আসছে অদ্ভুুত সব নিয়ম নিয়ে ক্রিকেটের নতুন ফরম্যাট টেস্ট টোয়েন্টি

2 hours ago 6
একই দিনে সাদা পোশাক, লাল বল ও টেস্ট-সদৃশ যোগফল—শুনতে অবাক লাগে, কিন্তু এরকম অদ্ভুত বিষয়ের দিকেই ছুঁটছে ক্রিকেট। তরুণ প্রতিভাদের জন্য তৈরি করা নতুন এক ফরম্যাট এসেছে যার নাম টেস্ট টোয়েন্টি। এটা টেস্টের গভীরতা ও টি-টোয়েন্টির দ্রুততা মিশিয়ে এমন এক রকম হাইব্রিড, যেখানে ১৩–১৯ বছর বয়সী খেলোয়াড়েরা একদিনেই দুই ইনিংসের (প্রতিটি ২০ ওভার) মুখোমুখি হবে — ফলও হবে জয়, হার, টাই ও এমনকি ড্র। টেস্ট টোয়েন্টি যে শুধু নামের শখ নয়, সেই ইঙ্গিত দেয় এর অদ্ভুত সব নিয়মেও। নিচে সংক্ষিপ্ত ও পাঠক-বান্ধবভাবে মূল নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো — যা তরুণেরা বোঝা-শুনা ছাড়াই মানিয়ে নিতে পারবে না: কীভাবে খেলবে — মূল কাঠামো প্রতিটি ম্যাচ হবে একদিনে, দুটি ইনিংসে মোট ৮০ ওভার। সাদা পোশাক, লাল বল। প্রথম ইনিংসের রান যোগ হবে দ্বিতীয় ইনিংসে—টেস্টের মতোই মোট যোগফল বিবেচনা। ফল হতে পারে: জয়, হার, টাই বা ড্র। নতুন কিছু নিয়ম যা ম্যাচের রূপ পাল্টাবে পাওয়ারপ্লে — প্রতিটি দল মাত্র একবার ৪ ওভার পাবেন; কখন নিবেন সেটা কেবল দলই ঠিক করবে; যদি অধিনায়ক সময় না দেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৭ম-১০ম ওভারই পাওয়ারপ্লে হবে। ফলো-অনে বদল — প্রথম ইনিংস শেষে যদি দ্বিতীয় দল ৭৫ বা তার বেশি রানে পিছিয়ে থাকে, তো প্রথম দল চাইলে ফলো-অন বসাতে পারবে। আর্লি কলাপ্স ক্লজ — কোনো দল যদি প্রথম ইনিংসে ১০ ওভারের আগে অলআউট হয়, তাদের অব্যবহৃত ওভারের মধ্য থেকে অতিরিক্ত ওভার কাটা হয়ে প্রতিপক্ষের ইনিংসে যোগ হবে (যেমন: ৭ ওভারে অলআউট হলে প্রতিপক্ষ ২৩ ওভার পাবে)। বোলিং বণ্টন — পুরো ম্যাচে সর্বোচ্চ ৫ জন বোলার ব্যবহার করা যাবে; প্রত্যেক বোলার সর্বোচ্চ ৮ ওভার (দুই ইনিংস মিলিয়ে)। ওয়াইড/নো-বলের কড়া প্রভৃতি — টি-টোয়েন্টির মতো ওয়াইড/নো-বলে এক রান ও অতিরিক্ত বল; এক ওভারে ৩ বা ততোধিক ওয়াইড/নো হলে প্রতিপক্ষকে অতিরিক্ত ৩ রান জরিমানা। ফ্রন্টফুট নো-বল হলে ‘ফ্রি হিট’। শর্তসাপেক্ষ ড্র — চতুর্থ ইনিংসে যদি ব্যাটিং দল পাঁচ উইকেটের কমে থাকে, তারা চাইলে ম্যাচ ‘ড্র’ ঘোষণা করতে পারবে; তবে পঞ্চম উইকেট পড়লে সুযোগ চলে যাবে। টাই হলে সুপার ওভার; সুপার ওভারের ফল না হলে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাউন্ডারি গণনা করে বিজয়ী ঠিক হবে। কবে হবে, কে যুক্ত প্রথম টেস্ট টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে মাঠে যাবে। ছয়টি গ্লোবাল ফ্রাঞ্চাইজি অংশ নেবে—তার মধ্যে তিনটি হবে ভারতের শহরভিত্তিক, বাকি