ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) তিনটি ছাত্রী হলে নেই কোনো নারী প্রভোস্ট। সবগুলো হলেই প্রভোস্ট পদে রয়েছেন পুরুষ শিক্ষক। এতে স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা ও নারীবান্ধব পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
বর্তমানে জুলাই-৩৬ হল অধ্যাপক ড. একেএম শামসুল হক, উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হলে অধ্যাপক ড. একেএম রাশেদুজ্জামান এবং খালেদা জিয়া হলে অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
হল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রী হলে টিউটর পদে একাধিক নারী শিক্ষক থাকলেও সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বে একজনও নেই। জুলাই-৩৬ হলে দুজন হল টিউটরের মধ্যে একজন, খালেদা জিয়া হলে চারজনের মধ্যে দুজন এবং উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হলে তিনজনের মধ্যে একজন নারী শিক্ষক রয়েছেন।
তিন হলে ‘হল টিউটর’ পদে একাধিক নারী শিক্ষক থাকলেও হলের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে (প্রভোস্ট) কোনো নারী শিক্ষক না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ও ছাত্রীদের হল ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে প্রভোস্ট পদে নারী শিক্ষক রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন:
- অভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকা রাখায় ‘ফ্যাসিস্ট’ ১৯ শিক্ষককে শোকজ
- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের উদ্বোধন
- বহিষ্কৃত শিক্ষকের নাম-ছবি এখনো ওয়েবসাইটে!
- গবেষণায় বরাদ্দ মাত্র দেড় শতাংশ!
- মৃত্যুর আগে একা হয়ে পড়েছিলেন বন্ধুপ্রিয় সাজিদ আব্দুল্লাহ
বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্রী হলে নারী প্রভোস্ট নিয়োগ শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ব ও নিরাপত্তার অংশ। তবে ইবির একটি ছাত্রী হলেও নারী প্রভোস্ট নেই। নারী প্রভোস্ট থাকলে ছাত্রীদের সমস্যাগুলো সহজেই বোঝা ও সমাধান করা সম্ভব হতো। ছাত্রীদের স্বাস্থ্য, শারীরিক অসুস্থতা, আবাসন সংক্রান্ত অসুবিধার ক্ষেত্রে একজন নারী প্রভোস্ট বেশি সহানুভূতিশীল ও কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
‘ছাত্রী হলে নারী প্রভোস্ট নিয়োগ শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ব ও নিরাপত্তার অংশ। তবে ইবির একটি ছাত্রী হলেও নারী প্রভোস্ট নেই। নারী প্রভোস্ট থাকলে ছাত্রীদের সমস্যাগুলো সহজেই বোঝা ও সমাধান করা সম্ভব হতো।’
জুলাই ৩৬ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘হলে পুরুষ প্রভোস্ট থাকায় মাঝে মাঝে আমরা বিব্রত হই। মুসলিম ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্দার একটি বিষয় রয়েছে। স্যার মাঝে মধ্যে ফ্লোরে আসেন, যদিও সঙ্গে একজন আয়া থাকে এবং তিনি অ্যালার্ম করেন। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ, বাথরুম বা অনুষ্ঠান সংক্রান্ত কাজে সারাক্ষণ পুরুষ কর্মচারীরা হলে আসেন। এসব আমাদের জন্য অস্বস্তিকর।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রভোস্ট আসার পর অনেক জায়গায় পর্দা দেওয়া হয়েছে। তবুও অফিসে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা বেশি। সেখানে নারী কর্মী দ্বারাও সেসব কাজ করানো সম্ভব।’
আরও পড়ুন:
- থাপ্পড়-ঘুষির পর ভিডিও করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো ছাত্রীকে
- ‘আজীবনের জন্য ছাত্রদল-বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম’
- পারিবারিক কারণ দেখিয়েও রাজনৈতিক বিবেচনায় ভর্তি ছাত্রদল নেতা
- ইবি ছাত্রদলের নেতৃত্বে ‘সেশনজট’
আরেক শিক্ষার্থী অর্পা ঘোষ বলেন, ‘একজন নারী প্রভোস্ট যেভাবে ছাত্রীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়, চাহিদাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারেন, একজন পুরুষ প্রভোস্ট সেভাব নাও বুঝতে পারেন। বিভিন্ন সময় অনেক বিষয়ে যথাযথ নারীবান্ধব ব্যবস্থাপনা দেখা যায় না। ছাত্রী হলে অবশ্যই নারী প্রভোস্ট দেওয়া উচিত।’
‘আমি নিজেও মেয়েদের হলে নারী প্রভোস্ট দিতে চাই। তবে বর্তমানে জুলাইয়ের পক্ষ শক্তিদের মধ্যে নারী অধ্যাপক সংকট থাকায় এই ক্রাইসিস তৈরি হচ্ছে। মেয়েদের হলে নারী প্রভোস্টই যথোপযুক্ত।’
তিন হলে কোনো নারী প্রভোস্ট না থাকার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী অধ্যাপকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। হল প্রভোস্ট দিতে গেলে অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় সমস্যায় পড়তে হয়। সবাই দায়িত্ব নিতে চান না। আর যারা আগে মেয়েদের হলে দায়িত্বে ছিলেন, তারা আওয়ামীপন্থি বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী শিক্ষক ছিলেন।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমি নিজেও মেয়েদের হলে নারী প্রভোস্ট দিতে চাই। তবে বর্তমানে জুলাইয়ের পক্ষ শক্তিদের মধ্যে নারী অধ্যাপক সংকট থাকায় এই ক্রাইসিস তৈরি হচ্ছে। মেয়েদের হলে নারী প্রভোস্টই যথোপযুক্ত।’
এসআর/এমএস