ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে হালের ডিপ স্টেট- একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ

5 months ago 87

অখণ্ড ভারতবর্ষে দু-শো বছরের গোলামির জিঞ্জির পরাতে আরব সাগরের তীরে ভিড়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লাল ফৌজের ব্রিটিশ বেনিয়ারা। ব্যবসায়ী বণিকেরা বিকিকিনির অজুহাতে প্রবেশ করে পুরো ভারতবর্ষে সাম্রাজ্যবাদের নখরে গিলে নিয়েছিল রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনৈতিক কাঠামো। বিশ্বের দেশে দেশে ঔপনিবেশিক প্রভুদের তৎপরতা ছড়িয়েছিল এই বাণিজ্যিক প্রভু বণিকদের হাত ধরেই। হালের সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশবাদের নয়া কৌশলে দাবার ছকের নতুন গুটি জর্জ সোরেসের "ডিপ স্টেট"!

একালের কাবলিওয়ালারা আক্রান্ত নিজ দেশীয় দোসরদের মাধ্যমেই সেই সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে দেশে দেশে। আর ডিপস্টেটের প্রভুরা দেশীয়র দোসরদের ব্যবহারের পর কাজ শেষে ছুড়ে ফেলে দেবে আস্তাকুঁড়ে। তবে ততদিনে সাড়ে সর্বনাশ যা হবার সেই ষোল কলা পূর্ণ হবে আক্রান্ত সেই দেশ ও আম জনতার ভাগ্যে নেমে আসবে পরাধীনতার পোয়া বারো অবস্থা। ব্যবসা ভূমির স্বত্ব আর মালিকানা হারিয়ে নিকষ কালো আঁধারে নিমজ্জিত হবে জনমানুষেন ভাগ্য। যদিও একটি অংশের মানুষের মগজের ধোলাই-ওয়াশে ব্যবহৃত মরফিনের ঘোর কেটে গেলে নিজের পশ্চাদ্‌দেশে নিজেরাই থাপড়াবেন। এর আগেই যদি মোহ কেটে সচেতন হোন তবেই না মুক্তির দেখা মিলবে। তাই বলি কি, দেশ মানে মানবের মা, মাটি আর জন্ম ও মৃত্যুর ঠিকানা।

আমার গভীর বিশ্বাস মানুষ হিসেবে সব ভালো এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক হতে পারে না। হওয়া উচিত নয়। জীবনের গভীর জলতরঙ্গের নিরবে-নিভৃতে বইছে জগৎ-সংসারের সকলের সম্মিলিত কল্যাণ। সুখ আনন্দ আর বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা এবং হালের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা। তবে সেই চিন্তার স্বাধীনতা যেন সমাজ ও রাষ্ট্রের আর কোন জনগোষ্ঠীর মত ও মতাদর্শে ন্যূনতম আঘাত না করে। জীবনের গভীর এমন সব মর্মার্থ ভুলে পুরো জগৎ সংসার কেন একলা ভোগ বিলাসের জীবনে মেতেছে? সেখান থেকেই শুরু হয়েছে দেশে-দেশে, রাষ্ট্রে-সমাজে সকল অস্থিরতা। এই ভোগী-বিলাসী লিপ্সু একাকী ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনের রাস টেনে ধরা উচিত। ব্যক্তি-গোষ্ঠীর দখলে থাকা মৌলিক নীতির সকল সূচক গুলো জনমানুষের সকলের জন্য নিশ্চিত করা গেলই রাষ্ট্র সমাজে এবং দেশে দেশে অস্থিরতা কমবে। তবে ব্যক্তির ভোগী লিপ্সায় রাষ্ট্র যন্ত্রের কাঁধে আজ যে যুদ্ধের জোয়াল চেপে বসেছে সেই জগদ্দল পাথর চাপা মানবিকতাকে উদ্ধার করার দায় ব্যক্তি- গোষ্ঠীরই।

আমার গভীর বিশ্বাস মানুষ হিসেবে সব ভালো এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক হতে পারে না। হওয়া উচিত নয়। জীবনের গভীর জলতরঙ্গের নিরবে-নিভৃতে বইছে জগৎ-সংসারের সকলের সম্মিলিত কল্যাণ। সুখ আনন্দ আর বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা এবং হালের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা। তবে সেই চিন্তার স্বাধীনতা যেন সমাজ ও রাষ্ট্রের আর কোন জনগোষ্ঠীর মত ও মতাদর্শে ন্যূনতম আঘাত না করে।

এধারা একজন নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং, চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত নেতৃত্বের প্রয়োজন। অদ্ভুত হলেও সত্য গত অর্ধ শতকে তাদের মত মানবতাকামী জনমানুষের মুক্তির জননায়ক পুরো বিশ্বেই খুব বেশি আসেন নি। বলা চলে দেশে দেশে উদার, জীবনের গভীর অর্থের ভাব পড়তে পারা জনমানুষের কণ্ঠস্বর মানবিক মননের চিন্তাশীল নেতার জন্ম হয় নি। চলতি শতাব্দীতে বিশ্বের দেশে জন্ম হয়েছে ধনিক শ্রেণীর মেধাবী এক একজন আইকন বিল গেটস, জ্যা মা, স্টিভ জবস, মার্ক জুকারবার্গ এর মত বিশ্ব মানের মেধাবীরা।

এদের কল্যাণে বিশ্বে প্রযুক্তির সুপার সব পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে। এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং ব্লক চেইনড, ইন্টারনেট অব থিংক-আইওটি ডেটা সায়েন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিআর-ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মত প্রযুক্তির অভাবনীয় প্রসার ঘটেছে। যা মানুষের জীবন জীবিকা ও চিন্তার প্যাটার্ন বদলে দিয়েছে। বিজ্ঞানের জয়ে গতি পেয়েছে প্রগতি তবে মানুষের আবেগ আনন্দ ও জীবন বোধে এতটা ধাক্কা লেগেছে যে, মানুষ তার সহজাত বুদ্ধিবৃত্তিক মানবিক সত্তা প্রায় হারাতে বসেছে! তা না হলে যে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মানুষের অমরত্বের পিছে গবেষণা কাজে অর্থ জোগাচ্ছেন যে ধনকুবের ইলন মাস্ক সেই তিনি কেন জীবন্ত মানুষের কদর বুঝতে চান না।

কেন আজ বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস মানুষ মারার মারণাস্ত্র? সেসব দেশের অর্থনীতিতে জিডিপি বা মূল আয়ের জোগান আসে মারণাস্ত্র বেচে? দ্বিচারী মানুষ, একদিকে অমরত্বের সন্ধানে সিন্ধু সেচে মুক্তো খোঁজার পালে হন্যে হয়ে বিনিয়োগ করছে৷ আর ঠিক ৯০ ডিগ্রির বিপরীতে, এই সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত মানবকে মারার জন্য প্রযুক্তির সর্বশেষ উত্তরণে গড়ছে মানব ধ্বংসের লীলা-লাস্যের সেই ঘাতক পার-মানবিক মারণাস্ত্র? এটা কী ভাবা যায়!

গত এক শতাব্দীতে এর বিপরীতে কোনো মানবিক জীবন ও জগৎ সংসারের মায়াবী প্রেমের বুনিয়াদি ঘোরে কোন নেতা, চিন্তা শীল প্রযুক্তিবিদ কিংবা রাষ্ট্র নায়কের জন্ম হলো না। বরং নিছক ব্যবসায়িক চিন্তাধর বিশ্ব ধনভান্ডারের রথী মহারথীরা হচ্ছে রাষ্ট্রনায়ক। আর একারণে হামলে জোর করে লুটে নেওয়ার নয়া কৌশলে ঔপনিবেশিক প্রভুদের তৎপরতা আজ বিশ্বময়। তারা মূলত তিনটি পদ্ধতিতে অন্ত্রের বাজার বিকাতে তাদের তাবৎ রাষ্ট্রীয় নীতির গুটি সাজিয়ে রাজা, উজির আর ঘোড়ার চাল দিচ্ছে। প্রথমত যারা একদিকে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে নিজেদের মূল অর্থকরী উৎপাদনের মারণাস্ত্রের বিকিকিনি বাজার নিশ্চিত করছে। দ্বিতীয়ত এর জন্য পররাষ্ট্র নীতিতে খু্ব অভিজাত প্রক্রিয়ায় বিশ্বের দেশগুলোকে অস্ত্র কেনাতে উদ্বুদ্ধ করছে। তৃতীয়ত খুব জঘন্য এক প্রক্রিয়ায় ডিপ স্টেটের তত্ত্বের মামুলি ঝোলায় দেশে দেশে সরকার উৎখাতের নয়া তরিকা নিয়ে ঘুরছে।

