আল্লাহর পক্ষ থেকে নবিজিকে (সা.) দেওয়া দুটি নুর

7 hours ago 4

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন জিবরাইল (আ.) নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে বসেছিলেন। সে সময় তিনি ওপর দিক থেকে দরজা খোলার একটা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাথা উঠিয়ে বললেন, এটি আসমানের একটি দরজা। আজই এটি প্রথম খোলা হলো। এ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে এলেন। আজকের আগে আর কখনো তিনি পৃথিবীতে আসেননি। তিনি সালাম দিয়ে বললেন, আপনি আপনাকে দেওয়া দুটি নুর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার আগে আর কোনো নবিকে তা দেওয়া হয়নি। আর ওই দুটি নুর হলো ফাতিহাতুল কিতাব বা সুরা ফাতেহা এবং সুরা বাকারার শেষাংশ বা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। এর যে কোনো হরফ আপনি পড়বেন তার প্রতিদান তা আপনাকে দেওয়া হবে। (সহিহ মুসলিম: ১৭৬২)

এই দুটি নুর অর্থাৎ সুরা ফাতেহা ও সুরা বাকার শেষাংশের (শেষ দুই আয়াত) ফজিলত আরও বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সুরা ফাতেহার ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, একদিন রাসুল (সা.) তার সাহাবি আবু সাইদ আল মুআল্লাকে বললেন, আমি তোমাকে জানাচ্ছি, কোরআনের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদাপূর্ণ সুরা কোনটি; সেটি হলো ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বা সুরা আল ফাতেহা। এটিই সাতটি বহুল পঠিত আয়াত ও মহান কোরআন যা আমাকে দেওয়া হয়েছে। (সহিহ বুখারি: ৪৭০৩) আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, তওরাত, ইনজিল, জাবুর এবং কোরআনেও এর মত কোন সুরা নাজিল হয়নি। (সুনান তিরমিজি: ২৮৭৫)

সুরা বাকারার শেষাংশের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পড়বে তার জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে। (সহিহ বুখারি: ৫০০৯) অর্থাৎ রাতের আমল হিসেবে এবং সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ দুটি আয়াত পাঠ করাই যথেষ্ট হয়।

আরেকটি হাদিসে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন সৃষ্টির দুহাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন। সে কিতাব থেকে দুটি আয়াত নাজিল করে তিনি সুরা বাকারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দুটি আয়াত তেলাওয়াত করা হয়; শয়তান ওই ঘরের কাছে আসতে পারে না। (সুনানে তিরমিজি: ২৮৮২)

অর্থ ও উচ্চারণসহ সুরা ফাতেহা

১.
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অর্থ: শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

২.
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন
অর্থ: যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। যিনি সব সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

৩.
الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: আররাহমানির রাহিম
অর্থ: যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।

৪.
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
উচ্চারণ: মালিকি ইয়াওমিদ দিন
অর্থ: যিনি বিচার দিনের মালিক।

৫.
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
উচ্চারণ: ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য চাই।

৬.
اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ
উচ্চারণ: ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম
অর্থ: আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,

৭.
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
উচ্চারণ: সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম গায়রিল মাগজুবি আলাইহিম ওয়ালায যাল্লিন
অর্থ: সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

অর্থ ও উচ্চারণসহ সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত

২৮৫.
اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ

উচ্চারণ: আমানার রাসুলু বিমা উংঝিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহ। লা-নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহ। ওয়া কালু সামি’না ওয়া আত্বা’না গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।

অর্থ: রাসুল তার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসুলগণের ওপর, আমরা তাঁর রাসুলগণের মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।

২৮৬.
لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ

উচ্চারণ: লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন-নাসীনা আও আখত্ব’না রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরাং কামা হামালতাহু আলাল্লাজীনা মিং কাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়া’ফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।

অর্থ: আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে ভাল যা করেছে তার সওয়াব পাবে এবং মন্দ কর্মের জন্য সে নিজেই নিগ্রহ ভোগ করবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের মার্জনা করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।

ওএফএফ/এএসএম

Read Entire Article