রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধে চাপের মুখে পড়েছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব প্রতিশ্রুত কিছু অস্ত্র সহায়তা স্থগিত করেছে। এ অবস্থায় কিয়েভ তার অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে যৌথ অস্ত্র উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, আসন্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বৈঠকে যৌথ অস্ত্র উৎপাদন, যৌথ বিনিয়োগ ও প্রকল্প অন্যতম মূল বিষয় হবে।
আরও পড়ুন>>
- ইউক্রেনের পোকরোভস্ক দখলে মরিয়া রাশিয়া, লক্ষাধিক সৈন্য মোতায়েন
- রাশিয়ার হামলা ঠেকাতে গিয়ে ইউক্রেনের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
- যুদ্ধের নিয়ম বদলে দিলো ইউক্রেনের অপারেশন ‘স্পাইডার ওয়েব’
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানান, আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদনের জন্য একটি খসড়া আইন জুন মাসেই পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে। এ পরিকল্পনায় দেশের ভেতর ও বাইরের নতুন অস্ত্র কারখানা স্থাপন এবং বিদ্যমান সুবিধাগুলো আধুনিকায়নের জন্য বিশেষ আইনি ও কর-সংক্রান্ত প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল এই সপ্তাহে কিয়েভ সফর করেন এবং ইউক্রেনের অস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে বার্লিনের সমর্থনের আশ্বাস দেন। সফরে জার্মান প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রতিনিধিরাও তার সঙ্গে ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সহায়তা স্থগিত করলো কেন?
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে, ইউক্রেনের জন্য প্রতিশ্রুত কিছু অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করা হয়েছে। পেন্টাগন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অস্ত্র মজুতের স্তর বিপজ্জনকভাবে কমে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও কোন অস্ত্রগুলো আটকে রাখা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।
এই অবস্থায় ইউক্রেন বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জন হিঙ্কেলকে তলব করে। ইউক্রেনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়ানা বেটসা এ সময় বলেন, পূর্ব প্রতিশ্রুত প্রতিরক্ষা প্যাকেজগুলো বিশেষ করে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি।
ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইউক্রেনে কম অস্ত্র পাঠালে যুদ্ধের অবসান আরও ত্বরান্বিত হবে।
সামগ্রিক সহায়তা চিত্র
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সামরিক সহায়তাদাতা ছিল। তবে ট্রাম্পের শাসনামলে নতুন করে কোনো সামরিক সহায়তা ঘোষণা করা হয়নি।
জার্মানির কিয়েল ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কোনো নতুন সামরিক সহায়তা দেয়নি। ইউরোপীয় দেশগুলো এ সময় মোট ৭২ বিলিয়ন ইউরো (৮৫ বিলিয়ন ডলার) সহায়তা দিয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ৬৫ বিলিয়ন ইউরো (৭৭ বিলিয়ন ডলার)।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারলেও মার্কিন প্রযুক্তি নির্ভর অনেক অস্ত্র যেমন হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার বা প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কোনো বিকল্প ইউরোপের কাছে নেই।
সূত্র: এপি, ইউএনবি
কেএএ/