ইসিতে দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ, এনসিপিসহ আলোচনায় যারা

8 hours ago 5

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই–বাছাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্তত ২২টি দল উত্তীর্ণ হয়েছে। দলের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে তদন্তের পরে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে এনসিপিসহ দুটি দল। তবে অন্যান্য দলগুলো যেন নিবন্ধন পেতে পারে সেই জন্য ইসিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসির নিবন্ধন পেতে কিছু দল আলোচনায় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম এনসিপি ও ডেসটিনি গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিসহ কয়েকটি দল। দলগুলো নিবন্ধন পেতে ইসিতে দৌড়ঝাঁপ করছে। তবে নিবন্ধনের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত করেনি ইসি।

নিবন্ধন পেতে আগ্রহী এমন ২২টি দলকে ডাকে ইসি। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিবন্ধন পেতে আগ্রহী এমন ১৩টি দলের প্রতিনিধির সঙ্গে ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নতুন দলগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়ে অবগত করেছে ইসি। তারপরও নতুন দলগুলোর দাবি তারা সব চাহিদা পূরণ করেই নতুন দলের নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে।

এ বিষয়ে কথা হলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ২২টি দলের তথ্য যাচাইয়ের জন্য মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল। সবগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসেছে। কমিশন নতুন দলকে নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে নেই। তাই পরবর্তীতে যাতে দোষারোপ করতে না পারে তাই দলগুলোকে আবার ডেকে তাদের কথা শোনা হচ্ছে। আজকে সব দল আসেনি। সব দলকেই ডাকা হবে।

তিনি বলেন, আজকে যারা এসেছিলেন তাদের কোনো ঘাটতি থাকলে তা দেখানো হয়েছে, পাশাপাশি তা আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিবন্ধন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), আম-জনতার দল (তারেক), নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি), বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জাতীয় জনতা পার্টি (ওসমানী), মৌলিক বাংলা, জনতার দল, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, জাসদ (শাহজাহান সিরাজ), ফরওয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (কমরেড ডা. এম এ সামাদ-সভাপতি), বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির প্রতিনিধি ইসিতে এসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

মৌলিক বাংলার সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ সাকী বলেন, আমরা ইসিতে বৈঠক করেছি। একটি নতুন দলের নিবন্ধন পাওয়ার জন্য যা যা দরকার সব কিছু দিয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি নিবন্ধন পাবো।

এর আগেও আবেদন করে নিবন্ধন পায়নি বাংলাদেশ বেকার সমাজ। যে কারণে দলটি ২০২৩ সালে ইসির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। নিবন্ধন পেতে দলটি মামলার কপিসহ সাবমিট করে ইসিতে। দলটি নিবন্ধন পেলে মামলা তুলে নেবে। অন্যদিকে নিবন্ধন না দিলে মামলা চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

দলটির সভাপতি মো. হাসান বলেন, আমরা এর আগে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমাদের মামলা হাইকোর্টে চলমান। আমরা নিবন্ধন যদি পায় তবে মামলা তুলে নেবো। নিবন্ধন না পেলে মামলা চলমান থাকবে। আজকে ইসিতে গিয়েছিলাম দেখা যাক কি হয়। আশা করি নিবন্ধন পাবো।’

গত ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করে দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এরপর সবকটি দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত এনসিপিসহ ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।

যাচাই–বাছাই শেষে উত্তীর্ণ হওয়া ২২টি দল হলো-ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।

এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫০টি। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। এখন পর্যন্ত যেসব দল ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তার বেশির ভাগই নামসর্বস্ব। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। তবে বেশির ভাগই ছিল নামসর্বস্ব দল। প্রাথমিক নথিপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়েছিল ৮১টি দলের আবেদন। শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন পেয়েছিল নামসর্বস্ব দুটি দল।

জাতীয় নির্বাচন–সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কিছু শর্তের উল্লেখ আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক–তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় ও অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।

এর বাইরে নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান থাকতে হয়। যেমন কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা, সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ নারীদের জন্য নির্ধারিত রাখা এবং পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা শ্রমিক ও অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না থাকা ইত্যাদি।

এমওএস/এমএএইচ/জিকেএস

Read Entire Article