উপদেষ্টা হওয়ার মতো দুইটা জিনিস আমার নাই: হিরো আলম

5 days ago 13

আওয়ামী লীগ শাসনামলে চারবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। সম্প্রতি রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রাজনীতি, উপদেষ্টা হওয়ার জন্য ফোন কলের গুঞ্জনসহ নানা ইস্যুতে নতুন করে আলোচনায় তিনি। তার কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে তার বক্তব্য। সাক্ষাৎকারে পুরোপুরি তার বাচনভঙ্গি রাখা হয়নি।

আপনাকে উপদেষ্টা হিসেবে দেখতে চান কারা? কারা ফোন করছেন আপনাকে? ঘটনাটি কি সত্য?

হিরো আলম: বিভিন্ন জেলা থেকে ফোন করে আমাকে উপদেষ্টা হতে বলছে। বিশ্বাস না হলে কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে থাকেন, দেখতে পারবেন। আমি তাদের বলেছি, আমি উপদেষ্ট হতে চাই না। উপদেষ্টা হওয়ার মতো দুইটা জিনিস আমার নাই। এক, আমার লেখাপড়া নাই। দুই, আমি দেখতে সুন্দর না। এই দুই সাইড আমার খারাপ, তার জন্য উপদেষ্টা হতে পারবো না।

তারা কেন আপনাকে ফোন করছেন?

হিরো আলম: তারা জানে, যে কোনো অন্যায় দেখলে হিরো আলম প্রতিবাদ করে। মানুষের বিপদে আমি পাশে দাঁড়াই। এই কারণে হতে পার। আমি চারবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। দুবার তো আমি জিতেও গিয়েছি। কিন্তু আমার কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। হিরো আলমের জনপ্রিয়তা না থাকলে মানুষ তাকে ভালোবাসতো না। একশ্রেণির মানুষ আমকে পছন্দ করে না। একজন মানুষকে সবশ্রেণির লোক ভালোবাসবে, সেইটা তো হবেও না।

 হিরো আলম

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আপনার মত কী?

হিরো আলম: আসলে আমরা যতটা মনে করেছিলাম, ততটা পাইনি। আমরা মনে করেছিলাম আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নাই, এমন একটা সরকারের হাতে দেশটা তুলে দিই, যারা দেশটা পরির্বতন করবে। কিন্তু এই সরকার আসার পর কোনো পরিবর্তন আসেনি। সামান্য খাদ্যদ্রব্যের দাম কমাতে পারেনি তারা। মানুষের কর্মের ব্যবস্থা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি বলেন, কোনো কিছুর পরিবর্তন পাইনি। এই সরকার আসার পর থেকে কাকে উপদেষ্টা বানাবে, কাকে কোন চেয়ারে বসাবে এসব নিয়েই ব্যস্ত। তিন মাসে তারা দেশের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করেছে? প্রতিটা লোক কীভাবে গদিটা বাঁচাবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত।

তিন মাসে কি দৃশ্যমান কোনো পরির্বতন আনা সম্ভব?

হিরো আলম: তিন মাসে অন্তত একটা পরিবর্তন তো পাবো? ধরেন, খাদ্যের দাম নিয়ে তো একটা ব্যবস্থা নিতে পারতো। এটার তো কোনো পরিবর্তন পেলাম না। একটা জিনিসেও পরিবর্তন পেলাম না।

আপনি বললেন আপনার দুটি জায়গায় ঘাটতি আছে। ঘাটতি না থাকলে কী দায়িত্ব নিতেন?

হিরো আলম: আমি রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিয়েছি। রাজনীতি আর করবো না। উপদেষ্টা হওয়ারও চিন্তা করিনি। আন্দোলন করে যারা দেশ চালাচ্ছে, তারা কিন্তু ছাত্র ছিল। দেশ চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা নাই তাদের। আগে কোন সমস্যার সমাধান করা জরুরি সেটা বের করা দরকার। আগেরটা আগে করতে হবে। নেতারাও ভোটের আগে বলে, এই করবে সেই করবে, ভোটের পরে করে না।

 হিরো আলম

আওয়ামী লীগের সময় মার খেলেন। দেশ যখন ভালো সময়ের দিকে যাচ্ছে, তখন রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিলেন কেন?

