ইউজিসির হিট প্রকল্পে অনিয়ম ও আওয়ামীপন্থিদের প্রাধান্যের অভিযোগ

1 month ago 11

সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন (ইউজিসি) পরিচালিত হাইয়ার এডুকেশন অ্যাকসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পে অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একদল শিক্ষক।

রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।

৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার এ প্রকল্পে গবেষণা প্রস্তাব বাছাই প্রক্রিয়ায় ‘নন-এক্সপার্টদের’ দিয়ে প্রস্তাব পর্যালোচনা করা ও প্রেজেন্টেশন নেওয়া, রিভিউয়ারদের মতামত ও স্কোর উপেক্ষা করা, গবেষণা সাইটেশন (লেখার তথ্যসূত্র বা উৎস) ও সম্পকির্ত ফিল্ডে এক্সাপার্টদের মূল্যায়ন না করা এবং উচ্চ প্রোফাইলের গবেষকদের বাদ দিয়ে ‘নিম্ন প্রোফাইলের’ আবেদনকারীদের তহবিল দেওয়া, , জামায়াত-বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের বাদ দিয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়ারসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন তারা। শিক্ষকরা প্রকল্পের পূর্ণ মূল্যায়ন ও তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।

ইউজিসির হিট প্রকল্পে অনিয়ম ও আওয়ামীপন্থিদের প্রাধান্যের অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মাওলা, অধ্যাপক ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান, অধ্যাপক ড. এ টি এম মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. মো. জাহিদুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

হিট প্রকল্প একটি বড় পরিসরের উচ্চশিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তত্ত্বাবধানে এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। এ প্রকল্পের একটি ‘রিভিউ বোর্ড’ থাকে যাদের দায়িত্ব হল প্রকল্পের অধীনে জমা পড়া গবেষণা প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে কোনগুলো অর্থায়ন পাবে তা নির্ধারণ করা।

সেই রিভিউ প্রক্রিয়ার ‘অসঙ্গতির’ অভিযোগ তুলে ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, রিভিউ বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া ছিল গোপনীয় ও অস্বচ্ছ। কারা রিভিউয়ার ছিলেন, কীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বা তাদের যোগ্যতা কী, এসব প্রকাশ করা হয়নি। এ প্রকল্পে অনেক শিক্ষক নিজ বিভাগের সহকর্মীদের প্রজেক্ট রিভিউ করেছেন, যা স্পষ্ট স্বার্থের দ্বন্দ্ব।

তিনি আরও বলেন, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান দাবি করেছেন, এ হিট প্রজেক্টে ‘ব্লাইন্ড পিয়ার রিভিউ’ (গবেষণাপত্র বা লেখার মান যাচাই করার জন্য লেখক এবং যিনি রিভিউ করছেন, তাদের মধ্যে পরিচয় গোপন রাখা) করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি আবেদনেই আবেদনকারীর নাম, বায়োডাটা ও গবেষণা প্রকাশনা সংযুক্ত ছিল, যা রিভিউয়াররা দেখতে পেয়েছেন। ফলে এটি কোনোভাবেই ব্লাইন্ড রিভিউ ছিল না। রিভিউয়ার কার প্রজেক্টে কত স্কোর দিয়েছেন এবং কেন দিয়েছেন, সেসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এটি পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ইউজিসির হিট প্রকল্পে অনিয়ম ও আওয়ামীপন্থিদের প্রাধান্যের অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে হিট প্রকল্পের রিভিউ ও ব্যবস্থাপনায় অর্থের অপচয়ের অভিযোগ করে শিক্ষকরা বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ভিত্তিক রিভিউয়ার নিয়োগ ও অনৈতিকভাবে একাধিক প্রজেক্ট রিভিউ হয়েছে। এখানে অনেক রিভিউয়ারকে পরিচিতজনের প্রজেক্ট রিভিউ করানোর মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। জামায়াত-বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের বাদ দিয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত প্রজেক্টগুলোর বাজেট থেকে ১০-১৫ শতাংশ অর্থ ইউজিসি কর্মীদের জন্য সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও প্রকিউরমেন্ট খাতে বাধ্যতামূলক রাখতে বলা হয়েছে, যা হিট প্রকল্পের ম্যানুয়ালে উল্লেখ ছিল না। এই নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া প্রমাণ করে যে, প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থের অনৈতিক অপচয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থসাধনের জন্য এই ব্যবস্থাপনা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।

এসময় শিক্ষকরা তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো- সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অবলম্বন না করায় নির্বাচিত প্রজেক্টসমূহ বাতিল করতে হবে, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন, প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান ও প্রকল্প পরামর্শক অধ্যাপক মোজাহার আলীকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে ও তাদের যথোপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং নতুন করে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে রিভিউ করে প্রজেক্ট নির্বাচন করতে হবে।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান বলেন, প্রকল্পের নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ব্লাইন্ড রিভিউর পর উপস্থাপনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সবই ট্রান্সপারেন্ট। যদি কোনো তথ্য কেউ জানতে চায়, আমরা দেবো সমস্যা নেই। হিট প্রজেক্টের ম্যানুয়ালের নিয়মানুযায়ী সিলেক্ট করা হয়েছে। ম্যানুয়ালের বাইরে কোনো কিছু হয়নি।
আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদেরকে বেশিরভাগ প্রজেক্ট দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইউজিসির বাস্তবায়নাধীন ‘হিট প্রজেক্টে’ বাংলাদেশ সরকারের অর্থের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে দুই হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং এক হাজার ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংক বহন করবে।

ইরফান উল্লাহ/এমএন/জেআইএম

Read Entire Article