তিনটি হবে দুবাই, লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিত্বকারী। প্রতিটি স্কোয়াডে ১৬ জন—আটজন ভারতীয় ও আটজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। প্রথম দুই মৌসুম হবে ভারতে। প্রযুক্তি ও স্কাউটিংয়ের নতুন অধ্যায় — এআই ডিসকভারি ইঞ্জিন এই প্রকল্পে কেবল নিয়মই অনন্য নয়; এখানে বড় ভূমিকায় থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। ভিডিও অ্যানালিটিক্স, মোশন সেন্সর ও ডেটা সায়েন্স মিলিয়ে একটি ডিসকভারি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে, যা খেলোয়াড়দের আরও নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করবে এবং বিশ্বব্যাপী বোর্ড ও একাডেমির কাছে প্রতিভা পৌঁছে দেবে। বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন উদ্যোক্তা গৌরব বহিরবানি বলেন, “টেস্টের গভীরতা আর টি–টোয়েন্টির গতি মিলিয়ে এই ফরম্যাট তৈরি করেছি—আজকের যুবপ্রজন্মের জন্য অর্থবহ লড়াইয়ের সুযোগ দেবে।” কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড মন্তব্য করেন, “টি-টোয়েন্টি প্রদর্শনী, টেস্ট হলো পরীক্ষা—এ দুটোকে মেশালে নতুন পরীক্ষা হবে।” এবি ডি ভিলিয়ার্স বলেন, “টেস্ট টোয়েন্টি খেলার নতুন মাত্রা যোগ করবে; টেস্টের মর্যাদা রাখতেই ডিজাইন।” হরভজন সিং মনে করেন, “এখানে মানসিক দৃঢ়তা, কৌশল, শৃঙ্খলা—সব কিছু যাচাই হবে।” সুবিধা বনাম প্রশ্নচিহ্ন টেস্ট টোয়েন্টি—যুব প্রতিভা দ্রুত স্কিল শিখবে, ম্যাচ সম্পর্কে পূর্ণ অভিজ্ঞতা পাবে; কিন্তু এর সঙ্গে আসে চ্যালেঞ্জও। একদিনে দুই ইনিংস, নতুন বোলিং লিমিট, আর্লি অল-আউট ক্লজ—সবই অনুশীলন, কন্ডিশনিং ও মেন্টাল শক্তি দাবি করে। ক্রীড়া বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এটি তরুণদের দ্রুত পরিণত করবে, আবার কেউ বলছেন—পুনরাবৃত্তি ও অতিরিক্ত গেম-লোড লম্বা মেয়াদের জন্য নানাভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। টেস্ট টোয়েন্টি যদি সফল হয়, তবে তা কেবল তরুণ ক্রিকেট নয়—ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ও প্রতিযোগিতার মানকে নতুনভাবে রূপ দিতে পারে। আর যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এটিকে ইতিহাসের ‘একটি সাহসী পলিসি’ হিসেবেই দেখা হবে। যাই হোক, ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন দেখবেন—একই দিনে সাদা পোশাক ও র‌্যাঙ্কিং-ফুলের টেম্পোতে কে কতটা টিকে আছে। প্রথম পরীক্ষার সুর বাজবে জানুয়ারির মাঠে — তখনই বোঝা যাবে, টেস্ট টোয়েন্টি রীতিমতো খেলার বদল এনে দেবে, নাকি থাকল আড়ালে এক অনন্য প্রচেষ্টা মাত্র।
Read Entire Article