উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

7 hours ago 1

কাম্পালায় পৌঁছানোর অভিজ্ঞতা আমার জীবনের ভ্রমণকাহিনিগুলোর ভেতর এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। আমরা যখন উগান্ডার রাজধানী শহর কাম্পালায় এসে পৌঁছলাম; তখন রাত গভীর হয়ে গেছে। রাতের অন্ধকারে শহরটিকে পুরোপুরি দেখা সম্ভব হয়নি। তবে সকালের আলো ফোঁটার সাথে সাথে ঘুম ভাঙতেই নতুন এক পৃথিবীর সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ এলো। পাহাড়ঘেরা শহর কাম্পালা, যার চারপাশে প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধতা আর প্রাণবন্ত জীবনের ছোঁয়া মিশে আছে। আমাদের মনকে প্রথম সকালেই মুগ্ধ করলো।

সকালে হালকা ঘোরাঘুরির পর আমাদের আতিথেয়তার দায়িত্ব নিলেন এখানকার একজন বিশেষ মানুষ মাসুদ আহমেদ ভাই। তিনি ব্র্যাকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি ফিল্ড অপারেশন্স ম্যানেজার হিসেবে এখানে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রায় তিন-চার বছর ধরে তিনি উগান্ডায় অবস্থান করছেন। অভিজ্ঞতার আলোকে এখানকার প্রকৃতি ও সমাজকে তিনি ভীষণ ভালোভাবে চিনে নিয়েছেন। আমরা তার অতিথি হয়ে পড়লাম। তিনি যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় আমাদের আপ্যায়ন করলেন, তা আমাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে গেল।

মাসুদ ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন ভিক্টোরিয়া লেকের তীরে। আফ্রিকার বুকে বিস্তৃত এই মহৎ হ্রদটির নাম আমরা বহুবার বইতে পড়েছি, ছবিতে দেখেছি। কিন্তু সশরীরে এসে দাঁড়ানোর অনুভূতি একেবারেই ভিন্ন। জলের বিস্তীর্ণতায় দৃষ্টি হারিয়ে যায়, মনে হয় যেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অনন্ত নীলের ছায়া ছড়িয়ে আছে। লেকের তীরে বসে আমরা অনুভব করছিলাম প্রকৃতির বিশালত্ব আর সেইসাথে মানুষের ক্ষুদ্রতা।

উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

আমার ছোট্ট একটি স্বপ্ন ছিল, ভিক্টোরিয়া লেকের পাশে বসে একদিন লাঞ্চ কিংবা ডিনার করবো এবং সেখানে বসে প্রিয় বন্ধু মহসিন ইমরানকে ফোন দেবো। সেই স্বপ্ন যেন অকস্মাৎ পূর্ণ হয়ে গেল। মাসুদ ভাই নিজ উদ্যোগে আমাদের জন্য চমৎকার এক লাঞ্চের ব্যবস্থা করলেন। ভিক্টোরিয়া লেকের তাজা নাইলোটিকা (এক ধরনের মাছ) দিয়ে প্রস্তুত করা খাবার সাজানো হলো আমাদের সামনে। প্রকৃতির বুক থেকে উঠে আসা সেই মাছের স্বাদ ছিল অপূর্ব। মাছের প্রতিটি টুকরোয় লেকের সতেজতা আর উগান্ডার স্বাদ মিশে গিয়েছিল। সত্যিই অসাধারণ লাগছিল সেই মুহূর্তগুলো।

এরপর এলো তেলাপিয়া মাছের প্রসঙ্গ। ভিক্টোরিয়া লেকের তেলাপিয়া মাছ পৃথিবীর নানা জায়গায় বিশেষভাবে পরিচিত। স্থানীয়রা গর্ব করে বলেন, এখানে পাওয়া তেলাপিয়ার স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আমরা সেই স্বাদ সরাসরি উপভোগ করার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। নিখুঁতভাবে রান্না করা মাছটি ছিল অতুলনীয়, নরম, সুগন্ধময় এবং একেবারে প্রাকৃতিক স্বাদে ভরা। খাবারের টেবিলে বসেই মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্ত হয়তো জীবনের অন্যতম সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

কাম্পালা শহরের আরেকটি বিশেষ দিক আমাদের মুগ্ধ করেছিল। শহরটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। এই পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির জন্য এখানে এক অদ্ভুত আবহাওয়া বিরাজ করে, না খুব গরম, না খুব ঠান্ডা। দিনের বেলায় রোদ থাকে, তবে সেই রোদ কখনোই কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে না। রাতের বেলা শীতল হাওয়া বইতে থাকে, যা ক্লান্তি মুছে দেয়। এই আবহাওয়াই হয়তো শহরটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।

উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

প্রকৃতির সৌন্দর্য, স্থানীয় খাবারের স্বাদ আর মানুষের আন্তরিক আতিথেয়তা, সবকিছু মিলিয়ে কাম্পালায় কাটানো প্রথম দিনটিই আমাদের হৃদয়ে বিশেষভাবে গেঁথে গেল। দুপুরের লাঞ্চ থেকে রাতের ডিনার, পাহাড়ি বাতাস থেকে লেকের নীরবতা, সবকিছু যেন একসাথে মিলেমিশে জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করলো।

উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

সেই দিনটির কথা ভেবে এখনো মনে হয়, পৃথিবী আসলে এক বিশাল বিস্ময়ের ভান্ডার। যেখানে আমরা যাই; সেখানেই নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাম্পালার এই সফর আমাদের জন্য ছিল সেই সম্ভাবনার সার্থক উপলব্ধি। যেখানে স্বপ্ন পূর্ণ হলো, মন ভরলো আর আত্মা ছুঁয়ে গেল প্রকৃতি ও মানবিকতার মিশ্র সৌন্দর্যে।

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article