ইমাম দাউদ জাহিরি (রহ.)

ইমাম দাউদ জাহিরি (রহ.)-এর পূর্ণ নাম দাউদ ইবন আলি ইবন খলাফ আল-ইসফাহানি। তিনি ছিলেন ইসলামী ফিকহের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন ‘মাজহাবে জাহির’ বা ‘জাহিরি মাজহাব’-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা কোরআন ও সুন্নাহর সরল ও প্রত্যক্ষ অর্থ গ্রহণের ওপর ভিত্তি করে গঠিত একটি স্বতন্ত্র ফিকহি মতবাদ। তার জন্ম ইরানের ইসফাহান শহরে আনুমানিক ২০১ হিজরি (৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ) সালে এবং মৃত্যু ঘটে ২৭০ হিজরি (৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দ) সালে বাগদাদে। ইমাম দাউদ ছোটবেলায়ই তার পরিবারসহ বাগদাদে চলে আসেন, যেখানে তিনি মহান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আলেমদের সংস্পর্শে আসেন। তিনি অল্প বয়সেই কোরআন মুখস্থ করেন এবং হাদিস ও ফিকহে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি ছিলেন ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর শিষ্যদের অন্যতম ছাত্র এবং শাফেয়ী ফিকহের ওপর প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরে তিনি ফিকহে স্বাধীন মত প্রতিষ্ঠা করেন, যা থেকে ‘জাহিরি মাজহাব’-এর উৎপত্তি ঘটে। ইমাম দাউদ জাহিরি (রহ.)-এর ফিকহি পদ্ধতি মূলত নস (কোরআন ও সহিহ হাদিস)-এর বাহ্যিক (জাহির) অর্থ গ্রহণের ওপর ভিত্তি করে। তিনি মনে করতেন, শরিয়তের বিধান ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে কিয়াস (আনুমানিক যুক্তি),

ইমাম দাউদ জাহিরি (রহ.)
ইমাম দাউদ জাহিরি (রহ.)-এর পূর্ণ নাম দাউদ ইবন আলি ইবন খলাফ আল-ইসফাহানি। তিনি ছিলেন ইসলামী ফিকহের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন ‘মাজহাবে জাহির’ বা ‘জাহিরি মাজহাব’-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা কোরআন ও সুন্নাহর সরল ও প্রত্যক্ষ অর্থ গ্রহণের ওপর ভিত্তি করে গঠিত একটি স্বতন্ত্র ফিকহি মতবাদ। তার জন্ম ইরানের ইসফাহান শহরে আনুমানিক ২০১ হিজরি (৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ) সালে এবং মৃত্যু ঘটে ২৭০ হিজরি (৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দ) সালে বাগদাদে। ইমাম দাউদ ছোটবেলায়ই তার পরিবারসহ বাগদাদে চলে আসেন, যেখানে তিনি মহান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আলেমদের সংস্পর্শে আসেন। তিনি অল্প বয়সেই কোরআন মুখস্থ করেন এবং হাদিস ও ফিকহে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি ছিলেন ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর শিষ্যদের অন্যতম ছাত্র এবং শাফেয়ী ফিকহের ওপর প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরে তিনি ফিকহে স্বাধীন মত প্রতিষ্ঠা করেন, যা থেকে ‘জাহিরি মাজহাব’-এর উৎপত্তি ঘটে। ইমাম দাউদ জাহিরি (রহ.)-এর ফিকহি পদ্ধতি মূলত নস (কোরআন ও সহিহ হাদিস)-এর বাহ্যিক (জাহির) অর্থ গ্রহণের ওপর ভিত্তি করে। তিনি মনে করতেন, শরিয়তের বিধান ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে কিয়াস (আনুমানিক যুক্তি), ইস্তিহসান (ব্যক্তিগত পছন্দ) এবং ইস্তিসলাহ (সামাজিক কল্যাণ) প্রয়োগ করা উচিত নয়, কারণ এগুলো আল্লাহর বাণী ও রাসুলের বাণীর বাইরে ব্যক্তিগত মতামত প্রবেশ করায়। এ অবস্থান তাকে অন্যান্য ইমাম থেকে স্বতন্ত্র করে তোলে। ইমাম দাউদ যুক্তি ও ভাষাগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোরআন-হাদিসের অর্থ ব্যাখ্যা করতেন। তার মতে, আল্লাহ ও তার রাসুল যে বিষয় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেছেন, তার বাইরে মানুষের জন্য নতুন কোনো বিধান প্রণয়ন বৈধ নয়। এজন্যই তার অনুসারীদের বলা হয় ‘জাহিরি’ অর্থাৎ, বাহ্যিক বা প্রকাশ্য অর্থের অনুসারী। ইমাম দাউদ (রহ.)-এর জ্ঞানচর্চা ছিল বিস্তৃত। তিনি শুধু ফিকহ নয়, হাদিস, তাফসির, আরবি ভাষাতত্ত্ব ও যুক্তিবিদ্যাতেও দক্ষ ছিলেন। তিনি অসংখ্য ছাত্র গড়ে তুলেছিলেন, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইবন হাজম আল-আন্দালুসি (রহ.), যিনি পরবর্তীকালে জাহিরি মাজহাবকে আন্দালুস ও উত্তর আফ্রিকায় প্রসারিত করেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আল-ইজতিহাদ, আল-ইজাহ ফি উসুলিল আহকাম, আন-নাসিখ ওয়াল মানসুখ, আল মুজাররাদ ফিল ফিকহ ইত্যাদি। যদিও তার অধিকাংশ গ্রন্থ আজ বিলুপ্ত, তবুও তার চিন্তাধারার প্রতিফলন ইবন হাজম ও অন্যান্য পরবর্তী জাহিরি আলেমদের রচনায় সংরক্ষিত আছে। ইমাম দাউদ জাহিরি (রহ.) ২৭০ হিজরি সালে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর তার মাজহাব ক্রমান্বয়ে কিছু অঞ্চলে বিলুপ্ত হলেও আন্দালুসে এটি দীর্ঘকাল ধরে প্রভাব বিস্তার করে। তার অবদান ইসলামী চিন্তায় আক্ষরিক ব্যাখ্যা, যুক্তিনির্ভর সংযম এবং শুদ্ধ উৎসের প্রতি আনুগত্য—এ তিনটি নীতিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইমাম দাউদ জাহিরি (রহ.) ছিলেন এমন এক আলেম, যিনি ইসলামী আইনকে মানবমত থেকে পৃথক রেখে কোরআন ও সুন্নাহর মূল রূপ সংরক্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। তার নাম ইসলামী বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে একজন অটল, নীতিনিষ্ঠ ও স্বাধীনচেতা ফকিহ হিসেবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow