বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণ বছর হতে যাচ্ছে ২০২৫ সাল। জাতিসংঘের এক নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিশ্ব আরও গভীরভাবে নিমজ্জিত হচ্ছে জলবায়ু সংকটে এবং এর ফলে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫—এই তিন বছরই রেকর্ডভঙ্গ উষ্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে। চলতি বছরও রেকর্ড রাখা ১৭৬ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় উষ্ণতম বছর হওয়ার পথে রয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে আগামী সপ্তাহে ব্রাজিলে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০-এর আগে।
ডব্লিউএমও জানিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছরই ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে নথিভুক্ত হবে। পাশাপাশি, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আরও তাপ ‘লক ইন’ করে দিচ্ছে।
ডব্লিউএমও প্রধান সেলেস্ট সাওলো বলেন, এখন এটা স্পষ্ট যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা কার্যত অসম্ভব। তিনি ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, বিজ্ঞানের তথ্য বলছে, শতাব্দীর শেষ নাগাদ তাপমাত্রা আবার ১.৫ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনা এখনো সম্ভব ও অপরিহার্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিস চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে, এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখা। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব।
ডব্লিউএমওর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে পৃথিবীর গড় পৃষ্ঠতল তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। একই সঙ্গে, বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগরে তাপ ধারণের পরিমাণও বেড়েছে, যা ২০২৪ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ আরও ২.৩ শতাংশ বেড়েছে, যার মধ্যে ভারত ছিল শীর্ষে, এরপর চীন, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার ব্রাজিলে এক নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে এই ব্যর্থতাকে ‘নৈতিক ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি বছর যখন তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির ওপরে থাকে, তখন তা অর্থনীতি ধ্বংস করে, বৈষম্য বাড়ায় এবং পৃথিবীতে স্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনে। আমাদের এখনই দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে—যাতে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সময়কাল যতটা সম্ভব ছোট, নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত হয় এবং শতাব্দীর শেষ নাগাদ আমরা আবার ১.৫ ডিগ্রির নিচে ফিরতে পারি।

8 hours ago
6









English (US) ·