সাম্রাজ্যবাদের একালের কাবুলিওয়ালারা মেতেছে ঘৃণ্য এক নীতি নৈতিকতাহীন স্বাধীন সব দেশের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপের খুবলে খাওয়া নীতিতে। অপেক্ষাকৃত সীমিত সম্পদ আর বিপুল জনগণের যত মত তত পথের জনগোষ্ঠীর দেশগুলোতে উসকে দিচ্ছে আবেগের আস্ফালন। গণতন্ত্রের তরিকা বাতলে মানবিকতার নয়া নখরের থাবা দেখিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামোতে বিভাজনের নোংরা খেলায় মেতেছে। একালের কাবলিওয়ালা দেশের অভ্যন্তরে থাকা "সোসাইটি কাকদের" জড়ো করতে ডেকে ডেকে ভাত ছড়াচ্ছে।

দেশের ভেতরে জনমানুষের আবেগ ক্যাচ করে মুনাফেকি কৌশলে সেই উড়ে এসে জুড়ে বসা কাকেরা শৃঙ্খলার গণ্ডি ভেদ করে অরাজকতা আর নৈরাজ্যের ত্রাস সৃষ্টি করছে। তাদের পরিকল্পিত তরিকায় একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের কাঠামোতে নয়ছয় করেই খ্যান্ত হচ্ছে না। বরং নিজ দেশের নিজস্ব মানুষের সকলের সাথে সকলের বিভাজন ও দ্বিমতের ব্যবধান গড়ে গোলা পানিতে মাছ শিকার করছে। আর ঘৃণিত একাজে ডিপ স্টেটের তল্পিবাহক জর্জ সোরেসের বাম জাতে নিজ ভূ-খণ্ডে বসে নিজ দেশের মানুষে-মানুষে, ধর্ম বিশ্বাস, দল মত আর রাজনৈতিক আদর্শের পার্থক্যের স্বাভাবিক দ্বন্দ্বের দৈত্য রূপ দিচ্ছেন। এতে যে মানুষে মানুষে বিভাজন ও মত পার্থক্য যত বাড়বে ততই দেশে দেশে "ছায়া সরকারের" নগ্ন ছোবল এক-একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নাক গলানো ততই সহজ হবে।

স্থানীয় ব্যবসা আর ব্যবসায়ীদের ধরাশায়ী করে ভিন্ন দেশীয় বেনিয়ারা হাতিয়ে নেবেন আরেক দেশের ব্যবসা, বন্দর, আর শিল্প খাতের নানান জোগানদাতা অর্থকরী সহায় ও সম্পদ। তাই তো, ব্যবসায়িদের হাহাকারে আর্তনাদে বলতে শোনা যায়। সম্প্রতি বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল তেমনই এক আর্তনাদ করে বলেছেন, "১৯৭১ সালে যেভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছে সেভাবে এখন দেশের ব্যবসায়ীদের মেরে ফেলা হচ্ছে, শিল্পে গ্যাস নেই, একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে, কিন্তু উপদেষ্টারা মনে হয় উটপাখির মতো বালুর মধ‍্যে মাথা গুঁজে আছেন, কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না, দেশে দুর্ভিক্ষ হবে, মানুষ রাস্তায় নামবে।

