্ডাংশের সফলতায় উজ্জ্বল আমাদের চোখ’ শিরোনামের পরিহাসমিশ্রিত কবিতা। তিনি ‘ভালোবাসার আকাশে নাই কাঁটাতারের বেড়া’ কবিতায় বলিষ্ঠ স্বরে বলেছেন, ‘ভালোবাসা খোঁজে ঐক্যের আকাশ;/ তাই বিতর্কের ঝড়েও সে বন্ধ করে না আন্তঃভৌগোলিক/ ডানা। আমার ডানায় মিশে আছে তোমার ডানার ছন্দ আর বুকে যে উষ্ণতা—তারও কোনো জাত-ভূগোল নেই;/ যদি কান পাততে—আমার ফুসফুসের স্রোতেলা বাণী/ উম্মে কুলসুমের গান হয়ে মাতিয়ে দিতো তোমার রক্ত।’ তিনি কখনো কখনো তার বিশ্বনাগরিক মনকে মহাবিশ্ব নাগরিকতার অনুভবে ও উপলব্ধিতে মিলিয়েছেন। অন্ধকার রাতের মহা প্রেক্ষগৃহে বসে অন্ধকারের রীলে দেখেছেন চিরচলমান মহাজীবনের প্রামাণ্য মহাছবি। তার ‘অন্ধকার রাতের এক্স রে রিপোর্ট’ কবিতাটি নতুন দৃষ্টির নতুন সৃষ্টি। সকল প্রকার কৃত্রিম বিভাজন, কৃত্রিমভাবে বৈষম্য, অন্যায় যুদ্ধ ও হানাহানির বিরুদ্ধে প্রেমময় প্রতিবাদের নতুন ভাবনার ও নতুন ভাষার কবিতা। কবিতা আকারে এটি মহাকাব্য। কবিতাটির কিছুটা পাঠ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে, ‘যুদ্ধের জন্য দেশে দেশে সর্বোচ্চ বাজেটের/ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়,/ হৃদয়ের জন্য কোনো মন্ত্রণালয় নেই,/ প্রেমের জন্য নেই কোনো জোট কিংবা জাতিসংঘ।’
আমিনুল ইসলাম কোনো স্বঘোষিত নারীবাদী কবি নন। কিন্তু তাকে পীড়িত করেছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা পুরুষতন্ত্র ও তার নারীপীড়ন-নারীশোষণ। তিনি পুরুষতন্ত্রের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অস্ত্রগুলোতে চিহ্নিত করেছেন। যেসব ব্যবহৃত হয়ে আসছে নারীকে দমিয়ে রাখার ও শোষণের কাজে। তার কবিতায় যুগপৎ পুরুষতন্ত্রের নানা দিক এবং নারী স্বাধীনতা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নতুন নতুন উপমা, চিত্রকল্প সহযোগে এবং দেশি-বিদেশি শব্দ ও মিথের ব্যবহারের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি নারীভাবনার এমন এমন কোণে আলো ফেলেছেন, যা এতদিন অন্তত কবিতার ক্যানভাসে উঠে আসেনি। তিনি বহুকথিত ও বহু অপ-প্রচারিত ধর্মীয় মৌলবাদের পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রগতিশীল অঙ্গনে বিরাজমান পুরুষতন্ত্রের ধূর্ত ও চোরা দিকগুলোর ওপর টর্চ লাইটের মতো করে আলো ফেলেছেন। তার ‘মতিহারী ভালোবাসা’ কাব্যগ্রন্থের ‘মাফ করো নারী’ কবিতা থেকে একটি অংশ পাঠ করা যায়—
‘এরা মাঝেমাঝে ফাঁকা মাঠে হইচই করে
নবায়ন করে নেয় নিজেদের ধান্দাবাজি অস্তিত্ব
কিন্তু যখন কোনো নারী ধর্ষিত হয়
‘তাদের লোক’ দ্বারা, তারা চুপ থাকে;
যখন তাদের গোষ্ঠীবন্ধুরা ছলে বলে কৌশলে
নারীকে বেচে দেয়
তাদেরই হাতে স্থাপিত যৌনতার হাটে,
তারা ঘুমিয়ে থাকে মুখ নিয়ে উলটো দিকে।’
অধরে, কোমরে, বক্ষে, নিতম্বে কিংবা চোখে নয়; আমিনুল ইসলাম নারীর সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন তার মেধায়, ব্যক্তিত্বে, প্রতিষ্ঠায় ও সৃজনশীলতায়। তিনি পণ্যসংস্কৃতির সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্প ‘সুন্দরী’ প্রতিযোগিতাকে কটাক্ষ করে রচেছেন পরিহাসধর্মী কবিতা ‘সখিনার সুন্দরী হওয়া’। তিনি শারীরিক সৌন্দর্যচর্চায় মেধা, সময় ও অর্থ ব্যয়কারী শিক্ষিত নারীর উদ্দেশ্যে বলেছেন:
