আশুলিয়ায় ইয়াবা দুলালের আতঙ্কে বহু পরিবার ঘরছাড়া

2 hours ago 4
সাভারের আশুলিয়ার পবনারটেক এলাকা—যেখানে বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠেছে মাদক সাম্রাজ্য। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুলাল মিয়া ওরফে ইয়াবা দুলাল নামের এক মাদককারবারি তার বাড়িকে পরিণত করেছেন ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদকের নিরাপদ আড্ডাখানায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদক কেনাবেচা। প্রতিবাদ করলে শুরু হয় ভয়ভীতি, হামলা ও মিথ্যা মামলা। ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বহু পরিবার আজ ঘরছাড়া। স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে পবনারটেক এলাকায় দুলালের বাড়ি ও আশপাশকে মাদকের নিরাপদ আড্ডাখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই বাড়িতে মাদক বিক্রি চলমান; প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় ভয়-ভীতি ও হুমকি—অস্ত্র উঁচিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় এলাকার মানুষকে ভয়ভীতিতে রাখেন তিনি। ভুক্তভোগী তালিকায় রয়েছেন মো. আমিনুল ইসলাম (পিয়ার আলী, ৫৫), মো. দেলোয়ার হোসেন মিন্টু (৩৫), মো. মিলটন (৩২), মো. মিজান (৩৫), মো. জিম (৩৩), মো. নাসির (৩৫), মো. আলেকুজ্জামান (৫০), মো. মুরাদ (৪৮), মো. সজিব (৪০) সহ অনেকে। তাদের ভাষ্য—শুধু মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় নানা রকম সাজানো ও বানোয়াট মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে; পুলিশের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে দুলাল দীর্ঘদিন ধরে দাপট দেখাচ্ছেন। ভুক্তভোগী মো. দেলোয়ার হোসেন মিন্টু কালবেলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন দুলালের বাড়িতেই মাদকের লেনদেন হয়। প্রতিবাদ করলে অস্ত্র দেখায়, জীবন থাকা কঠিন। আমি শুধু মাদকবিরোধী প্রতিবাদ করেছি—তারপর থেকেই আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। দুলালের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকিও পেতে হচ্ছে। আমাদের চাই মাদক মুক্তি, কিন্তু প্রতিবাদ করলেই দমন করা হচ্ছে।’ নজরুল ইসলাম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমরা কোনো অপরাধ করিনি। কেবল মাদক বন্ধে কথা বলায় দুলাল আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে। রাস্তায় দেখলেই অস্ত্র বের করে হুমকি দেয়—মৃত্যুভয়ে দিন কাটছে।’  সজিব নামে এক ভুক্তভোগী কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা মাদককে না বলি, কারণ মাদক একটি সমাজ ধ্বংসকারী শক্তি। মাদকের কারণে আমাদের যুবসমাজ বিপথে যাচ্ছে, পরিবার ভাঙছে, অপরাধ বাড়ছে। তাই আমরা চাই মাদকের শেকড় উপড়ে ফেলা হোক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে, প্রতিবাদ করে—তাদের অনেক সময় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। আমি নিজে শুধু মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় দুলালের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মিথ্যা মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে জেল পর্যন্ত খাটতে হয়েছে। আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই। মাদকবিরোধী আন্দোলনকে দমন করা হলে সমাজ আরও বিপদের দিকে যাবে। আমাদের দাবি, প্রশাসন যেন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে, নিরীহ মানুষকে হয়রানি না করে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।’ আশুলিয়া থানা বিএনপির সিনিয়র সহভাপতি পবনারটেক এলাকার বাসিন্দা মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে পিয়ার আলী আক্ষেপ করে কালবেলাকে বলেন, দুলাল এবং তার স্ত্রী হচ্ছে গণআপা-দুলাভাই। থানা পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তাদেরকে আপা-দুলাভাই নামে সম্বোধন করা হয়। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর অমানুষিক আচরণ এবং প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দম্ভের সঙ্গে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে তারা। দুলাল শুধু মাদক নয় নারীদের দিয়েও দেহ ব্যবসা করায় এই বাড়িটিতে। আমরা প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। আমাদের এলাকার যুব সমাজটা আজ ধ্বংসের পথে। মাদকের করাল গ্রাসে ছেয়ে যাচ্ছে আমাদের পুরো এলাকা। তার বিরুদ্ধে যে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো তার নেশায় পরিণত হয়েছে। সে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়কার  বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রী এবং বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে মূলত এ ধরনের অপকর্ম পরিচালিত করে আসছে। আমরা মাদকের এই থাবা থেকে বাঁচতে চাই। আমার এলাকায় মাদক বন্ধে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চাই।’ কালবেলার খবর সংগ্রহের সময় দুজন মাদক ক্রেতাকে দ্রুত পালিয়ে যেতে দেখা গেছে; আর মাদকসম্রাট দুলালও মিডিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। অপরদিকে, ডিবি ঢাকা জেলা উত্তরের ওসি মো. জালাল উদ্দিন এই ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করব। ব্যক্তি পর্যায়েও যদি কেউ অভিযোগ নিয়ে আসে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। আমাদের ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের সরাসরি নির্দেশনা রয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমরা সেই নীতিতেই এগোচ্ছি। অপরাধী যেই হোক না কেন কোনো ছাড় নয়।’ স্থানীয়দের প্রত্যাশা—শুধু আশ্বাস নয়, বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক; নাহলে মাদক ব্যবসা চলতে থাকলে পুরো একটি প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। তারা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন—নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। স্থানীয় সমাজকর্মী ও ভুক্তভোগীরা কালবেলাকে জানান, যদি প্রশাসন দ্রুত কড়া পদক্ষেপ না নেয় তারা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরবে। স্থানীয়দের দাবি ছবি-ভিডিও প্রমাণ থাকলেও তারা নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে প্রকাশ্যে নামতে ভয় পাচ্ছেন—এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের স্বতঃস্ফূর্ত ও কার্যকর হস্তক্ষেপই একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
Read Entire Article