ইসলামের দৃষ্টিতে যে ৫ কারণে ভোট দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের তপশিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে আগেই রেকর্ড করা ভাষণের মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। সিইসি বলেন, আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ৩০০ আসনের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাইয়ে গ্রহণকৃত জাতীয় সংবিধান সংশোধন বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫-এর ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। বাংলাদেশে অনেকে সংসদে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা নির্বাচন বা ভোটগ্রহণকে কেবল ভিআইপি মর্যাদা হাসিল করা, আধিপত্য অর্জন করা, জনগণকে শোষণ করার একটি মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করেন। তাই অনেক ভোটারের দৃষ্টিতেই ভোটের গুরুত্ব থাকে খুবই সামান্য। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামে কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ খুবই ব্যাপক এবং সুদূর প্রসারী। শরিয়তের দৃষ্টিত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের তপশিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে আগেই রেকর্ড করা ভাষণের মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
সিইসি বলেন, আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ৩০০ আসনের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাইয়ে গ্রহণকৃত জাতীয় সংবিধান সংশোধন বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫-এর ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বাংলাদেশে অনেকে সংসদে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা নির্বাচন বা ভোটগ্রহণকে কেবল ভিআইপি মর্যাদা হাসিল করা, আধিপত্য অর্জন করা, জনগণকে শোষণ করার একটি মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করেন। তাই অনেক ভোটারের দৃষ্টিতেই ভোটের গুরুত্ব থাকে খুবই সামান্য।
অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামে কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ খুবই ব্যাপক এবং সুদূর প্রসারী। শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার বেশ কিছু দিক রয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের প্রখ্যাত আলেম মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) তার এক নিবন্ধে বলেন, ভোটের তিনটি দিক রয়েছে— সাক্ষ্য, সুপারিশ ও যৌথ বিষয়ে প্রতিনিধি নিয়োগ। তিন বিবেচনায়ই নেককার ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া সওয়াবের কাজ এবং দুনিয়ায়ও এর সুফল আছে। একইভাবে অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া মিথ্যা সাক্ষ্য, মন্দ সুপারিশ ও অন্যায় প্রতিনিধি নিয়োগ। এর গোনাহ ব্যক্তির আমলনামায় লেখা হবে এবং দুনিয়াতে মন্দ পরিণামও ভোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে অযোগ্য, অত্যাচারী, পাপাচারী ও ভুল ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া যেমন গোনাহের কাজ, তেমনি একজন ভালো, নেককার ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া সওয়াবের কাজ, বরং শরয়ি দায়িত্ব। কেননা পবিত্র কোরআনে যেমন মিথ্যা সাক্ষ্য থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনি সত্য সাক্ষ্য দেওয়া ওয়াজিব ও আবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সাক্ষ্য গোপন কোরো না, যে ব্যক্তি তা গোপন করে অবশ্যই তার অন্তর পাপী। তোমরা যা করো আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত’ (সুরা বাকারাহ : ২৮৩)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর জন্য সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা তালাক : ২)
মুফতি শফির ভাষায়, এসব আয়াতে সত্য সাক্ষ্য গোপন না করে তা প্রদান করা মুসলমানদের ওপর আবশ্যক করা হয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন কেন্দ্র করে যেসব অপ্রীতিকর ও নিন্দনীয় বিষয় সামনে আসছে তার বড় কারণ হলো নেক ও যোগ্য লোকেরা সাধারণত ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকেন। এ জন্য কোনো অঞ্চলে কোনো নেককার ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করলে তাকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম এবং দেশ-জাতির প্রতি অবিচারের শামিল।
আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, নির্বাচনে ভোটের সর্বনিম্ন শরয়ি অবস্থান হলো তা সাক্ষ্য, যা গোপন করা, তাতে মিথ্যা বলা এবং বিনিময় নিয়ে ভোট দেওয়া হারাম।
আরও পড়ুন : খোলা তালাকের পর অন্যত্র বিয়ে ছাড়া কি পূর্বের স্বামীকে বিয়ে করা জায়েজ?
আরও পড়ুন : ‘খোলা তালাক’ কাকে বলে, এর হুকুম কী
প্রখ্যাত এই আলেম বলেন, ভোটকে শুধু রাজনৈতিক বিষয় ও পার্থিব খেল-তামাশা মনে করা বড় ভুল। কেননা আপনি যে প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন, আপনি তার পক্ষে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে আমার দৃষ্টিতে জ্ঞান-বুদ্ধি, কাজকর্ম ও বিশ্বস্ততার বিচারে তিনি যোগ্য এবং অন্য প্রার্থীদের তুলনায় উত্তম। যেসব উদ্দেশ্যে এসব নির্বাচন হচ্ছে তার বাস্তবতা সামনে রাখলে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তগুলো চলে আসে—
১. আপনার ভোট ও সাক্ষ্যের কারণে যে ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হয়ে সংসদে যাবেন, তার মাধ্যমে যত ভালো বা মন্দ কাজ হবে তার দায়দায়িত্ব আপনার ওপর বর্তাবে। আপনি পাপ ও পুণ্যের সমান অংশীদার।
২. মনে রাখতে হবে, যখন কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে মানুষ কোনো ভুল করে, তখন তার প্রভাব ওই ব্যক্তির ওপর সীমাবদ্ধ থাকে, সওয়াব ও গুনাহও সীমাবদ্ধ থাকে। আর যখন দেশ ও জাতির কোনো বিষয়ে ভুল করে তখন এর প্রভাব পুরো জাতির ওপর পড়ে। এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো ছোট একটি ভুল পুরো জাতির ধ্বংসের কারণ হয়ে যায়। এ জন্য এর প্রতিদান ও শাস্তিও বহুগুণে বেড়ে যায়।
৩. কোরআনের দৃষ্টিতে সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হারাম। সুতরাং আপনার নির্বাচনী এলাকায় যদি কোনো বিশুদ্ধ বিশ্বাস ও চিন্তার অধিকারী কোনো প্রার্থী নির্বাচন করা হয়, তবে তাকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি করা গোনাহের কাজ।
৪. যে প্রার্থী ইসলামবিরোধী মনোভাব পোষণ করেন, তাকে ভোট দেওয়া মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার নামান্তর ও গোনাহের কাজ।
৫. টাকার বিনিময়ে ভোট দেওয়া নিকৃষ্টতম ঘুষ। সামান্য অর্থের বিনিময়ে দেশা ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেই ব্যক্তি যে অন্যের পার্থিব জীবন সাজাতে গিয়ে নিজের দ্বিনদারি ধ্বংস করে।
দাওয়াতে দিন ডটকম অবলম্বনে অনূদিত
What's Your Reaction?