‘তোমার ব্লাউজ বদলানোর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ—
ওয়াল্টনের ড্রেসিং টেবিল না জানুক,
এটাই হিমালয়সত্য যে—
প্রস্ফুটিত প্রতিভার মতো সুন্দর কিছুই নেই।’
(দ্বিধার দরোজায় দাঁড়িয়ে)
কবি আমিনুল ইসলামের জেন্ডার ভাবনা এবং সেসব ভাবনাকে কবিতায় রূপায়ন নিঃসন্দেহে কবিতার নতুন জানালা খুলে দেওয়া বলে গণ্য হতে পারে। এ কথা কবিতার বিষয় এবং কবিতার নির্মাণ কৌশল উভয় বিবেচনাতেই সত্য। গবেষক-লেখক অধ্যাপক নাজিয়া ফেরদৌস ‘আমিনুল ইসলামের কবিতা: ভিন্ন ধারায় সত্যানুসন্ধান’ গ্রন্থে এমন অভিমত জ্ঞাপন করেছেন: ‘কাব্যে, উপন্যাসে নারী হয়েছে বিনোদনের কেন্দ্র। কখনো সাহিত্যিকগণ তাদের প্রতি দেখিয়েছেন সহমর্মিতা কখনো-বা তাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন বিশ্বের সম্মুখে। কিন্তু যেভাবেই হোক প্রকৃত নারীসত্তার রূপ উন্মোচনে সচেষ্ট নন প্রায় কেউই। নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করেই সমাজ খুশি থাকতে চায়। তাদের দেহলালিত্য হয় বিনোদনের খোরাক। হারিয়ে যায় নারীর প্রকৃত স্বর। এই বিষয়গুলোকেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে মনোগত করেছেন কবি আমিনুল ইসলাম। তার কবিতায় নারীর উপস্থাপন ব্যতিক্রমী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। তিনি প্রচলিত সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারীকে মূল্যায়ন করেননি। ভোগ্যপণ্য হিসেবে নয়, স্বতন্ত্র একক সত্তা হিসেবে নারীর প্রকাশ ঘটেছে তার কবিতায়। তিনি তুলে ধরেছেন নারীর প্রকৃত সত্তার পরিচয়।’
বহুমাত্রিক ভাবনায় অভ্যস্ত কবি আমিনুল ইসলামের বিচিত্র ধরনের কবিতার মধ্যে নদীভাবনার কবিতাগুলো সংখ্যার বিচারে এবং শৈল্পিক সমৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ‘কবিতাসমগ্র’র ভূমিকায় লিখেছেন, পদ্মা-পাঙ্গাশমারী-পাগলা-মহানন্দার অববাহিকায় চর এলাকায় এক কৃষক পরিবারে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তিনি নিজেকে ‘জলের সন্তান’ বলে অভিহিত করেছেন। কোনো জন্মে ‘জলদাস’ ছিলেন কি না সেই প্রিয় সম্ভাবনার কথা বলেছেন। বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের নামে নদী আছে। তার অনেক কবিতার শিরোনামে নদীর নাম অথবা নদীর প্রসঙ্গ এসেছে। তাছাড়া বহু কবিতায় নদীর দৃশ্য এসেছে। তার এসব কবিতার একটিও নদীর প্রাকৃতিক ছবি অর্থাৎ জল, স্রোত, ঢেউ, ভাঙন, নৌকা, সাঁতার ইত্যাদি নিয়ে নয়। তিনি নদীর আয়নায় কখনো প্রেম, কখনো অতীত, কখনো রাজনীতি, কখনো জীবনের অদেখা কোনো দিককে প্রতিফলিত করেছেন। তার নদী বিষয়ক কবিতাগুলো একই সঙ্গে মহাকালের আয়না এবং যাপিত জীবনের এমবোস জলছবি। ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মিথ ও কল্পনা, সুর ও বাণী একাকার হয়েছে নদীর স্রোত-স্রোত ঢেউ-ঢেউ উঠোনে। এই অনন্যসাধারণ নদীভাবনা ও নদীভাবনার কবিতায়ন চেনা কবিতা-আকাশের একটি অপঠিত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অধিকন্তু নদীভাবনার অনন্যতার ছবি উপস্থাপিত হয়েছে অনন্য কাব্যভাষায়। কবিতাগুলোতে তাঁর কবিমানস এবং কবিতাশৈলী দুই-ই অনেকখানি স্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। তার নদীভাবনার অধিকাংশ কবিতার ভাষা স্রোতের মতো সাবলীল, গভীর ও অনুদ্ধত কুলকুলে হৃদয়ঘেঁষা। এখানে একটু পাঠ করা যাক:
