ইউরোপের কম পরিচিত যে দেশে সহজেই মেলে ভিসা
ইউরোপের অনেক জনপ্রিয় দেশের তুলনায় এস্তোনিয়া এখনো খুব বেশি আলোচিত নয়। তবে দেশটি প্রযুক্তি, শিক্ষা, ডিজিটাল জীবনধারা ও স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমের জন্য দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলক সরল, খরচ কম এবং নীতিমালা স্বচ্ছ হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য এস্তোনিয়া এখন অন্যতম সম্ভাবনাময় গন্তব্য। পর্যটক, শিক্ষার্থী, ডিজিটাল নোম্যাড কিংবা উদ্যোক্তা— সব ক্ষেত্রেই এস্তোনিয়ার ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ বলে ধরা হয়। এস্তোনিয়ার ভিসার ধরন বাংলাদেশিরা সাধারণত এস্তোনিয়ায় নিচের ভিসাগুলোর জন্য আবেদন করতে পারেন— শেনজেন স্বল্পমেয়াদি ভিসা (টাইপ সি): পর্যটন, ব্যবসা বা কনফারেন্সে অংশ নেওয়ার জন্য, সর্বোচ্চ ৯০ দিন থাকার অনুমতি। দীর্ঘমেয়াদি বা ডি ভিসা: পড়াশোনা, ওয়ার্ক পারমিট, গবেষণা বা দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের জন্য। রেসিডেন্স পারমিট: পড়াশোনা বা চাকরির ভিত্তিতে দীর্ঘ সময় বসবাসের সুযোগ। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ভিসা টাইপ নির্বাচন: উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে ভিসার ধরন নির্ধারণ করতে হয়— ট্রাভেল, স্টাডি, জব বা স্টার্ট-আপ ভিসা। অনলাইনে আবেদন শুরু: বাংলাদেশে এস্তোনিয়ার কোনো দূতাবাস নেই। তাই আবেদন জমা দিতে হয় ভারতের নয়াদিল্লিত
ইউরোপের অনেক জনপ্রিয় দেশের তুলনায় এস্তোনিয়া এখনো খুব বেশি আলোচিত নয়। তবে দেশটি প্রযুক্তি, শিক্ষা, ডিজিটাল জীবনধারা ও স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমের জন্য দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলক সরল, খরচ কম এবং নীতিমালা স্বচ্ছ হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য এস্তোনিয়া এখন অন্যতম সম্ভাবনাময় গন্তব্য। পর্যটক, শিক্ষার্থী, ডিজিটাল নোম্যাড কিংবা উদ্যোক্তা— সব ক্ষেত্রেই এস্তোনিয়ার ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ বলে ধরা হয়।
এস্তোনিয়ার ভিসার ধরন
বাংলাদেশিরা সাধারণত এস্তোনিয়ায় নিচের ভিসাগুলোর জন্য আবেদন করতে পারেন—
- শেনজেন স্বল্পমেয়াদি ভিসা (টাইপ সি): পর্যটন, ব্যবসা বা কনফারেন্সে অংশ নেওয়ার জন্য, সর্বোচ্চ ৯০ দিন থাকার অনুমতি।
- দীর্ঘমেয়াদি বা ডি ভিসা: পড়াশোনা, ওয়ার্ক পারমিট, গবেষণা বা দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের জন্য।
- রেসিডেন্স পারমিট: পড়াশোনা বা চাকরির ভিত্তিতে দীর্ঘ সময় বসবাসের সুযোগ।
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
- ভিসা টাইপ নির্বাচন: উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে ভিসার ধরন নির্ধারণ করতে হয়— ট্রাভেল, স্টাডি, জব বা স্টার্ট-আপ ভিসা।
- অনলাইনে আবেদন শুরু: বাংলাদেশে এস্তোনিয়ার কোনো দূতাবাস নেই। তাই আবেদন জমা দিতে হয় ভারতের নয়াদিল্লিতে এস্তোনিয়ান দূতাবাসে। তবে ঢাকার জার্মান দূতাবাস এস্তোনিয়ার কিছু ভিসা প্রক্রিয়া করে থাকে। তাই শুরুতেই আপনার প্রোফাইল অনুযায়ী ঢাকার জার্মান দূতাবাস আবেদন গ্রহণ করবে কি না তা নিশ্চিত হোন। যদি গ্রহণ না করে, তবে আপনাকে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত এস্তোনিয়ান দূতাবাস বা তাদের মনোনীত ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে আবেদন করতে হবে।
eelviisataotlus.vm.ee ওয়েবসাইটে Schengen Type C ফর্ম অনলাইন ফিলআপ করুন, পিডিএফ ডাউনলোড/প্রিন্ট নিন, সই করুন।
জার্মান দূতাবাসে কারা আবেদন করতে পারেন :
