পশুপাখি যেন কৃষকের উৎপাদিত ফসল নষ্ট করতে না পারে এজন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘অটোমেটিক ফ্রুটস অ্যান্ড ক্রপস প্রটেক্ট সিস্টেম’ প্রকল্প, সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে রয়েছে ‘স্ট্যান্ড স্লাইডার’ প্রকল্প, ওয়াই-ফাইয়ের বিকল্প দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা হিসেবে ‘লাইফাই’ প্রকল্প। এছাড়া ডিজিটাল রেলওয়ে স্টেশন ও রোড প্রকল্পসহ নানা আধুনিক প্রযুক্তির পসরা বসিয়েছেন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
পাবনার ঈশ্বরদীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘লাগসই প্রযুক্তির প্রয়োগ প্রদর্শনী’ মেলায় শিক্ষার্থীরা এসব উদ্ভাবন প্রদর্শন করেন।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) জেলা ডাকবাংলো চত্বরে দুদিনব্যাপী মেলাটি শুরু হয়। এসময় উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ১২টি স্টলে নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রদর্শন করে।
উপজেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআই) তত্ত্বাবধানে প্রদর্শনীতে নিজেদের উদ্ভাবন দেখাতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে এসব ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সূবীর কুমার দাশের সভাপতিত্বে মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব প্রশান্ত কুমার দাশ। এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিসিএসআইআইয়ের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান।
এছাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদাৎ হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, লিচু ও খেজুরের রস যেন বাদুড় বা পশুপাখিরা নষ্ট করতে না পারে এজন্য নিরাপত্তা পদ্ধতির উদ্ভাবন তুলে ধরেছেন ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাইয়ান আজাদ অঙ্কুর। সে জানায়, সম্প্রতি খেজুরের রসে বাদুড়ের লালার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নিপাহ ভাইরাসে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা তার মনে দাগ কেটেছে। এজন্য নিপাহ ভাইরাস রোধ ও কৃষকের উৎপাদিত ফসল বিশেষ করে লিচুর কথা মাথায় রেখে সেগুলো পশুপাখি ও বাদুড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্ভাবন করেছে অটোমেটিক ফ্রুটস অ্যান্ড ক্রপস প্রটেক্ট সিস্টেম প্রকল্প। এর মাধ্যমে ফল ও ফসল নষ্ট করতে আসা পশুপাখি এবং বাদুড়কে গাছ থেকে ১০ মিটার উঁচুতে এক ধরনের শব্দ সৃষ্টি করে তাদের গাছে না বসে ফিরে যেতে বাধ্য করবে। ফলে আবাদকৃত ফল ও ফসলগুলো নষ্ট হবেনা।
এদিকে মেট্রোরেলের কার্ড সিস্টেম টোল পেমেন্ট দেখে উৎসাহিত হয়ে আধুনিক রোড প্রকল্প নামে একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে সরকারি সাঁড়া মাড়োয়ারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সানিম মুহতাদি। তার এই প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে কার্ড বা ডিজিটালি যেকোনো টোল প্রদান করা যাবে। এতে সড়কে চলাচল করা অবৈধ যানবাহন ও নগদে টোল প্রদানে তীব্র যানজট দুটোই কমে যাবে।
ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের এসব উদ্ভাবনী প্রযুক্তির পসরা করা স্টলগুলো পরিদর্শন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব প্রশান্ত কুমার দাশ বলেন, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা স্থানীয় পর্যায়ে যেসব প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে সেগুলোর ব্যবহার, প্রয়োগ ও সম্প্রসারিত করতে ছড়িয়ে দিতে চাই। যেন সাধারণ মানুষ এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারেন। এটি কোনো প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচি না, নতুন নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোর প্রচার ও প্রসার ঘটাতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
শেখ মহসীন/এফএ/এএসএম