ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৩০ জন ইহুদি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। পৃথক ঘটনায় বিভিন্ন সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চারটি ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। বুধবারের (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ইহুদি নাগরিকদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ইরান। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়াও গুপ্তচরবৃত্তির জন্য তাদের বিভিন্ন দেশ থেকে ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করানো হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন বেশ শঙ্কিত। কারণ, চিরশত্রু ইরানের এ প্রচেষ্টা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং নিত্য নতুন কৌশলে তথ্য হাতিয়ে নিতে গুপ্তচরদের তেলআবিবে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেট জানিয়েছে, কথিত গুপ্তচরের সেলগুলো তাদের মিশন সম্পূর্ণ করার আগেই গ্রেপ্তার হয়। মিশনগুলোর মধ্যে ছিল- ইসরায়েলি পরমাণু বিজ্ঞানী এবং প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা, সামরিক ঘাঁটি এবং বিমান প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা। সেলগুলোর পৃথক পৃথক মিশন ছিল। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের পুলিশ বাবা-ছেলের একটি গুপ্তচর দলকে গ্রেপ্তার করে। এরা ইসরায়েলি বাহিনীর কয়েকটি গতিবিধির বিশদ বিবরণ পাচার করেছে।
চারজন কর্মরত এবং প্রাক্তন সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে এবং অর্থের বিনিময়ে হামলা চালানোর জন্য সাধারণ ইসরায়েলিদের নিয়োগ করছে ইরান। গত দুই বছর ধরে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা এ ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিয়মিত গ্রেপ্তারের পরও ইরান তার কৌশল থেকে সরে আসছে না।
ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলছেন, সম্প্রতি ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির বহু অভিযোগ আসছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আটক হচ্ছেন অনেকে। যুদ্ধবাজ কোনো দেশের জন্য বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ইরানি এসব গুপ্তচর ইসরায়েলের নাগরিক।
অক্টোবরের শেষ দিকে ইসরায়েলের নাগরিক হয়েও ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এক দম্পতিকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া দুজন রাফায়েল ও লালা গুলিয়েভও ইসরায়েলি। তারা উভয়ই ৩২ বছর বয়সী। এদের একজন হত্যাকারী খোঁজার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। এ ছাড়া দেশের নিরাপত্তা ও জাতীয় অবকাঠামোর তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তারা। সে সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা থিংক ট্যাংকখ্যাত এক একাডেমিকের অনুসরণ করছিলেন অভিযুক্তরা। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বিশেষজ্ঞের ক্ষতি করার জন্যই এমনটি করা হচ্ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত দম্পতি জানিয়েছেন, আজারবাইজানীয় বংশোদ্ভূত একজন ইসরায়েলি তাদের নিয়োগ করেছেন। ইরানের পক্ষে কাজ করতে ইসরায়েলিদের নিয়োগের একটি বিশেষ দল এর সঙ্গে জড়িত। তারা মূলত অভিবাসীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এ ধরনের কাজে যুক্ত করার চেষ্টারত।
তবে এসব অভিযানের তথ্য প্রকাশ নিয়েও ইসরায়েল লুকোচুরি করে। বিশেষ করে, গ্রেপ্তারের খবর তাৎক্ষণিক প্রকাশ না করে আটক রেখে দীর্ঘদিন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে ইসরায়েলি বাহিনী একতরফা অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রচার করছে। শিনবেট বলছে, সামরিক ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক কিছু গোপন রাখতে হচ্ছে। তারা এ ধরনের আতঙ্ক এড়াতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াচ্ছে।