‘এ নদীর কোনো নাম ছিল নাকো; তথাপি নানাজনে
নানা নামে ডেকেছে। যে-আমগাছের তলায় আমার
নাড়ি পোতা, শৈশবের এ নদী সেখানে সঙ্গোপনে
সন্ধ্যাজল দিয়ে আসে; আমের পাতা শিশুর গালের
মতন হয়ে এলে জলের পাঠ নিতে ব্রিজের ওপর
দাঁড়িয়ে আছি; বাতাসে মেলে দেওয়া-আরব্য—
উপন্যাসের পাতার মতো গড়িয়ে চলেছে ঢেউয়ের
পর ঢেউ; পুরো পাঠ নেয়ার আগেই উলটে যায় পাতা।’
পৃথিবীর প্রায় সকল নগরসভ্যতা নদীতীরবর্তী ভূগোলে গড়ে উঠেছিল। পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোও নদীর তীরে গড়ে ওঠা ব্যবসায় ও বসবাসের জন্য গড়ে ওঠা জনপদ। এসবই মূলত ইতিহাসের অংশ, নগরসভ্যতার প্রাচীন স্মারক। নদী মানে সমষ্টিগত জীবনের ঐতিহাসিক আয়না। আমিনুল ইসলামের নদীভাবনার কবিতাগুলো মহাকাল ও মহাজীবনকে প্রতিফলিত করে জলে মাজা শব্দের আয়নায়। এটা তার নদীমাতৃক কবিমানস ও স্রোতের পাঠশালায় অর্জিত শিল্পজ্ঞানের প্রমাণবাহী। তিনি নদীর জলস্রোতে কান পেতে শুনেছেন জল ও হাওয়ার যৌথতায় আয়োজিত মাহফিলে বেজে চলা অনার্যদিনের সুর ও বাণী—সকালের ভৈরবী, বিকালের বৃন্দাবনী সারং, সন্ধ্যার পূরবী এবং তিরধনুক হাতে তীরে বসে থাকা যুবক-যুবতীর অন্তরঙ্গ অনুরাগের ডুয়েট। তার নদীবিষয়ক কবিতা স্রোতের মতো সাবলীল এবং সহজিয়া লোকজ সুরের মতো মোলায়েম ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ কিন্তু সৃষ্টি হিসেবে সবখানিই আধুনিক মননশীল প্রাণের রুচির অনুসারী। এটি সন্দেহাতীতভাবেই তার সৃজনশীল প্রাতিস্বিকতা ও উদ্ভাবনী মানসিকতার অনুকূলে কথা বলে।
আমিনুল ইসলাম নিজেকে মূলত প্রেমের কবি বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। তার কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন শতাধিক কবি ও কবিতা বোদ্ধা। তাদের অনেকেই তার কাব্যভাবনার নিউক্লিয়াস হিসেবে প্রেমকে চিহ্নিত করেছেন। প্রখ্যাত গবেষক-সাহিত্য সমালোচক মানবর্দ্ধন পাল বলেছেন, ‘কবি আমিনুল ইসলামের কাব্যসাধনার নিউক্লিয়াসেও আছে প্রেমের প্রোটোপ্লাজম। প্রেম সত্তাই তাঁর সাধনার প্রাণপঙ্ক।’ সাহিত্য সমালোচক বজলুল করিম বাহার বলেছেন, ‘কবি আমিনুল ইসলাম মানবিক এসব ইমোশনাল প্যাথোস এর প্রতিমুখে অভীষ্ট লাভের উপশম হিসেবে এনেছেন প্রেমের মনোধর্মিতা। উপলব্ধির উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলে এ ধরনের আঙ্গিক ক্লিশে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু বৈচিত্র্যসন্ধানী ভাবনা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির মননশীল উপাদান দিয়ে তিনি গড়েছেন কবিতার কাঠামো। ...তার ব্যবহৃত শব্দ, নিসর্গ, পরিভাষা, তথ্যবিশ্বের উপাদান, লোকাচার, সম্পর্ক সব দিয়েই তৈরি হয় যে কবিতা—তার নতুন মান ও ব্যবহারোপোযোগিতা নিয়ে তখন আমাদের যথেষ্ট কৌতূহলী করে তোলে।’ মানবর্দ্ধন পাল এবং বজলুল করিম বাহার উভয়েই আমিনুল ইসলামের কবিমানসের কেন্দ্রটিকে প্রেম হিসেবে শনাক্ত করেছেন।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আমিনুল ইসলামের প্রেমভাবনা ও প্রেমভাবনার কবিতা উভয়ই কবিতার জগৎকে সম্প্রসাতি করেছে এবং প্রেমের কবিতার ভাষায় একধরনের অভিনব মাত্রা যোগ করেছে। এতে কবিতা বাড়তি সৌন্দর্য, সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা অর্জন করেছে। তার কবিতার নামকরণগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনাযোগ্য। তার কবিতা শুধু নামকরণের জন্যই পাঠককে আকৃষ্ট করে এবং করবে। তার প্রেমের কবিতাভাবনায় এবং প্রকাশশৈলীতে বিচিত্রধর্মী ও বহুব্যঞ্জনাময়। সেগুলো পাঠে পাঠক প্রেমের আনন্দ-বেদনার অনুভূতির পাশাপাশি বিস্তারিত জীবন ও জগৎ, কাল ও মহাকাল সম্পর্কেও ভাবনার ও ভালোবাসার খোরাক পান। তার প্রেমভাবনার কবিতাই সংখ্যার দিক থেকে সর্বাধিক। একটি কবিতা থেকে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে; যেখানে নর-নারীর প্রেমের ইশতেহারের মাঝে সাম্রাজ্যবাদ-উপনিবেশবাদ-অর্থনৈতিক শোষণ-যুদ্ধব্যবসায় বিরোধী প্রেমময় পৃথিবীর পক্ষে সুকৌশলে স্লোগান-ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে:
‘আমাদের নেই পেট্রিয়টের গোলা
বি-ফিফটি-টু লাগবে না কোনোকাজে
অধরে অধরে আমরা রচিলে মিনার
টুইন টাওয়ারও নুয়ে আসে ঘনলাজে।
(আমাদের ভালোবাসার দিন)
আমিনুল ইসলাম তার ‘কবিতাসমগ্র’ ভূমিকায় নিজেই বলেছেন, একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়ের আসল পরীক্ষা টেস্ট ম্যাচে আর একজন কবির প্রকৃত পরীক্ষা প্রেমের কবিতায়। আমিনুল ইসলাম প্রেমের কবিতার পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং তার অনন্যতা স্বীকৃত হয়েছে। প্রেমের কবিতার মাধ্যমে কবিতার নতুন জানালা আবিষ্কারের বিষয়টি চমৎকার বাক্য সহযোগে তুলে ধরেছেন গবেষক-সমালোচক সরকার আবদুল মান্নান। তিনি লিখেছেন: ‘আমিনুল ইসলাম মোহন প্রেমের এই প্রথাগত আখ্যান রচনা করেন না। সংঘাতময় জীবনের বিচিত্র ক্ষতকে তিনি তুলে ধরেন জীবন-প্রেমিকের বিস্ময়কর অন্তর্লোক থেকে। ফলে নারী নয়, পুরুষ নয়, আটপৌরে প্রতিদিন নয়—বরং এ সবকিছু নিয়েই সৃষ্টি হয় তাঁর প্রেমের কবিতার প্রবল জীবন-তৃষ্ণা। প্রচণ্ড এক সংবেদনার মধ্যে কবি আমিনুল ইসলামের কবিতা প্রাণময় হয়ে ওঠে। ...অধিকন্তু তাঁর প্রেমের কবিতার সঙ্গে এত সব জাগতিক ভাবনা জড়িয়ে থাকে যে নিখাদ প্রেমবোধ অনেক সময়ই ব্যাহত হয়। প্রেমের কবিতার এই ভিন্নতাই আমিনুল ইসলামের কবিতার স্বাতন্ত্র্য।’
আমিনুল ইসলামের কবিমানস এবং কাব্যশৈলীকে বুঝতে হলে তার অর্থনৈতিক ভাবনার কবিতাগুলোও নিবিড় ভাবে পাঠ করা প্রয়োজন। আমিনুল ইসলাম সরাসরি দারিদ্র্য অথবা অর্থনীতি শব্দটি শিরোনাম করে কোনো কবিতা রচনা করেছেন বলে চোখে পড়ে না। কিন্তু তার প্রচুর কবিতার ভাববিষয় আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ, পণ্যসংস্কৃতি, যুদ্ধ-অর্থনীতি, পুঁজিবাদী শোষণ প্রভৃতি। অর্থনৈতিক বিষয়াদি মূলত নীরস এবং কবিতার শৈল্পিক সৌকর্যের পক্ষে অনুকূল