হিরো আলম: অংক করে দেখেছি, ফলাফল জিরো। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, বিএনপির সবাইকে পিটিয়ে, হত্যা করে, লুটেপুটে খেল। আবার যখন ক্ষমতা থেকে চলে গেল, অনেকে জেলে। তাদের লুট করা সম্পদ আবার বিএনপির লোকজন নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সময় চারবার নির্বাচন করে দুইবার পাশ করি। আমাকে তারা ক্ষমতা দেয়নি। সুশীল সমাজ বলেন – হিরো আলম রাজনীতিতে বেমানান। হিরো আলমের রাজনীতি করার যোগ্যতা নাই। তাহলে আমি কেন রাজনীতি করবো? আমি রাজনীতি করেছি জনগণের জন্য। যে দেশে জনগণের সামনে আমাকে পেটানো হয়, কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। তাদের জন্য কেন আমি রাজনীতি করবো? যে দেশে জনগণ আমাকে নিরাপত্তা দেয় না, আমি কীভাবে তাদের নিরাপত্তা দেবো? এই জনগণের জন্য কেন আমি কাজ করবো?

মার তো অনেকেই খায়। নেতাকর্মীরা ঠেকায়।

আপনি এমপি হতে পারবেন। দুইটা পথ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষতায় থাকলে নৌকা মার্কায় দাঁড়ান অথবা বিএনপির সময় ধানের শীষ মার্কায় দাঁড়ান, তাহলে পাশ করবেন। এ ছাড়া রাজনীতির কোনো সফলতা দেখি না। সবকিছু ভেবে দেখলাম, দেশের জনগনের জন্য কাজ করতে গিয়ে কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি আমাকে। আমি কেন নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবো? আমি মারা গেলে আমার পরিবার কে দেখবে? কেউ দেখবে না। আমার মা না খেয়ে কষ্ট করে মারা যাবে। আর জনগণের জন্য কাজ করবো না, এখন আমি আমার নিজের জন্য কাজ করতে চাই।

আপনার সঙ্গে কি বিদেশ থেকে কেউ যোগাযোগ করেছিল, বা আপনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন?

হিরো আলম: আমি কোনো দেশের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। আমার সঙ্গেও কেউ যোগাযোগ করেনি। আমি হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে আমার সঙ্গে বিদেশি কয়েকজন সাংবাদিক কথা বলেছেন। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

 হিরো আলম

আপনার কী কোনো উপদেষ্টাকে নিয়ে বিশেষ কোনো আপত্তি আছে?

হিরো আলম: ফারুকী ভাইকে আপনারা কোনো আন্দোলনে দেখেছেন? তিনি আওয়ামী লীগের সময় ফেসবুকে তেলমারা পোস্ট করেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় দুই একদিন পোস্ট দিয়েছেন। ফেসসুকে পোস্ট দিয়ে কোনো মায়ের বুক খালি হওয়া ঠেকাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু সিনেমায় অভিনয় করার কারণে আরিফিন শুভ ভাইয়ের মতো লোকের প্লট কেড়ে নেওয়া হল, তাকে ফেসবুকে লাঞ্ছিত করা হলো। তিশা আপাও বঙ্গবুন্ধ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার ঘর থেকে কীভাবে উপদেষ্টা হয়। ফারুকী ভাই জনগণের জন্য কোনো কাজ করেছেন? তাকে কেন উপদেষ্টা করা হলো, এটা আমারও প্রশ্ন। আমার মনে হয় জনগণেরও একই প্রশ্ন। তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। আন্দোলন ছিল এক মাস। এতদিন দেশের বাইরে কেন ছিলেন তিনি? তার পরিবারের কেউ তো আন্দোলনে ছিল না। আপনি ‍যদি দেশে জন্য কিছু করতে চান, তাহলে মাঠে থাকতে হবে। জনগণ জানে, কে কী করেছে, জনগণ বিচার করবে।

এই মুহূর্তে আপনি কী চান, সংস্কার নাকি নির্বাচন?

