এক বছর পেরিয়ে গেছে, এখনো বিচার মেলেনি। গত বছরের ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ওই চিকিৎসকের পরিবার বিচার না পাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর পদত্যাগ করা উচিত এমন দাবি তুলে শনিবার রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতরের সামনে মিছিল বা ‘নবান্ন অভিযানের’ ডাক দেয়।
কিন্তু নবান্ন অভিযানের সময় শুধু পুলিশি বাধা নয় বরং ওই চিকিৎসকের বাবা-মাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, এক বছর আগে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছিল। আজ আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল রাস্তায়। শনিবার মিছিলের শুরু থেকেই পুলিশ তাদের বার বার বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তারা।
গত বছরের ৯ আগষ্ট কলকাতার প্রথম সারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ওই নারী চিকিৎসকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর কাছে। সিবিআই তদন্ত করে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে চার্জশিট দেন। আদালত তাকে আজীবন কারাবাসের নির্দেশ দেন।
কিন্তু নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই ধরনের ঘটনা সঞ্জয়ের পক্ষে একা ঘটানো সম্ভব নয় এর পেছনে আরো বড় কারো হাত রয়েছে। এরপর থেকেই কলকাতায় ন্যায়বিচার দাবিতে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন চলছে।
দেখতে দেখতে এক বছর কেটে যায়। কিন্তু তদন্তের কোনো অগ্রগতি না দেখে নির্যাতিতার বাবা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিবালয় নবান্ন অভিযানের ডাক দেন। এই অভিযান সফল করার জন্য নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গের সব রাজনৈতিক দলকে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান।
এরপরই পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে আমি নিজে এই অভিযানে উপস্থিত থাকবো এবং এখানে কোনো রাজনৈতিক পতাকা থাকবে না।
এদিকে শুভেন্দু অধিকারী রাজপথে নামতেই বাধা দেয় কলকাতা পুলিশ। রেসকোর্সের পাশ দিয়ে এগোনোর সময় নির্যাতিতার মা-বাবা কে আটকে দেয় পুলিশ। এরপর পুলিশকে এড়িয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং নির্যাতিতার বাবা-মা মিছিল করে নবান্নর দিকে এগোতে থাকলে শেষে বাধা পেয়ে পার্ক স্ট্রিটে অবস্থান-বিক্ষোভে বসে পড়েন তারা।
নবান্ন অভিযান আটকাতে ত্রি-স্তরীয় ব্যারিকেড ব্যবস্থা করেছিল কলকাতা পুলিশ। আন্দোলনকারীরা সেই ব্যারিকে টপকে এগিয়ে যাওয়ার ক্রমাগত চেষ্টা করে। এরপর আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ লাঠিচার্জ করে। অভিযোগ উঠেছে, সে সময় লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন নির্যাতিতার মা। তার মাথায় আঘাত লাগে। এছাড়াও আহত হন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাবেক সংসদ সদস্য অর্জুন সিং, বিজেপি নেতা প্রিয়াংঙ্কু পান্ডেসহ একাধিক আন্দোলনকারী।
আহত অবস্থায় নির্যাতিতার বাবা-মাকে বাইপাসের কাছে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের ৪৮ ঘন্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তারপরেই জানা যাবে তাদের শারীরিক অবস্থা।
ডিডি/টিটিএন