গায়ে নেই কারাগারের পোশাক। কেউ পাঞ্জাবি, কেউ ফতুয়া বা টিশার্ট করে কারাগারের উন্মুক্ত মাঠে হাজির ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য। কেউ কেউ পরেছেন নতুন পোশাকও। স্বাভাবিক পরিবেশের মতোই কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সবাই মিলে আদায় করলেন ঈদের সালাত।
সোমবার (৩১ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সারাদেশে মোট ৬৮টি কারাগারে আনন্দঘন পরিবেশে আসামিরা ঈদ উদযাপন করেছে।
কারাগারে ঈদের সালাত শেষে সবাইকে বিশেষ মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়া আসামিদের বিনোদনের জন্য প্রত্যেক কারাগারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নারী-পুরুষ কয়েদীদের জন্য আলাদা খেলাধুলার আয়োজন করে কারা অধিদপ্তর।
আসামিদের ঈদের দিন সকালের নাস্তায় পায়েস ও মুড়ি দেয়া হয়। দুপুরে পোলাও, গরুর বা খাসির মাংস, মুরগীর রোস্ট, ডিম, কোল্ডড্রিংক্স, চমচম, পান-সুপারি ও সালাদ দেওয়া হয়। এছাড়া রাতে ভাত, মাছ ও আলুর দম দেওয়া হয়। এতে সব বন্দি ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যামে অংশগ্রহণ ও উপভোগ করে। সাধারণ বন্দীদের মতো গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও জন্য একই বিশেষ খাবার দেওয়া হয়।
কারা অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারাগারগুলোতে বিভিন্ন প্রকার উপহার সামগ্রী যেমন-ফুল, চকলেট, বাতাসা, কদমা, মিষ্টি, ফিন্নি, বেলুন ইত্যাদি দিয়ে আগত বন্দিদের আত্মীয়-স্বজন ও দর্শনার্থীদের অভ্যার্থনা জানানো হয়। বাংলাদেশের জেলের এ ধরনের সৌহার্দপূর্ণ আচরণ আগত দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
কারা অধিদপ্তর জানায়, পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে আগামী তিন দিন সব শ্রেণির বন্দিদের একবার বিশেষ সাক্ষাত ও টেলিফোনে নির্ধারিত নম্বরে কথা বলার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তিনদিনে একবার বাহিরের খাবার গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশ জেলকে সবার মাঝে নতুনভাবে উপস্থাপন করছে।
তবে ঈদের সালাতের ক্ষেত্রে সাধারণ কয়েদীদের সঙ্গে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মী ও আমলাদের নামাজের জায়গা ভিন্ন বলে জানিয়ে কারা অধিদপ্তর। কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন, নিরাপত্তার জন্য ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দীদের আলাদা সেলে রাখা হয়। ঈদে প্রত্যেক কারাগারে এসব ভিআইপি বন্দীদের একসঙ্গে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সাধারণ কয়েদীদের সঙ্গে নয়। কারাগারে খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৭২৩ জন। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ৮ হাজার ১০০।এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৫ আগস্টের পর এ পর্যন্ত সাবেক মন্ত্রী, এমপি, শীর্ষস্থানীয় নেতা ও আমলাদের মধ্যে ১৩১ জন কারাগারে আছেন। তাদের মধ্যে ডিভিশন পেয়েছেন ১০৮ জন। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ২৯ জন, সাবেক সংসদ সদস্য ২২ জন, সরকারি কর্মকর্তা ৪৪ জন এবং অন্যান্য পেশার ১৩ জন। তবে এখনো ২৩ জন ভিআইপি আসামি ডিভিশন পাননি।