অথচ সাধারণ মানুষ এখনো বিভক্ত রাজনৈতিক আদর্শিক নানান মতাদর্শে৷ একদল ভাবছে এর আগে কোনো দিন ক্ষমতার এক কাছাকাছি যাওয়া হয়নি সুতরাং এবারের সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করার নয়। আরেক দল ভাবছে, একদল গত ১৭ বছর ক্ষমতায় তারা ছিলেন বঞ্চিত সুতরাং তাদেরই ক্ষমতায় যাওয়া উচিত। মাঝখানে জর্জ সোরেসের পুতুলেরা ছায়ার সহযাত্রী হয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ব্যবসা, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের সবটাই দখলে নিয়ে আসলে ওই দেশটির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আগের সেই সাম্রাজ্যবাদী সেই ঔপনিবেশের মত জাহাজে চড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেভাবে অবিভক্ত ভারতে তাদের দু-শো বছরের সাম্রাজ্যবাদী নখর বসেছিল জর্জ সোরেসের ছায়া সরকার সেই কৌশলের নয়া রূপ।

দুঃখ ও বেদনা ভারের পাথরে জগদ্দল আরেক পাথর এই যে, জর্জ সোরেসেরা কখনোই ভুল করে না তারা তাদের নয়া নকশার ডিজাইনে মূল সৈনিক হিসেবে দাবার গুটিতে এদেশেরই নানান বুদ্ধিবৃত্তিক মুখোশের আড়ালে যাদের একাধিক মুখ তাদেরই দায়িত্ব দিয়েছে। মীর জাফরের বংশধর হয়ে আজকের নয়া প্রজন্মের অনেকেই, অসেক গুণী বোদ্ধা, আপাত ব্যক্তিত্ববান, ক্ষুরধার মেধাবী এবং সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিক আমলা বিচারপতি, লেখক-সাংবাদিকেরা জর্জ সোরেসের বাম হাত হয়ে শক্তি জোগাচ্ছে বহির্শক্তিকে যারা সাময়িক কোন লাভে ডিপ স্টেটের ঘৃণিত ভারবাহী লোহা বইছে!

আজ হয়তো তারা অর্থ, বিত্ত, উন্নত দেশের অভিবাসনের প্রত্যাশায় কিংবা নিছক মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়ছে। তবে হাতের ময়লা অর্থ এক দিন ফুরিয়ে আসবে। মগজ ধোলাইয়ের-ওয়াশে ব্যবহৃত মস্তিষ্কের মরফিনের ডোজের নেশাও টুটে আসবে। তখন কিন্তু বিশাল শূন্যতায়, অপরাধ বোধের আগ্রাসী থাবার নিজের অন্তুপুরের দশা হবে আত্মহননের। কেননা একালের ডিপ স্টেটের কাবুলিওয়ালা সেই তালে কাবুলিওয়ালা নয় যারা মিমুর মত এক ছোট্টো শিশুর মাথায় মানবিকতার ফেরিওয়ালা।

একালের কাবুলিওয়ালা ডিপ স্টেটের মাফিয়ারা দেশীয় দোসরদের ব্যবহার শেষে ছুঁড়ে দেবে ময়লার ডাস্টবিনে। মস্তিষ্কের মরফিনের নেশাটা যদি খানিক টুটেও আসে তবে তো কেল্লা ফতে। তখন আর বনের বাঘের প্রয়োজন হবে না ‘মনের বাঘই’ খেয়ে ফেলবে। বনের বাঘের দরকার হবে না। এমন নজির ইতোমধ্যে বিশ্বের নানা দেশে দেশে ইরান আফগানিস্তান, সিরিয়া, মিশর লিবিয়া, ইরাকে ইরানে, তুরানে এমন নজির ভূরি ভূরি! তাই সময় থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝুন দেশ ও দেশের মানুষের ধ্বংসের কারণ না হয়ে ফিরে চলুন মাটি ও মানবিক জগৎ সংসারে!
ঢাকা ২৬ মে ২০২৫

লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি চ্যানেল আই এবং গবেষক ও লেখক।
[email protected]

এইচআর/জিকেএস

Read Entire Article