ইনকিলাব মঞ্চের নামে ফাঁদ পেতে ধরা কর কর্মকর্তা রেজাউল
নিজের পছন্দের জায়গায় বদলি হতে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছেন ৩৮তম বিসিএসের কর ক্যাডারের সহকারী কমিশনার মো. রেজাউল গনি। ইনকিলাব মঞ্চের নাম ব্যবহার করে ফাঁদ পেতে নিজেই ধরা খেলেন।
নিজ কর অঞ্চলের কমিশনার বরাবর সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিষদগার করে এক উড়ো চিঠি দেন তিনি। কর কমিশনার চিঠির তদন্ত করে দেখেন, হেডকোয়ার্টারে বদলির আশায় এই তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছেন এই কর্মকর্তা। আর একটি সংগঠনের নাম ব্যবহার করে নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই আটকে গেছেন।
ইতোমধ্যে এই কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। সম্প্রতি এই লঙ্কাকাণ্ডটি ঘটেছে কর অঞ্চল-গাজীপুরে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কর অঞ্চল গাজীপুরে গত ১০ ফ্রেবুয়ারি ইনকিলাব মঞ্চের নামে একটি উড়ো চিঠি আসে। এই চিঠিতে কর অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কর অফিস ভেঙে দেওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় ওই চিঠিতে।
এ ছাড়া কতিপয় কর্মকর্তাকে পরিবর্তন না করলে কর অঞ্চলে হামলা হওয়ার আশঙ্কার বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠি পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামেন কর কমিশনার খালেদ শরীফ আরেফিন। তদন্তে বেরিয়ে আসে তারই অধীনস্থ বিসিএস ৩৮তম ব্যাচের এক সহকারী কর কমিশনার তার গাড়ির চালকের মাধ্যমে চিঠিটি পোস্ট করিয়েছেন।
এই চিঠিটি আসে টাঙ্গাইলের একটি পোষ্ট অফিস থেকে। তদন্তের স্বার্থে পোস্ট অফিসের সিসিটিভি যাচাই করে সহকারী কর কমিশনারের অফিসের এক চালককে চিঠিটি পোষ্ট করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে গাড়ি চালককে জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করেন।
তাকে সহকারী কমিশনার রেজাউল গণি ওই চিঠি পোস্ট করতে পাঠিয়েছেন বলেও জানান চালক। গাড়ি চালকের স্বীকারোক্তির পর রেজাউল গণিও বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এই অনৈতিক কাজের জন্য ক্ষমা চেয়ে কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
সূত্র আরও জানায়, তদন্তে মো. রেজাউল গণির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে তার কাছে এমন কাজের ব্যাখ্যা চেয়েছেন কর অঞ্চল গাজীপুরের কমিশনার খালেদ শরিফ আরেফিন। কারণ দর্শানোর চিঠিতে বলা হয়েছে, ইনকিলাব জিন্দাবাদ মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ আল হাদির নাম ব্যবহার করে যে টিকানা থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তা ছিল ভুয়া ঠিকানা। আর চিঠির তথ্য অনুসন্ধান করে আপনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। খামের কোড ও টাঙ্গাইলের প্রধান ডাকঘরের সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন সাক্ষীর স্বীকারোক্তি প্রমাণিত হয় এর সঙ্গে আপনি জড়িত। আপনার পরিকল্পনা ও নির্দেশে এই গর্হিত কাজ করা হয়। এ বিষয়ে আপনার কৈফিয়ত তলব করা হলে আপনি স্ব-শরীরে এসে দোষ স্বীকার করেছেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। আপনার কাজ অসদাচরণের সামিল উল্লেখ করে রেজাউল গণির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন কমিশনার।
বিষয়টি নিয়ে জানতে কর অঞ্চল গাজীপুরে কর্মরত সহকারী কর কমিশনার রেজাউল গণির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তার বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে কর অঞ্চল গাজীপুরের কমিশনার খালেদ শরীফ আরেফিন কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি কর অঞ্চল তথা এনবিআরের জন্য বিব্রতকর বিষয়। প্রাথমিকভাবে আমরা অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে শোকজ করেছি। ইতোমধ্যে এর একটি ব্যাখ্যা পেয়েছি। এবার পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।