ঢাকার জার্মান দূতাবাস বর্তমানে কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির জন্য এস্তোনিয়ার শর্ট-টার্ম শেনজেন ভিসার (টাইপ সি) আবেদন গ্রহণ করে। যেমন :অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী (ডিপ্লোম্যাটিক/সার্ভিস পাসপোর্ট) ব্যক্তি বা অফিসিয়াল ডেলিগেশন।
যদি আপনি এই ক্যাটাগরিতে না পড়েন (যেমন : সাধারণ পর্যটক, ব্যবসা বা পারিবারিক পুনর্মিলন), তাহলে জার্মান দূতাবাস আবেদন গ্রহণ করবে না। সেক্ষেত্রে আপনাকে অন্য অপশন বেছে নিতে হবে।
- ডকুমেন্ট সংগ্রহ ও প্রস্তুত করা: যথাযথ ফরম্যাটে কাভার লেটার, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্রাভেল প্ল্যান, বুকিং, বিমা, পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হয়।
- ভিসা আবেদন জমা ও সাক্ষাৎকার: নয়াদিল্লিতে অবস্থিত এস্তোনিয়ান দূতাবাস বা তাদের মনোনীত ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন (vfsglobal.com/ind/en/est)। প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র জমা দিন। সাক্ষাৎকারে যাত্রার উদ্দেশ্য, আর্থিক সামর্থ্য, অতীতের ভ্রমণ ইতিহাস ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে।
- ভিসা প্রসেসিং ও অনুমোদন: শেনজেন (টাইপ সি) ভিসার স্ট্যান্ডার্ড টাইম ৭-১৫ ওয়ার্কিং ডে), আর লং-টার্ম (ডি টাইপ) হলে ৩০ দিনের মধ্যে (জটিল ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ দিন)। কাগজপত্র ঠিক থাকলে ভিসা অনুমোদনের সম্ভাবনা বেশি (৮০-৯০ শতাংশ)।
আরও পড়ুন>>
যুক্তরাজ্যে কীভাবে যাবেন, কোন ভিসা উপযুক্ত?
বাংলাদেশ থেকে ফিনল্যান্ডের ভিসা কীভাবে পাবেন?
স্টুডেন্ট ভিসায় ইউরোপ-আমেরিকার কড়াকড়ি, বিকল্প হতে পারে যেসব দেশ
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় মূল নথিপত্র
- বৈধ পাসপোর্ট (মেয়াদ ভ্রমণের শেষ তারিখের পর ৩ মাস অবশিষ্ট থাকতে হবে)
- পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফরম
- দুই কপি বায়োমেট্রিক ছবি
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৬ মাসের, লেনদেনসহ)
- ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
- ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স (কমপক্ষে ৩০ হাজার ইউরো কভারেজ)
- ফ্লাইট বুকিং ও বাসস্থান বুকিং
- ইনভাইটেশন বা কাভার লেটার (যেখানে প্রযোজ্য)
- চাকরি, ব্যবসা বা শিক্ষাগত নথি
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (স্টুডেন্ট/ওয়ার্ক ভিসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ)
- স্টুডেন্ট ভিসার জন্য অ্যাডমিশন লেটার, ভর্তি টাকা জমার রসিদ
- মোটিভেশন লেটার এবং শিক্ষা সনদ
ভিসা পাওয়ার খরচ
এস্তোনিয়ার ভিসা খরচ ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় কম। আনুমানিক খরচ নিচে উল্লেখ করা হলো—
- শেনজেন ভিসা ফি : ৯০ ইউরো (১২ হাজার ৬০০ টাকা প্রায়), ৬-১১ বছরের শিশুদের জন্য ৪৫ ইউরো (৬ হাজার ৩০০ টাকা প্রায়)
- ডি ভিসা বা দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ফি : ১২০ ইউরো (প্রায় ১৭ হাজার টাকা)
- ভিএফএস সার্ভিস চার্জ : সর্বোচ্চ ৩০ ইউরো (প্রায় ৪ হাজার টাকা)
- ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স: ৬০–১০০ ইউরো (প্রায় ৮ হাজার-১৪ হাজার টাকা)
- ফ্লাইট বুকিং : ৫০–৭০ হাজার টাকা (আনুমানিক)
ব্যাংকে প্রদর্শনযোগ্য অর্থ :
স্বল্পমেয়াদি ভিসার (টাইপ সি) ক্ষেত্রে দৈনিক ন্যূনতম ৭০ ডলার থাকতে হয়।
এস্তোনিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য বর্তমানে জীবনযাত্রার খরচ মাসে ৮০০ ইউরো করে এক বছরের জন্য মোট ৯ হাজার ৬০০ ইউরো বা প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা (বিনিময় হার অনুযায়ী) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকার প্রমাণ দেখাতে হয়।
কেন এস্তোনিয়ার ভিসা তুলনামূলক সহজ?
- আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে শুরু করা যায়।
- ডকুমেন্ট যাচাই স্বচ্ছ এবং অনিয়ম কম।
- পর্যটনে খুব বেশি চাপ বা আগ্রাসী যাচাই নেই।
- স্টুডেন্ট ভিসায় প্রত্যাখ্যানের হার অনেক ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কম।
- ডিজিটাল নোম্যাড ও স্টার্ট-আপ ভিসায় এস্তোনিয়া খুবই পজিটিভ।
- ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং অস্থায়ী বা রিফান্ডেবল দিলেও গ্রহণযোগ্য হয়।
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য সুবিধা
- ডিজিটাল ই-গভর্নেন্স ও সহজ ইমিগ্রেশন সার্ভিস
- আন্তর্জাতিক শিক্ষায় তুলনামূলক কম খরচ
- পড়াশোনা বা ভিসা এক্সটেনশনের সুবিধা
- গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরি খোঁজার সুযোগ
- শেনজেন ক্লিয়ারেন্স থাকলে ইউরোপের অন্য ২৬ দেশে সহজে যাতায়াত
- বাসস্থানের খরচ ও জীবনযাত্রা তুলনামূলক সাশ্রয়ী
পরিবার নেওয়ার সুযোগ
এস্তোনিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় (ডি ভিসা এবং পরবর্তীতে টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট বা টিআরপি) গিয়ে স্বামী/স্ত্রী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানদের সঙ্গে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এর জন্য শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ দেখাতে হবে।
কাজের সুযোগ
এস্তোনিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের চমৎকার সুযোগ রয়েছে এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় কাজের বিধিনিষেধও অনেক নমনীয়।
- কাজের জন্য বাড়তি অনুমতির প্রয়োজন নেই: আপনার যদি বৈধ স্টুডেন্ট রেসিডেন্স পারমিট (টিআরপি) বা ডি ভিসা থাকে, তবে কাজ করার জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হয় না।
- কাজের সময়ের সীমাবদ্ধতা: এস্তোনিয়াতে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য সাপ্তাহিক কাজের নির্দিষ্ট কোনো কঠোর সময়সীমা নেই, যা অনেক ইউরোপীয় দেশের তুলনায় একটি বড় সুবিধা।
- ছুটির সময়: একাডেমিক ছুটির সময়গুলিতে ফুল-টাইম কাজ করার সুযোগ থাকে।
- প্রধান শর্ত: আপনাকে ফুল-টাইম স্টুডেন্ট হিসেবে আপনার একাডেমিক পারফরম্যান্স বজায় রাখতে হবে (সাধারণত প্রতি সেমিস্টারে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ স্টাডি প্রগ্রেস বা নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেডিট অর্জন করতে হয়)। যদি আপনার কাজ আপনার পড়াশোনায় হস্তক্ষেপ না করে, তবে আপনি যত খুশি কাজ করতে পারবেন।
বিশেষ সতর্কতা
- শুধু ব্যাংকে টাকা থাকলেই যথেষ্ট নয়, লেনদেন থাকতে হবে।
- ট্রাভেল প্ল্যান ও উদ্দেশ্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা জরুরি।
- ভিসা ইন্টারভিউতে আত্মবিশ্বাসী উত্তর দিতে হবে।
- ভুয়া বুকিং, তথ্য গোপন বা কাগজপত্র জাল হলে ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি।
নোট : সবশেষ তথ্যের জন্য এস্তোনিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (vm.ee), এস্তোনিয়ার নয়াদিল্লি দূতাবাস (newdelhi.mfa.ee), ঢাকার জার্মান দূতাবাস (dhaka.diplo.de) বা ভিএফএস গ্লোবালের (vfsglobal.com) ওয়েবসাইট দেখুন।
সব মিলিয়ে, ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় এস্তোনিয়া এখনো কম পরিচিত হলেও নিয়মিত ডকুমেন্ট, পরিষ্কার উদ্দেশ্য ও সঠিক আবেদন পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। পর্যটন থেকে পড়াশোনা কিংবা স্টার্ট-আপ— সব ক্ষেত্রেই এস্তোনিয়া বাংলাদেশের আবেদনকারীদের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও সম্ভাবনাময় ইউরোপীয় গন্তব্য।
তথ্যসূত্র: এস্তোনিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এস্তোনিয়ান নয়াদিল্লি দূতাবাস, ঢাকার জার্মান দূতাবাস
কেএএ/
What's Your Reaction?