ইউসুফ (আ.) কি জুলেখাকে বিয়ে করেছিলেন?

7 hours ago 5

 

ইউসুফ (আ.) আল্লাহ তাআলার একজন সম্মানিত নবী যিনি ছিলেন আল্লাহর নবী ও খলিল হজরত ইবরাহিমের (আ.) প্রপৌত্র। তার বাবা ছিলেন নবী ইয়াকুব (আ.), দাদা নবী ইসহাক (আ.)। তার জন্ম হয়েছিল কেনান বা ফিলিস্তীনের হেবরন এলাকায়। সেখানেই বাবার কাছে তার শৈশবের কিছু বছর কাটে।

বাবা ইয়াকুব (আ.) ইউসুফকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভবিষ্যতে তার এই সন্তান আল্লাহর নবী হবেন। ইউসুফের প্রতি বাবার ভালোবাসা তার সৎ ভাইদের সহ্য হতো না। তারা ভাবত ইউসুফের কারণে তারা বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিন তারা সবাই মিলে চক্রান্ত করে যেভাবেই হোক ইউসুফকে বাবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। তাদের কেউ কেউ এমন কি তাকে মেরে ফেলার কথাও বলে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত নেয় ইউসুফকে একটি পরিত্যাক্ত কূপে ফেলে দেবে যেন মুসাফিরদের কোনো দল তাকে পেয়ে তাদের সঙ্গে দূর দেশে নিয়ে যায়।

সুরা ইউসুফে ওই ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ইউসুফ ও তার ভাইদের কাহিনিতে জিজ্ঞাসুদের জন্য অবশ্যই অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারা বলেছিল, নিশ্চয় ইউসুফ ও তার (আপন) ভাই আমাদের বাবার কাছে আমাদের চেয়ে বেশি প্রিয়, অথচ আমরা বড় দল। নিশ্চয় আমাদের বাবা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই আছে। তোমরা ইউসুফকে হত্যা কর অথবা তাকে কোন যমীনে ফেলে আস, তাহলে তোমাদের পিতার আনুকূল্য কেবল তোমাদের জন্য থাকবে এবং এই ঘটনার পর তোমরা (তওবা করে) ভালো লোক হয়ে যাবে। তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো না, আর যদি কিছু করই, তাহলে তাকে কোন গভীর কুপে ফেলে দাও, যাত্রীদলের কেউ তাকে তুলে নিয়ে যাবে। (সুরা ইউসুফ: ৭-১০)

ষড়যন্ত্র অনুযায়ী তারা একদিন পশু চরাতে যাওয়ার সময় ইউসুফকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যায় এবং একটি পরিত্যাক্ত কূপে ফেলে দেয়। কয়েকদিন পর একদল ব্যবসায়ী কূপ থেকে ইউসুফকে উদ্ধার করে এবং মিশরে নিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। সেখানে তাকে কিনে নেন মিশরের তৎকালীন আজিজ যিনি ছিলেন মিশরে বাদশাহর পরই সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি ইউসুফকে কিনে নিয়ে উপহার দেন তার স্ত্রী জুলেখাকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, আর মিশরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, এর থাকার সুন্দর সম্মানজনক ব্যবস্থা কর। আশা করা যায়, সে আমাদের উপকার করবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করব এবং এভাবেই আমি জমিনে ইউসুফকে প্রতিষ্ঠিত করলাম। (সুরা ইউসুফ: ২১)

পরবর্তীতে ইউসুফ (আ.) যখন যুবক বয়সে উপনীত হন, তখন আজিজে মিশরের স্ত্রী জুলেখা তার প্রেমে পড়ে যান। তিনি তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ইউসুফ (আ.) আল্লাহ তাআলার সাহায্যে নিজেকে পবিত্র রাখেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, আর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল, আমি তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম এবং এভাবেই আমি ইহসানকারীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। আর যে নারীর ঘরে সে ছিল, সে তাকে কুপ্ররোচনা দিল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর বলল, ‘এসো’। সে বলল, আল্লাহর আশ্রয় চাই। নিশ্চয় তিনি আমার মনিব, তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় জালিমরা সফল হয় না। আর ওই নারী তার প্রতি আসক্ত হল আর সেও তার প্রতি আসক্ত হত যদি তার প্রতিপালকের নিদর্শন না দেখত। আমি তা দেখিয়েছিলাম তাকে অসৎ কাজ ও নির্লজ্জতা থেকে সরিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে, সে ছিল বিশুদ্ধ-হৃদয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (২২-২৪)

আরও পড়ুন:

নবী ইউসুফের (আ.) স্বপ্ন

পরবর্তীতে জুলেখার চক্রান্তে ইউসুফ (আ.) কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং বেশ কয়েক বছর কারাগারে কাটান। তারপর আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে ইউসুফ (আ.) মিশরের কারাগার থেকে মুক্ত হন। জুলেখাও স্বীকার করেন, ইউসুফের কোনো দোষ ছিল না, বরং তিনিই তাকে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, বাদশাহ বলল, তোমরা যখন ইউসুফকে কুপ্ররোচনা দিয়েছিলে তখন তোমাদের কী হয়েছিল? তারা বলল, মহিমা আল্লাহর! আমরা তার ব্যাপারে খারাপ কিছু জানি না। আজিজের স্ত্রী বলল, এখন সত্য প্রকাশ পেয়েছে, আমিই তাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছি। আর নিশ্চয় সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা ইউসুফ: ৫১)

কোরআনে ইউসুফ (আ.) ও জুলেখার কাহিনি এ পর্যন্তই বর্ণিত হয়েছে। ইউসুফ (আ.) জুলেখাকে বিয়ে করেছিলেন এ রকম কোনো তথ্য কোরআনে বর্ণিত হয়নি।

কিছু ইসরাইলি বর্ণনায় এসেছে, স্বামীর মৃত্যুর পর জুলেখা যখন বার্ধক্যে উপনীত, তখন ইউসুফের (আ.) দোয়ায় তিনি যৌবন ফিরে পেয়েছিলেন, ইউসুফের (আ.) সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং তাদের দুটি সন্তানও হয়েছিল। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম: ৮ / ৩৯০) কিন্তু কোরআনে বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত কোনো হাদিসে এই ঘটনা পাওয়া যায় না। তাই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না এই ঘটনা আসলেই ঘটেছিল কি না।

ইসরাইলি বর্ণনা অর্থাৎ ইহুদি বা খৃষ্টানদের ধর্মীয় সূত্র থেকে পাওয়া কোনো ঘটনা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করার উপায় নেই যেহেতু তাদের কাছে সংরক্ষিত আসমানি কিতাবসহ ধর্মীয় কোনো উৎসই নির্ভরযোগ্য নয়; এগুলোতে মানুষের বানানো বহু কাহিনি ও বিবরণ ঢুকে গেছে।

ওএফএফ

Read Entire Article