ঈদের দিন বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরেই সেমাইয়ের আয়োজন থাকে। বিশেষ এই দিনে নামাজে যাওয়ার আগে পুরুষদের সেমাই দিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এমনকি বাসায় অতিথি আসলেও তাদের অ্যাপায়নে দেওয়া হয় সেমাই। তবে এই সেমাই রান্নার রীতি কবে থেকে শুরু হয়েছে তা অনেকেরই অজানা।
ভাষাবিজ্ঞানী ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ‘সেমাই’ শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্দেশ করতে গিয়ে জানিয়েছেন, গ্রিক সেমিদালিস শব্দ থেকে সেমাই শব্দের উৎপত্তি। সেমাই আফগানিস্তানে সেমিয়া, পাকিস্তানে সেঁওয়াই নামে পরিচিত। ইরানেও সেমাইয়ের চল আছে।
ধারণা করা হয়, ঐ সব দেশ থেকেই একসময় সেমাই এ দেশে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে তা বাঙালি মুসলিম সমাজের অন্যতম প্রধান এক খাদ্য-ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তবে সেমাই শব্দ হিসেবে গ্রিক হলেও খাদ্য হিসেবে গ্রিক নয়।
আরও পড়ুন:
জানা যায়, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বেশ কিছু খাবারের নাম পাওয়া যায়। কিন্তু সেমাইয়ের কথা কোথাও নেই। এছাড়া গ্রিকরা সেমাইয়ের মতো দেখতে একটি খাবার খেত যা উপমহাদেশের সেমাই থেকে অনেকটাই আলাদা। ইতিহাসবিদদের মতে, উনিশ শতকের শেষের দিক থেকেই ঈদে ঘরে ঘরে সেমাই তৈরির সংস্কৃতি গড়ে উঠে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ত্রিশ-চল্লিশের দশক থেকে সেমাইয়ের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। যার মধ্যে কিছু সেমাই হাতে তৈরি হয় আবার কিছু তৈরি হতে থাকে বাণিজ্যিকভাবে। বর্তমানে যেই সেমাই দেখা যায় সেটির প্রচলন শুরু হয়েছে পঞ্চাশের দশক থেকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সেমাইয়ের গ্রহণযোগ্যতা জনপ্রিয়তা পেয়েছে দামে অপেক্ষাকৃত সস্তা ও দ্রুত তৈরি করা যায় এর কারণে।
ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বলেন, সেমাইয়ের ইতিহাস তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার একে বহিরাগত খাবারও বলা যাবে না। কারণ ভারতীয় উপমহাদেশের পিঠা-পুলি বানানোর পদ্ধতিই পরিবর্তিত হয়ে আস্তে আস্তে আজকের সেমাইয়ের রূপ নিয়েছে।
জেএস/এমএস