বর্ষার দিন ফুরিয়ে প্রকৃতিতে এখন নীলাকাশ আর কাশফুলের শুভ্রতা। পঞ্জিকার পাতায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসবের ধ্বনি। দেবী দুর্গাকে বরণে ব্যস্ত শেরপুরের পাল পাড়ার প্রতিমা শিল্পীরা। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পরম যত্নে প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পীরা। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। সময় ঘনিয়ে আসায় শিল্পীদের ব্যস্ততাও বেড়েছে।
শেরপুরের পালপাড়া ঘুরে দেখা যায়, খড়, বাঁশ, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে কারিগররা তৈরি করছেন প্রতিমা। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। কিছু কিছু মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে শুরু হয়েছে রঙের কাজ। তবে বৃষ্টি থাকায় সবগুলো প্রতিমা এখনও শুকানো হয়নি।
দীর্ঘ তিন দশক ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন শেরপুর সদর উপজেলার বয়রা পরাণপুরের পালপাড়ার পলাশ চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, আগে যেভাবে মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতো, সেই চাহিদা না থাকায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালে প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালানো যায়। গত কয়েকবছর বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না।
একই কথা জানান পালপাড়ার জগদীশ চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, বাপু এখন আর আগের মতো লাভ থাকে না। মাটির দাম, কাঠের দাম, বাঁশের দাম এখন দ্বিগুণ। কিন্তু আমাদের দাম বাড়েনি। তাই খুব একটা লাভ টিকে না।
আক্ষেপ করে হিরেন চন্দ্র পাল বলেন, এখন লাভ না টিকলেও বাপদাদার পেশা, তাই ধরে রেখেছি। গত বছর ৪২ কাজ নিয়েছিলাম। আর এবার ১৮টি কাজ রেখেছি। যদি সরকার আমাদেরকে আর্থিকভাবে কিছুটা সহযোগিতা করতো, তাহলে এই পেশাটা পরবর্তী প্রজন্মও ধরে রাখতে পারতো।
- আরও পড়ুন-
- শরীয়তপুরে নজর কেড়েছে ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা
- ধানের পর সেই পূজামণ্ডপে এবার পাটের তৈরি দুর্গা প্রতিমা
- দুর্গাপূজায় প্রথম চালানে ভারতে গেলো সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ
৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন সন্ধ্যা রাণী পাল। ৬৮ বছরের সন্ধ্যা রাণী পাল বলেন, লাভ না থাকায় নাতনিরা এখন অন্য কাজ শিখছে। আবার অনেকেই পড়াশোনা করে ঢাকায় চলে গেছে। আগে আমরা যে ধুমধামে কাজ করতাম, এখন আর সেই আনন্দ নেই। পেশা বদলিয়ে অন্যকাজে ঝুঁকছে ছেলে-মেয়েরা। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমাদের উপকার হতো।
গবীন্দ্র চন্দ্র পাল বলেন, এখন সবকিছুর দাম চড়া। কারিগরকেও আগের চেয়ে বেশি টাকা দিতে হয়। এর ওপর কারিগর সংকট। একটা কাজ করে কোনোমতে ১০ হাজার টাকা থাকে। এবার প্রতিমা ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট শেরপুর শহরের আহ্বায়ক শ্রী প্রবাল সূত্রধর জাগো নিউজকে বলেন, এবার শেরপুর সদরে ৮১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ভক্তদের জন্য নানা কারুকাজে বিরাট গেট তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। সবার সহযোগিতায় এবারের দুর্গোৎসব আনন্দমুখর হবে। ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া ও ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু হবে। ২ অক্টোবর মহা বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট শেরপুর জেলার আহ্বায়ক শ্রী জিতেন চন্দ্র মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, এবার জেলার পাঁচ উপজেলায় সবমিলিয়ে ১৭২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। আমাদের কমিটির সদস্যরা মণ্ডপগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের দারুণভাবে সহযোগিতা করছে।
জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই দুর্গোৎসব ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে পুরো জেলা। নির্বিঘ্নে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা সম্পন্ন করতে পূজা মণ্ডপে থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। এরইমধ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এফএ/এএসএম