চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র জনতা। এ সময় ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার দাবি করেন তারা।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ৯টায় শহীদ জোহা চত্বরের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোহা চত্বরে মিলিত হতে দেখা যায়। পরে জোহা চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ‘জঙ্গি জঙ্গি, ইসকন জঙ্গি’, ‘এক দুই তিন চার, ইসকন তুই দেশ ছাড়’, ‘একশন একশন, ডাইরেক্ট একশন’,‘আমার সোনার বাংলায়, উগ্রবাদের ঠাই নাই’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে হিন্দু মুসলমানসহ সকল ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে আন্দোলন করেছিলেন ছাত্র-জনতা। কিন্তু পতিত সরকারের দোসর ও দিল্লির ষড়যন্ত্রে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্র চলছে। সেই উদ্দেশ্যেই চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ১০টায় ইসকনকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান তারা।
আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মিছিল -স্লোগানে উত্তল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যাললেয়র বটতলা এলাকা থেকে মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রায় সব আবাসিক হল প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে গায়েবানা জানাজা হয়। জানাজার আয়োজন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব লোহাগড়া-সাতকানিয়া।
গায়েবানা জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া তাদের সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। গায়েবানা জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে যান। এসময় তারা ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।
একই ঘটনার প্রতিবাদ এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে বুয়েটের বিভিন্ন হল থেকে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এরপর সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে পলাশী-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন। এরপর মিছিলটি আবারও ভিসি চত্বর-ফুলার রোড হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।
চট্টগ্রামে ইসকনের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভে করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘ইস্কনের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘দিল্লি না ঢাকা’, ‘জঙ্গি জঙ্গি ইস্কন জঙ্গি’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভ মিছিলটি আবু সাঈদ চত্বর থেকে মডার্ন হয়ে পুনরায় প্রধান ফটকে বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় ইস্কনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে জাকের হোসেন পাশা বলেন, আমাদের একজন ভাইকে চট্টগ্রামে গলা কেটে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইস্কন প্রমাণ করেছে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন। আমরা বায়ান্ন, একাত্তর ও জুলাই বিপ্লবে রক্ত দিয়েছি। সুতরাং কেউ সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করলে তাকে ছাত্র সমাজ প্রতিহত করবে।
এদিকে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়ে ওই বিক্ষোভ-মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কে আর মার্কেট, উপাচার্যের বাসভবন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আব্দুল জব্বার মোড়ে এসে শেষ হয় এবং সেখানে পরবর্তীতে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে বাকৃবির বিভিন্ন হল থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার ঘুরে পুনরায় প্রধান ফটকে এসে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়।
বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘ইসকনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘উগ্রবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ইসকনের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ইসকন ইসকন, জঙ্গি জঙ্গি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, চট্টগ্রামের আদালত পাড়ায় যে নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তাতে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অনতিবিলম্বে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইসকনের সদস্যদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ২৪ এর ছাত্রজনতা আবারও জাগ্রত হবে।
এছাড়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদে পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইসকন সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ মিছিল করেন।
পটুয়াখালী শহরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তা এলাকায় গিয়ে এক পথসভায় মিলিত হয়। পথসভা শেষ মিছিলটি ফোরলেন সড়ক হয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়।
একই সময় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। এছাড়া পটুয়াখালী দুমকি উপজেলায় অবস্থিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যম্পাসে এবং বাবুগঞ্জ ক্যাম্পাসেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনের সড়কে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে ইসকন সমর্থকদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন।
এফএ/এমএস