হিরো আলম: জরুরিভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচন দেওয়া দরকার। বেশ কয়েকটা কারণে এইটা করা দরকার। একটা কারণ, দেশে আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা খুব বাজে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ক্ষমতা নাই। তারা কলাগাছের মতো হয়ে আছে। কোনো আসামি ধরতে বললে তারা বলছেন, আমরা এখন কোনো আসামি ধরতে গেলে দশবার চিন্তা করি, আমাদের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয়। আর যে ছাত্ররা দেশ চালাচ্ছে, তারা কী বোঝে? এদের হাতে পাঁচ বছর ক্ষমতা থাকলে কী হবে? দেশ ভালো চলবে? না, দেশ ভালো চলবে না। যারা ক্ষমতায় আছে, দেশ চালাচ্ছে, তারা কখনো দেশ নিয়ে ভাবেনি। এরা দেশ কীভাবে চালাবে? দেশ চালাতে হলে নির্বাচন দরকার, কঠোর আইন দরকার।

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে তো দেশ আগের অবস্থায় চলে যাবে।

দেখেন আওয়ামী লীগ মানুষের চোখ খুলে দিয়ে গেছে। কীভাবে ভুয়া নির্বাচন করতে হয় দেখিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যেদিন ক্ষমতা থেকে সরে গেছে, তার পরদিন থেকে বিএনপির লোকজন তাদের সবকিছু দখল করে নিচ্ছে। লুটপাট করছে। আবার অনেকে বলছে, ক্ষমতায় আসি, তারপর দেখে নেব। তো আওয়ামী লীগ যে রকম করেছে, বিএনপির লোকজনও সেরকম করছে। পরিবর্তন হবে না। পরিবর্তন আনতে গেলে সবকটা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এককভাবে কাউকে ২০০ আসন দেওয়া যাবে না। প্রতিটা দল থেকে ১০ অথবা ২০ সিট থাকতে হবে। সবাইকে কথা বলতে দিতে হবে। আর একটা নিয়ম করতে হবে, পর পর কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এ রকম পরবির্তন করতে পারলে দেশ বদলাবে।

 হিরো আলম

আপনার কাজের কী খবর?

হিরো আলম: আমি এখন কাজ নিয়েই আছি। নিজের কাজে বেশি সময় দিচ্ছি। আমার আগের কাজ যদি দেখেন, দেখবেন আগের আর এখনকার কাজে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আমি আস্তে আস্তে পরির্বতনের চেষ্টা করছি। দেখেন আমাকে নিয়ে যদি কোনো প্রযোজক সিনেমা তৈরি করতো, তাহলে আরও ভালো কিছু হতো। যেহেতু আমার নিজের টাকা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, তাই সময় লাগছে।

আপনি শিল্পের সবগুলো শাখায় কাজ করার চেষ্টা করেন। মানুষ উপহাস করে। খারাপ লাগে না?

হিরো আলম: আমার জীবন শুরু হয়েছে নেগেটিভ দিয়ে। আমি কষ্ট করে সেটা পজিটিভে নিয়ে এসেছি। আমাকে তো সব লোক পছন্দ করবে না। আমি তো সবাইকে পছন্দ করি না। যে যা বলছে বলুক, তাতে কী আসে যায়। আবার অনেকে তো সাহস দেয়, কাজ হচ্ছে, করে যাও। তাই আমারটা আমি করে যাই। শেষে কাজটা তো থেকে যাবে।

এমআই/আরএমডি/এএসএম

Read Entire Article