‘ইয়াকুব ভাইয়ের পেটে গুলি ঢুকে ভুঁড়ি বের হয়ে যায়’

17 hours ago 7

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন দুজন প্রত্যক্ষদর্শী। তাদের একজন নিউ মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী মো. টিপু সুলতান। অন্যজন মো. মনিরুজ্জামান, যিনি নৌবাহিনীর মালামাল সরবরাহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দুই সাক্ষীই তাঁদের জবানবন্দিতে গত বছরের ৫ আগস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশি হামলার বর্ণনা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে ওই দুজন সাক্ষ্য দেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

পরে দুই সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিন ঠিক করেছেন আদালত। এখন পর্যন্ত মামলায় ১৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।

সাক্ষী টিপু সুলতান ট্রাইব্যুনালকে জানান, ঘটনার দিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সমর্থনে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে চানখাঁরপুল এলাকার বোরহানউদ্দিন কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন টিপু সুলতান। সেখানে তখন সমন্বয়ক (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও ছিলেন জানিয়ে টিপু বলেন, ‘আমরা সামনে এগিয়ে বোরহানউদ্দিন কলেজের গেটের সামনে পৌঁছালে পুলিশ চাঁনখারপুল মোড় থেকে আমাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি করে। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।’

সাক্ষী টিপু বলেন, ‘পরে জানতে পারি নাজিম উদ্দিন রোডে সোহাগ হোটেলের সামনে এলাকার বড় ভাই ইয়াকুব (মো. ইয়াকুব) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’ টিপু বলেন, ‘আমি সেখানে (সোহাগ হোটেলের সামনে) গিয়ে দেখি ইয়াকুব ভাইয়ের পেট দিয়ে গুলি ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। তার ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। জাহিদ নামের একজন তাঁর টি-শার্ট খুলে ইয়াকুবের গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থান বেঁধে দেন। পরে এক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ ইয়াকুবকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। শুনেছি, সেখানকার (মিটফোর্ড হাসপাতালে) কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাঁকে (ইয়াকুব) মৃত ঘোষণা করেন।’

এ ছাড়া ইসমামুল নামের একজন আন্দোলনকারীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে সাক্ষ্যে টিপু সুলতান বলেন, ‘আমরা বোরহানউদ্দিন কলেজের কাছাকাছি অবস্থান করতে থাকি। পুলিশ গুলি করতে করতে বোরহানউদ্দিন কলেজের গেট পর্যন্ত চলে আসে। পুলিশ আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে সেই গুলিটি আমার পাশে থাকা আন্দোলনকারী ইসমামুলের পেটে লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়।’ ইসমামুলকেও মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে সাক্ষী ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘পরে জানতে পারি, সে (ইসমামুল) তিন দিন পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।’ সাক্ষী টিপু সুলতানি এই হত্যাকাণ্ডেরর বিচার চান ট্রাইব্যুনালের কাছে।

৫ আগস্ট শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখেছেন সাক্ষী মো. মনিরুজ্জামান। সেদিন তাঁর ছেলে তৌফাউজ্জামানও চাঁনখারপুলের খলিফা পট্টি এলাকায় আন্দোলনে ছিলেন। ছেলেকে খুঁজতে বের হয়ে বেলা ১২টা- থেকে সাড়ে ১২টার দিকে মনিরুজ্জামানও আন্দোলনে যোগ দেন।

মনিরুজ্জামান তার সাক্ষ্যে বলেন, ‘আমরা চানখাঁরপুলের দিকে এগুচ্ছিলাম। তখন পুলিশ গুলি করতে করতে আমাদের দিকে আসে। পুলিশের গুলিতে আমার সামনে থাকা জুনায়েদ নামে একজন আন্দোলনকারী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। ৩-৪ জন আন্দোলনকারী জুনায়েদকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিন বিকেলের দিকে জানতে পারি, গুলিবিদ্ধ জুনায়েদ মারা গেছে।’ সেদিন চাঁনখারপুল এলাকায় ৫-৬ জন আন্দোলনকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হন জানিয়ে সাক্ষী মনিরুজ্জামান এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার চান ট্রাইব্যুনালের কাছে।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিসা সরকারের পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস। একটি বুলেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় তার বাঁ পাশের বুক। সেদিন প্রায় একই সময়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় আরও পাঁচজনের। তারা হলেন শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।

এফএইচ/এমএমকে/এমএস

Read Entire Article