আল্লাহ তাআলার কাছে নবী মুসার (আ.) ৭ প্রশ্ন

7 hours ago 2

মওলবি আশরাফ

আল্লাহর নবী হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার বিরল সম্মান পেয়েছিলেন। আল্লাহর সঙ্গে তার কথোপকথনের বিবরণ এসেছে পবিত্র কোরআনে। এ ছাড়া কিছু হাদিসেও আল্লাহ সঙ্গে তার কথোপকথনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। একটি সহিহ হাদিসে তার ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে হওয়া একটি গভীর অর্থবহ সংলাপ বর্ণিত হয়েছে—যেখানে মুসা (আ.) আল্লাহ তাআলাকে ৭টি প্রশ্ন করেন।

তিনি প্রথমে জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার রব, আপনার কোন বান্দা আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে?

আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার যে বান্দা সব সময় আমাকে স্মরণে রাখে, কখনও ভুলে যায় না।

এর দ্বারা উদ্দেশ্য এমন ব্যক্তি, যিনি প্রতিটি মুহূর্ত মনে রাখেন যে আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন। আর এই ভাবনা থেকে তিনি কোনো গোনাহ করেন না। 

মুসা (আ.) জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার রব, আপনার কোন বান্দা হেদায়াতপ্রাপ্ত?

আল্লাহ তাআলা বলেন, যে হেদায়াতের পথ অনুসরণ করে।

মানুষের জন্য সব সময় হেদায়াতের পথ অনুসরণ জরুরি। এমন ভাবা যাবে না যে আমি তো হেদায়াত পেয়ে গেছি। কারণ আল্লাহ তাআলা যে কাউকে হেদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেন।

মুসা (আ.) জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার রব, আপনার কোন বান্দা সর্বোত্তম বিচারক?

আল্লাহ তাআলা বলেন, যে অন্যের জন্য যে বিচার করে, নিজের জন্য ঠিক সেই বিচারই করে।

অধিকাংশ মানুষই গোটা দুনিয়াকে নিজের জায়গা থেকে চিন্তা করে, নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় এবং নিজের জন্য ১৬ আনা রাখলেও অন্যের জন্য ১ আনা ছাড়তেও রাজি হয় না। আল্লাহ তাআলার এই কথা থেকে বোঝা যায়, অন্যের জন্য তাই পছন্দ করা উচিত যা মানুষ নিজের জন্য পছন্দ করে।

মুসা (আ.) জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার রব, আপনার কোন বান্দা বড় জ্ঞানী?

আল্লাহ তাআলা বলেন, যে জ্ঞান অর্জন করে কখনোই পরিতৃপ্ত হয় না এবং মানুষের জ্ঞানকে নিজের জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করে।

অর্থাৎ মানুষের কাছ থেকে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শুনে নিজের জ্ঞানকে বৃদ্ধি করতে থাকে।

মুসা (আ.) জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার রব, আপনার কোন বান্দা বেশি মর্যাদাবান?

আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ক্ষমতাবান হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমাশীল হয়।

মানুষ ক্ষমতাবান হলে তার মধ্যে দয়ার অনুভূতি ধীরে ধীরে কমে আসে। সেই সময়ও যদি কেউ ক্ষমাশীলতার গুণ ধরে রাখে, তখণ প্রমাণিত হয় সে সত্যিই অনেক মর্যাদাবান।

মুসা (আ.)  জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার রব, আপনার কোন বান্দা সবচেয়ে ধনী?

আল্লাহ তাআলা বলেন, যে বান্দাকে যা দেওয়া হয়েছে তা নিয়েই সে সন্তুষ্ট আছে।’

এর মানে সন্তুষ্টিই ধনাঢ্যতা, আর যদি নিজের অবস্থান নিয়ে কেউ অসন্তুষ্ট থাকে, কোটিপতি হলেও সে গরিব থেকে যায়।

 মুসা (আ.) জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার রব, আপনার কোন বান্দা সবচেয়ে গরিব?’

আল্লাহ তাআলা বলেন, কৃপণ ব্যক্তি।

এ  সম্পর্কে আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, দুনিয়াতে যার অনেক ধনসম্পদ দেখা যায়, সে আসলে ধনী নয়। প্রকৃত ধনী সেই ব্যক্তি—যার হৃদয় ধনী। আল্লাহ যখন কারও কল্যাণ চান, তার হৃদয়কে অভাবমুক্ত করে দেন। আর যখন কারও অকল্যাণ চান, তখন তার দুই চোখের মাঝে গরিবি ঢেলে দেন।

অর্থাৎ তার লোভ অনেক বেড়ে যায়। সেই লোক তখন চারদিকে শুধু ‘এটা নাই, ওটা নাই’ দেখতে থাকে। যতই ধনসম্পদের মালিক হোক না কেন, সে শুধু নিজের মধ্যে অভাবই দেখতে থাকে।

সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬২১৭, সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহাহ: ৩৩৫০

ওএফএফ

Read Entire Article