জুলাই-আগস্ট আন্দোলন কেন্দ্র করে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন—অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রথম দিনে সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। তবে সেদিন খলিলুর রহমানের জেরা সম্পন্ন হয়নি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ঘটে যাওয়া সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশের ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এমন নৃশংসতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এই ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে।
এর আগে গত ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য করা হয়। সেদিন বিচারকার্যের শুরুতেই আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয় এবং উপস্থিত আট আসামির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়।
গত ১৩ আগস্ট স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন মামলার আট আসামিকে হাজির করা হয়। পাশাপাশি পলাতক থাকা সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজনকেও হাজির করার কথা ছিল; কিন্তু তারা উপস্থিত না হওয়ায় তাদের পক্ষে সরকারি খরচে দুজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন—ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল এবং কনস্টেবল মুকুল। সাবেক এমপি সাইফুলসহ পলাতক আট আসামিকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশ ১৬ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-২ দ্বারা জারি করা হয়।
গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা নথি, ৬২ জন সাক্ষীর বিবরণ, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণাদি এবং দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং পলাতক আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। এরপর পুলিশ তাদের লাশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকে বাঁচানো হয়নি; পেট্রোল ঢেলে তাকে জীবন্তই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনার পর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।