দেশের শেয়ারবাজারে রূপকথার ‘আলাদিনের চেরাগ’ এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে দুর্বল আর্থিক ভিত্তির প্রতিষ্ঠান ইনটেক লিমিটেড। মাত্র ১৮ দিনেই কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা থামেনি। বরাং দাম বাড়ার পালে যেন আরও হওয়া লেগেছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে।
এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার পছন্দের শীর্ষে থাকায় গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই দিনেই সর্বোচ্চ দামে কোম্পানিটির বিপুল শেয়ার কেনার আদেশ আসে। বিপরীতে বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে যায়। এতে এক সপ্তাহেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের ওপরে। স্বাভাবিকভাবে গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এই কোম্পানিটি।
গত সপ্তাহের লেনদেনের শুরুতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৮ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে বেড়ে সপ্তাহ শেষে ৪৫ টাকা ৩০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৭ টাকা ১০ পয়সা বা ৬০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ৫৩ কোটি ৫৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
কোম্পানিটি শেয়ারের এই দাম বাড়ার প্রবণতা চলছে গত ১৭ আগস্টের পর থেকেই। ১৭ আগস্ট কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২০ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ ১৮ দিনের ব্যবধানে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৪ টাকা ৪০ পয়সা বা ১১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
অন্যভাবে বলা যায়, যদি কোনো বিনিয়োগকারী গত ১৭ আগস্ট ইনটেক লিমিটেডের ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেন, তাহলে এখন (৪ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে) তার বাজার মূল্য ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬৪ টাকা। এ হিসেবে ১০ লাখ টাকা খাটিয়ে ১৮ দিনেই মুনাফা পাওয়া গেছে ১১ লাখ ৬৭ হাজার টাকার বেশি।
শেয়ারে এমন দাম এভাবে বাড়া কোম্পানিটির সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী লোকসানে পতিত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসের ব্যবসায় কোম্পানি শেয়ার প্রতি লোকসান করেছে ১১ পয়সা। আর ২০২৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৯ পয়সা লোকসান হয়েছে।
এমন একটি কোম্পানির শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় ডিএসইতে থেকে ২৬ আগস্ট, ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে ডিএসই থেকে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হয়। নোটিশের জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের যে দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
এদিকে কোম্পানিটির লভ্যাংশের অতীত ইতিহাসও খুব একটা ভালো না। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের দশমিক ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২৩ ও ২০২২ সালে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। তবে ২০২০ সালে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার ২২৬টি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫২ দশমিক ৭২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে দশমিক ২২ শেয়ার আছে।
ইনটেক লিমিটেডের পরে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে বিডিকম অনলাইন।
এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- শ্যামপুর সুগার মিলের ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ডের ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, জেনারেশন নেক্সট’র ২০ শতাংশ, বে-লিজিংয়ের ২০ শতাংশ, আমরা টেকনোলজির ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ, বিবিএস কেবলসের ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এমএএস/এমআরএম/এমএস