নয় বললেই চলে। কিন্তু আমিনুল ইসলাম কবিতার শরীরপ্রাণে প্রেমরসঘন চিত্রকল্প কিংবা প্রণয়সংশ্লিষ্ট রোমান্টিক উপমা যুক্ত করে শৈল্পিক সৌন্দর্য ও নান্দনিক রস সৃষ্টি করেছেন। এ কাজে তার সাফল্য ঈর্ষণীয়। বহুদিন অর্থনৈতিক মেধা ও কৌশল দ্বারা পৃথিবী চালিত ও শাসিত হচ্ছে। পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, মিশ্র অর্থনীতি এ সবকিছুই অর্থনৈতিক বিবেচনার সৃষ্টি। সমাজতন্ত্রের পতনের পর বিশ্ব প্রায় একমুখী। পুঁজিবাদই একমাত্র নিয়ামক শক্তি। অর্থনীতির বিবেচনাই পৃথিবীকে উন্নত বিশ্ব, তৃতীয় বিশ্ব, উন্নয়নশীল বিশ্ব ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত করেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, গ্যাট, জলবায়ু সম্মেলন—এসবই চরম পুঁজিবাদী অর্থনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমিনুল ইসলামের বহু কবিতায় পুঁজিবাদী শোষণ, অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ ও পণ্যসংস্কৃতি বিরোধী মনোভাব কখনো স্পষ্টভাবে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমবোস ছবির মতো ফুটে উঠেছে। দুটি উদাহরণ:
ক.
ফলে তো আমার গোপন সর্বনাশের ক্ষান্তি নেই;
ও আমার ভালোবাসার বিশ্বব্যাংক,
উষ্ণখনির লোভে আর কত লোন চাপাবে ভাই!
খ.
কালো ঋণে দেউলিয়া ব্যাংকের মতো
আমি হারিয়ে ফেলেছি ভালোবাসবার পুঁজি;
দুঃখের প্রহরীরা পাহারা দিচ্ছে লুণ্ঠিত ভল্টের হাহাকার।
উদ্ধৃতি দুটি তার দুটি প্রেমের কবিতা থেকে নেওয়া। ঠাট্টাচ্ছলে জব্দ করা প্রবাদের পথ ধরে তিনি প্রেমের পুঁজিবাদী শোষণ ও অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তিমূলে ধাক্কা দিয়েছেন। ‘গরিবের ঘামে রোদ লেগে চিকচিক করছে ভ্যাট’, ‘খেলাপী সংস্কৃতির সাফল্যে উদ্বিগ্ন সুন্দরবনের হরিণ হরিণী’, ‘লোভের টেবিলে উচ্ছল চাহিদা ও জোগানের ঢেউঢেউ যুবতিরেখা!’, ‘সে-উৎসবে ক্যালকুলেটর হাতে/ মুক্তবাজার দিন, অর্থনীতির গন্ধ মেখে বিশ্বায়িত রাত’, ‘সময়ের সোনালী ব্যাংক নেই’, ‘বেনিয়া-মনের সাথে দোল খায় প্রেমের মিনার।’ অর্থনীতির গন্ধযুক্ত এরকম প্রচুর সংখ্যক পঙক্তির রচয়িতা আমিনুল ইসলাম। সত্যের খাতিরে এ কথা স্বীকার করতেই হয়, অর্থনীতির নানাবিধ অনুষঙ্গের শিল্পসম্মত ও নান্দনিক ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ কবিতা আধুনিক কবিতার অধ্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আমিনুল ইসলাম একজন অনন্য সৃজন-মানসের অধিকারী কবি। তিনি অর্জিত জীবন থেকে নেওয়া বহুকৌণিক জ্ঞানে জ্ঞানী এবং সাহসী। জীবন ও জগৎকে নিজের মতো করে দেখার প্রাতিস্বিক দৃষ্টি, ব্যাপক পঠন-পাঠন, কবিতার ইতিহাস ও আঙ্গিক সম্পর্কে নিবিড় ধারণা, উদ্ভাবনী মন, ঝুঁকি নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও সাহস ইত্যাদি গুণ তাকে কবিতার নতুন জানালার খোঁজ নেওয়া এবং নব দিগন্ত উন্মোচনের পথ করে দিয়েছে। তিনি পুরোনো বিষয়ের শরীরে সৌন্দর্য যোগ করেছেন; তার প্রাণে বাড়তি প্রাণশক্তি ও উচ্ছলতা দান করেছেন। এ ক্ষেত্রে তার সাহস, প্রচেষ্টা ও সাফল্য অন্যদের প্ররোচনা জোগাবে এবং পথ দেখাবে।
এসইউ/জেআইএম