কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এবারের আঞ্চলিক আসিয়ান সম্মেলনে চীন স্পষ্টভাবে উন্মুক্ত বাণিজ্য ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কনীতির প্রেক্ষাপটে এই বার্তাকে অনেকেই ওয়াশিংটনের প্রতি এক ধরনের কূটনৈতিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
রোববার ছয় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক ও বাণিজ্য ঘোষণার পর আসিয়ান, জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং বলেন, আমাদের অবশ্যই পূর্ব এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। মুক্ত ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে হবে এবং প্রোটেকশনিজম প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, লি চিয়াংয়ের এই বক্তব্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নীতির বিরুদ্ধেই ইঙ্গিত বহন করে।
ট্রাম্পের কূটনৈতিক ও বাণিজ্য পদক্ষেপ
এর আগের দিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্প্রসারণ তদারকি করেন এবং চারটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যদিও এসব চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে আমদানি শুল্ক কমায়নি, তবে ভবিষ্যতে শুল্কছাড়ের সম্ভাবনা রাখে।
অন্যদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানান, তার সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত— আমি নিজে, প্রেসিডেন্ট, আমাদের মন্ত্রিসভার সদস্যরা— যখনই যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত হবে।

তবে ট্রাম্প জাপানে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের জানান, আমি এখনই কার্নির সঙ্গে দেখা করতে চাই না।
লুলা–ট্রাম্প বৈঠকের ইতিবাচক ইঙ্গিত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র–ব্রাজিল বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে এবং ৫০ শতাংশ শুল্কের পরিবর্তে ‘আরও সুবিধাজনক চুক্তি’ হয়েছে। লুলার ভাষায়, ‘দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে ব্রাজিলের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
আরসিইপি: চীনের নেতৃত্বে নতুন গতি
চীনের নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি—যার সদস্য আসিয়ান দেশসমূহ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়া—২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো সম্মেলন করে দ্রুত সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য ব্লক হিসেবে বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইউরোপের উদ্বেগ: রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্টা জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করতে চায়। তবে চীনের রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কোস্টা বলেন, চীন বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি রেয়ার আর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে—যা বৈদ্যুতিক যান, সেমিকন্ডাক্টর ও প্রতিরক্ষা শিল্পে অপরিহার্য। সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো উদ্বেগজনক। চীনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আসন্ন সপ্তাহগুলোতে ব্রাসেলস সফর করবে বলেও তিনি জানান।
জাপানেরও উদ্বেগ
জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তোশিহিরো কিতামুরা রয়টার্সকে বলেন, চীন রপ্তানি সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে সরবরাহ চেইনে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি নিয়ে তারা এখন এমন আচরণ করছে যেন চীনই মুক্ত বাণিজ্যের রক্ষক।
আসিয়ান সম্মেলনে এবার চীনের বার্তা ছিল স্পষ্ট—ওয়াশিংটনের শুল্ক ও সুরক্ষাবাদী নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের ‘মুক্ত বাণিজ্যের চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে তুলে ধরা। তবে ইউরোপ ও জাপানের উদ্বেগে বোঝা যায়, বেইজিংয়ের বাণিজ্যনীতি ও কাঁচামাল নিয়ন্ত্রণ এখনো বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য এক জটিল বাস্তবতা হয়ে আছে।
এমআরএম/জেআইএম

9 hours ago
4








English (US) ·